সম্মান দিয়ে সম্মান কেড়ে নেয়াটা সভ্যতার মাপকাঠিতে বেমানান । আবার সম্মান অর্জনের চাইতে সম্মান ধরে রাখাটাও কষ্টকর । যাকে নিয়ে লিখব ভাবছি তিনি উচ্চতায় অনেক উপরে । এক্ষেত্রে যে উপমাটি যথার্থ বলে মনে করছি তা হচ্ছে হাতি বসলেও ঘোড়ার উপরে ।
আমার দুঃসাহস যাঁকে নিয়ে তিনি এখনও আমার আপনার সম্মান পাওয়ার দাবি রাখেন । মুরব্বীসম কোন ব্যাক্তি বয়সের ভারে অথবা ক্ষোভের রোশে প্রমোদ গুনলেও সম্মান শ্রদ্ধার দাবি রাখে পরিবার ও সমাজে ।
যাহোক, যাঁকে নিয়ে বলছি ওনাকে নিয়ে সমালোচনা আমার কাছে কল্পণাতীত বিষয় ছিল । কিন্তু প্রচন্ড কষ্টে আবেগ ও দুঃখবোধ লাঘবের কৌশল হিসেবে কম্পিউটারের কিবোর্ডে অক্ষরের পর অক্ষর বসিয়ে সময়ের সাথে দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করছি মাত্র ।
কে কিভাবে নিবেন জানি না । আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারছি না । তারপরও লিখছি, এটা আমার কাছে কঠিন বাস্তবতা । কারন ব্যাক্তিটা বিশাল গৌরবের অংশীদার জাতির অহংকার মুক্তিযুদ্ধের সফল কিংবদন্তী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ।
৭১ এ সশস্র মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজী রেখে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের স্বাধীন ভূখন্ড ও রক্ত খচিত লাল সবুজের পতাকা দিয়েছেন, উনি তাদের মধ্যে উজ্জ্বল । মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে আমার বয়স ছিল এক বৎসর ছয় মাসের মত । শিশু বয়সের মুক্তিযুদ্ধ কোন স্মৃতিই আমার স্মরণ থাকার কথা নয়, বাস্তবিকতাও তাই । মুক্তিযুদ্ধের সাথে আমার বাপ চাচারা জড়িত থাকার কারনে মনের গহীনে প্রচন্ড শ্রদ্ধা ভালবাসা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে, প্রথমে পরিবারের বড়দের মুখে গল্প শুনে এবং তদ্পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস পড়ে যতটুকু জানা ।
কৈশরে আমার বন্ধু সহপাঠীরা গোয়েন্দা সিরিজ কার্টুন নিয়ে মজা পেলেও আমার কেমন জানি মুক্তিযুদ্ধের গল্প উপন্যাস খুব টানত । ঐভাবে বিচ্ছিন্ন পড়াশুনায় জেনেছিলাম সাহসী তরুণ মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীকে এবং মনের অজান্তেই বিরাট একটা জায়গা জুড়ে ছিলেন কাদের সিদ্দিকী । ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে খুন হওয়ার পরবর্তীতে কাদের সিদ্দিকীর সাহসী প্রতিবাদী অবস্থানের গল্প আরো সম্মাণিত করেছিল ওনাকে ।
প্রতিবাদ, বিপ্লব, সমাজ পরিবর্তন ও মুক্তির সংগ্রামে চে গুয়ের মতই অনুপ্রেরণা যোগাতে পারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের তরুণ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী । কিন্তু ষড়যন্ত্রী, সুবিধাবাদী, রাজাকার প্রকৃতির মানুষরা যখন আমাদের অহংকার বঙ্গবীর কে নিয়ে মেতে ওঠে, তখন খটকা লাগে কেন হচ্ছে এমনটা । আমার জামাত ঘেঁষা বিএনপি মনা এক বন্ধু রীতিমত কাদের সিদ্দিকীকে পক্ষালম্বন করে বললেন ওনিই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, অন্য আওয়ামী লীগাররা ইন্ডিয়ায় হোটেলে আয়েশী জীবন ভোগ করেছে । কিন্তু ইতিপূর্বে কখনও বন্ধুটির মুখে মুক্তিযুদ্ধ ও কাদের সিদ্দিকী প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রশংসা সূচক বক্তব্য শুনতে পাইনি ।
আমার বিবেচনায় কাদের সিদ্দিকীর পছন্দ অপছন্দের কার্ভটা রীতিমত ওল্টে গেছে । আগে যারা পছন্দ করতেন, তারা এখন পছন্দ করেন না । আবার আগে যারা পছন্দ করতেন না, তারা এখন পছন্দ করেন । সেই খটকা থেকেই সাম্প্রতিক সময়ে ওনার কলাম পড়ি এবং টকশো দেখার চেষ্টা করি ।
জাতির উত্তাল এই সময়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পারতেন আরেকটা ইতিহাস তৈরী করতে । কিন্তু এখনকার শাহবাগের উত্তাল তরুণদের গণজাগরণ মঞ্চ যাকে নায়ক হিসাবে দেখার কথা, দেখছে খলনায়ক বা নব্য রাজাকার হিসেবে । পরবর্তীতে সংসদ অধিবেশনে ওনার বড় ভাই বর্তমান সরকারের মাননীয় পাটমন্ত্রী জনাব লতিফ সিদ্দিকী কর্তৃক ছোট ভাইয়ের সমালোচনা পূর্বক ধিক্কার জ্ঞাপন করেন ।
আমার ব্যক্তিগত পছন্দের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বর্তমান অবস্থানটার কারনে ওনার প্রতি কিছু জিজ্ঞাসার উদ্রেক হয়েছে । কিন্তু সরাসরি যোগাযোগ দুরুহ বিধায় পত্রিকার আশ্রয় নিয়েছি । একজন রাজনীতিবিদকে সমালোচনায় সময়কাল ও সমসাময়িক রাজনীতির প্রেক্ষাপট গুরুত্ব বহন করে ।
সেই অর্থে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতির প্রেক্ষাপট হচ্ছে- যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় এবং কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায়, এ রায়ের ক্ষুব্ধতা থেকে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি এবং গণজাগরণ মঞ্চের দাবির প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের আইনী সংশোধন ও সরকার দাবির প্রতি একাত্মতা, যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত দল জামাতে ইসলামীর বিচার, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, ব্লগার রাজীবের খুন হওয়া ও তদ্পরপর্তীতে রাজীবকে নাস্তিক ব্লগারের লেবাস পরিয়ে গণজাগরণ মঞ্চকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে দেশের আলেম ওলামা মাশায়েকদের মাধ্যমে ব্লগার তথা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু ধর্ম প্রাণ মানুষকে উস্কে দেয়ার রাজনীতি । সর্বশেষে জামায়াতে নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায়ে জামাত শিবির কর্মীদের তান্ডব ও পুলিশ কর্তৃক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে লাশের মিছিল ।
এহেন অবস্থায় সচেতন নাগরিক সমাজ রাজনীতিবিদ লেখক বুদ্ধিজীবি শিক্ষক সাংবাদিক সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের ইতিবাচক ভূমিকা জাতি প্রত্যাশা করে । প্রত্যাশা অনুযায়ী সবাই দায়িত্ব পালন করছে এমনটা বলা মুস্কিল । আবার একেবারেই করছে না, এমনটাও না । যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে কাদের মোল্লার গুরু পাপে লঘু দন্ডকে কেন্দ্র করে ব্লগারদের শাহবাগে জড়ো হয়ে প্রতিবাদের ব্যানার নিয়ে দাঁড়ান, যা অল্প সময়ের মধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হয় । এই জনতার সমুদ্রই গণজাগরণ মঞ্চ নামে শাহবাগে ২৬ দিন দিবা রাত্রি স্লোগানে মূখর । বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিত্বরা সহমত জানালেও মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গণজাগরণ মঞ্চ ও সমসাময়িক রাজনীতিকে নিয়ে মন্তব্য বিবৃতি ভিন্ন ধরনের আবহ সৃষ্টি করেছে । বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অসংগতিপূর্ণ সমালোচনা গুলি তুলে ধরার চেষ্টা করব ।
এক) বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যঃ আমার ধ্যান-জ্ঞান বঙ্গবন্ধু, তাই আমার কমান্ডার বঙ্গবন্ধু, আমার নেতা বঙ্গবন্ধু । সেটা মুক্তিযোদ্ধা হলেও, রাজাকার হলেও বা নব্য রাজাকার হলেও । আমাদের দুজনের সম্পর্ক ছায়ায়-মায়ায় জড়ানো । আমাদের আলাদা করবে কে ? কার অত ক্ষমতা ?
সমালোচনাঃ বঙ্গবীর আপনার যুক্তিতর্কে বিস্মিত হয়েছি । আপনি যে ভাবে ধ্যান-জ্ঞান ও ছায়ায় মায়ায় সম্পর্কটির কথা বলে আপনার নব্য রাজাকারের অপবাদটি বঙ্গবন্ধুর উপরে চাপিয়ে দিলেন তা রীতিমত অন্যায় কারন আপনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা ভালবাসা থাকলে আপনার দায় আপনিই নিতেন, বঙ্গবন্ধুকে স্পর্শ করাতেন না । একটি উদাহরণ দিয়ে বলছি- লঞ্চ স্টীমার দূর্ঘটনায় মা বাবা সন্তান সহ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সময় মা বাবা তার সন্তানকে জানালা দিয়ে বের করে দিয়ে তাদের ভালবাসার সন্তানটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে । এক্ষেত্রে মা বাবা নিজেরা বাঁচতে না পারলেও তাদের ভালবাসা ও আদরের সন্তানটিকে ঠিকই বাঁচান । এবার বঙ্গবীর আপনিই বলুন প্রয়াত বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসলে আপনি কি পারতেন আপনার অর্জিত কলংকে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে ?
প্রায় অনুরুপ একটি দূর্ঘটনার খবর পত্রিকায় পড়েছিলাম, তা হচ্ছে মা ও শিশু ব্যস্ত সড়ক পারাপারের সময় দ্রুত গামী বাসের তলায় সন্তান পিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়ে মা নিজে পিষ্ট হয়ে সন্তানকে রক্ষা করেছেন । কিন্তু আপনি স্বার্থপরের মত আপনাকে বাঁচানোর জন্য বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে দিলেন । বঙ্গবন্ধুর প্রতি ধ্যান জ্ঞান , ছায়ায় মায়ার সম্পর্কের কথা বলে স্বার্থপরের মত নিজেকে রক্ষার যে অপকৌশল নিয়েছেন, এভাবেই আপনি আপনার কর্মকান্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু থেকে আলাদা হবেন । অন্য কেউ লাগবেনা ।
দুই) বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যঃ ছেলেকে গালি দিলে বাপ পর্যন্ত যায় । আমাকে গালি দিলে মুক্তিযুদ্ধকে গালি দেয়া হয় । মুক্তিযুদ্ধকে গালি দিলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অক্ষত থাকেন না । তিনি হন ক্ষতবিক্ষত-রক্তাক্ত । তারপরও না-বুঝরা না বুঝলে আমি কী করব ?
সমালোচনাঃ বঙ্গবীর আপনি বলছেন না বুঝরা না বুঝলে আপনি কি করবেন ? আমার মতে আপনি ঢোল পিটিয়ে যে ভাবে নিজেকে রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরলেন তাতে আপনার সম্পর্কে জনগণ যে ম্যাসেজটি পাবে তা বঙ্গবন্ধু নয় আপনিই ছোট হবেন । একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, ধরুন, প্রাপ্ত বয়স্ক একজন যুবক ইমোশনালি একটি খারাপ কাজ করে হাতে নাতে ধরা পড়ল । যুবকটি তার বাবার পরিচয় দিলে মানুষ অবাক বিস্ময় প্রকাশ করে বলবে- আপনার বাবাতো খুব সম্মাণিত মানুষ, আপনি একি করলেন ! ঠিক আছে, আপনি চলে যান । আবার বাবার পরিচয় না দিয়ে অন্য উপায়ে গোপনে ছাড়া পাওয়া সম্ভব হলে । এক্ষেত্রে যুবকটি ইজ্জতধারী বা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হলে বাবার পরিচয় না দিয়ে অন্য উপায়ে নিজেকে ছাড়িয়ে আনবে । আবার যুবকটি কম ইজ্জতের বা ব্যক্তিত্বহীন হলে হৈ চৈ করবে এবং বাবার পরিচয় দিয়ে নিজেকে মুক্ত করবে । বঙ্গবীর, আপনি যে উপায়ে নিজেকে মুক্ত করতে চাচ্ছেন তা ব্যক্তিত্বহীন ছেলেটির মত নয় কি ?
তিন) বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যঃ এই যে ইদানীং ধর্মভিত্তিক দল বাতিলের জিকির উঠেছে । সত্যিই যদি বাতিল করা হয় তাহলে মাদ্রাসার কি হবে ? দুই দিন পরে যদি বলা হয় মসজিদে যাওয়া যাবে না । যে দেশে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস এত সহজে কেটে দেওয়া গেছে । কোনো প্রতিবাদ হয়নি । সেই দেশের মসজিদে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় কতক্ষণ ?
যতকাল আল্লাহর দুনিয়ায় শান্তির ধর্ম ইসলাম থাকবে ততকাল ইসলামী রাজনীতি এবং ইসলামী আন্দোলন থাকবে, কেউ বন্ধ করতে পারবে না । বুক ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু মানুষের এই শঙ্কা নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই । আওয়াজ উঠেছে, ইসলামী দল বাতিল করতে হবে । কিন্তু হিন্দুর দল থাকবে, খ্রিস্টানদের দল থাকবে—মুসলমানের দেশে মুসলমানের দল থাকবে না—কেমন সব আজব কথা! যারা ধর্মকর্ম মানে না, তারা তাদের মতো থাকুন । যাদের আল্লাহ আছে, রাসুল আছে তাদের কেন এত গালাগাল ।
সমালোচনাঃ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে মাদ্রাসা ছিল কি ? নিশ্চয় স্বীকার করে বলবেন -ছিল । আপনি কি ভুলে গেছেন ? স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল । যুক্তিতর্ক এবং বাস্তবতা ছাড়াই লিখলেন, মসজিদে যাওয়া যাবে কি ? মসজিদে যেতে বাঁধা দিবে কি ? বঙ্গবীর আপনাকে বলছি, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস উঠে যাওয়াতে আমরা কি ধর্ম কর্ম ছেড়ে দিয়েছি ! নাকি ছেড়ে দিব ! মূলতঃ আগে পরে একই অবস্থা । কিন্তু আপনি শুধু শুধু জুঁ জুঁ দেখালেন । যা ধর্ম ভীরু মানুষের ভোটের রাজনীতির জন্য সামরিক শাসকরা করেছিলেন অতীত দিনে ।
ইসলাম ধর্ম, ইসলামের রাজনীতি ও আন্দোলন নিয়ে কেউ বলছে না । যা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি আইন করে বন্ধ করার । অর্থাৎ সব ধর্মেরই রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, শুধু ইসলাম ধর্মের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এমনটা নয় ।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল । তখনতো সক্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন । এখন নিষিদ্ধের দাবি শুনেই বুকের চৌচির অবস্থা, তখন আপনার কেমন অনুভূত হয়েছিল । আপনি যে আওয়াজের কথা বলছেন তা হচ্ছে- ইসলামের রজনীতি থাকবে না, অথচ হিন্দু, বৌদ্ধ,খৃষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের ধর্মের রাজনীতি থাকবে । যাহোক, আপনার কথিত আওয়াজটি ঠিক না, বাংলাদেশের কোথাও এ ধরনের আওয়াজ ওঠেনি । তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা, তারই অংশ হিসেবে অনুরণন হচ্ছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে ।
চার) বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যঃ ১৪ তারিখ টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম । মাওয়ার ওপারে ফেরি ঘাটে নামতেই ৩-৪ জন বৃদ্ধ বড় উদ্বেগ নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘বাবা, নামাজ পড়তে মসজিদে নাকি যেতে পারব না !’ আমি থমকে গিয়েছিলাম ।
সমালোচনাঃ এটি আপনি কলামে লিখেছেন, আবার দিগন্ত টিভির ২৪ ফেব্রয়ারীর টকশোতে একই বক্তব্যে ২-৩ জন বৃদ্ধের কথা হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।
যাহোক, সংখ্যা বিভ্রাটটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না । নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া যাবে না । এই আশংকার বিষয়টি বঙ্গবীর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সময়েও শুনে থাকার কথা । আওয়ামী লীগকে নিয়ে নিন্দুকেরা এ ধরনের আরো যে আশংকা বা প্রচারণা গুলো আনতেন বা আনেন তা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া হয়ে যাবে, মসজিদে নামাজের পরিবর্তে উলুধব্নী শুনা যাবে, মসজিদ মাদ্রাসা থাকবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
বঙ্গবীর আপনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় কিভাবে ফেইস করতেন জানি না । তবে সচরাচর আওয়ামী লীগ এ ধরনের বক্তব্যে বলে থাকেন এসব নিন্দুকদের অপপ্রচার, যার কোন বাস্তবতা নেই । যা নিন্দুকেরা অন্যের নামে, বেনামে, বানিয়ে বানিয়ে উপস্থাপন করে থাকেন । তবে ১৯৯৬ ও ২০০৯ এদুবারে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার কারনে নিন্দুকেরা এ বিষয় গুলি তেমনটা বলেন না । তারপরও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যেহেতু শুনেছেন এবং সরকার কে জনগণের আশংকা দূর করতে বলেছেন । আশা রাখি সরকার তথা আওয়ামী লীগ বিষয়টা নিন্দুকের কথা বলে মনে করবেন না, গুরুত্ব দিয়েই দেখবেন ।
বঙ্গবীর আপনি গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে বলেছেন, প্রথম দিকে আশাবাদী ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে গণজাগরণ মঞ্চে সরকারের উপস্থিতির কারনে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন । এখন দেখছি গণজাগরণ মঞ্চ ও গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ডাঃ ইমরান এইচ সরকারকে নিয়ে আপনি সমালোচনা মুখর । বঙ্গবীর, ইমরানরা আপনাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভূমিকায় অবতীর্ণ । ইমরানদের ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্যটি নিশ্চয় আপনার সমর্থণের দাবি রাখে ।
গণজাগরণ মঞ্চ কি চায় ? কেন চায় ? প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনি জানেন না । এমনটা মনে করছি না । স্বাধীনতা পরবর্তীতে আপনারা যদি যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুকূলে দেশ ও রাজনীতিটা রাখতে পারতেন, তাহলে ৪২ বৎসর পর ইমরানদের শাহবাগে জনমত তৈরীর জন্য দাঁড়াতে হত না ।
গণজাগরণ মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর রাষ্ট্র ও রাজনীতি চায় অর্থাৎ দেশের সরকারী দল ও বিরোধী দল উভয়ই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চেতনা নির্ভর রাজনীতি থাকবে না, থাকতে পারে না ।
মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চেতনা নির্ভর রাজনীতি ধবংশ করার জন্য যা দরকার তার জন্য প্রয়োজন -ওদের রাজনীতি আইনানুগ ভাবে নিষিদ্ধ করা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারকীকরণ, সামাজিক ভাবে নিরুৎসাহিতকরণ, প্রচার মাধ্যম পরিচালনায় সতর্কতা অবলম্বন ও সাংস্কৃতিক ভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকরকরণ । তারই অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংক, দিগন্ত টিভি, জামাত শিবির পরিচালিত কোসিং সেন্টার, আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বয়কট করার আহবান ।
কথা হচ্ছে, আপনার কাছে যদি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চেতনা নির্ভর রাজনীতি ধবংশ করার পরামর্শ চাওয়া হয় । আপনি কি পরামর্শ দিবেন । নিশ্চয় আপনিও গণজাগরণ মঞ্চের ছেলেদের মতই কিছু একটা বলবেন । আর যদি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চেতনার রাজনীতি অনুচিত মনে না করেন, তাহলে আপনার সমালোচনা সাথে আমিও একমত ।
এছাড়াও বঙ্গবীরের আলোচনায় যে বিষয় গুলি প্রাধান্য পায় তা হচ্ছে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর । সরকারের উপরোক্ত দায়িত্বশীল ও অন্যান্যদের কার্যক্রমের কিছু কিছু সমালোচনার সাথে একমত পোষন করেই বলছি, বঙ্গবীর আপনার সমালোচনায় অনেকটা সরাসরি, ব্যক্তিগত ও ক্ষেত্র বিশেষ ঈর্ষাপরায়ন মানুষিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । যা একজন সমালোচক , রাজনৈতিক কলামিষ্ট বা টিভি উপস্থাপকের হিসেবে সার্জনীনতা ক্ষুন্ন করে ।
পরিশেষে, বিশাল গৌরবের অংশীদার জাতির অহংকার মুক্তিযুদ্ধের সফল কিংবদন্তী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে নিয়ে লিখুনীটিতে বিন্দুমাত্র অবিচার ধরা পড়লে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি কামনা করব ।
লেখকঃ প্রবাসী, জাপান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন