সাপ্তাহিকী
|
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
|
|
অবরুদ্ধ রিজভী ও রাজনীতির অবনমন
26 Jan, 2013
সাবেক রাকসু ভিপি ও ছাত্রদল নেতা বর্তমান বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ব্যাতিক্রমী জীবন যাপন করছেন । আমাদের দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগনের আগ্রহের মাত্রাটা ক্রমশঃ নিন্মমুখী । বিএনপি নেতা রিজভী দেড় মাস যাবত বিএনপি কাকরাইল অফিসে বসবাস করছেন । কিন্তু বিষয়টা তেমন ভাবে রাজনীতিতে নজর কাড়ছে না । রিজভী সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বলেছেন - ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সরকার অন্যায় ভাবে কারাবন্দি করে রেখেছে । তাই ওনি গ্রেফতার আতংকে ভূগছেন এবং গ্রেফতার এড়াতে পার্টি অফিসে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাস করছেন । রুহুল কবির রিজভী বিএনপির অনেক নেতার চাইতে সংগঠনের কার্যক্রমে নিবেদিত প্রান এবং ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের একজন সফল ছাত্রনেতা ও সংগঠক । কিন্তু এখন সেই রিজভীকে মিলাতে পারছি না ।
রাজনীতির সামগ্রিক অবনমন কি রিজভীর ওপর ভর করেছে । নাকি বিশাল নেতা কর্মির দল বিএনপিতে নিজেকে একা অনুভব করছেন । নাকি রাজনীতিবিদদের পাশে জনগণের উপস্থিতি অনুভব করছেন না । বিএনপির বাকি নেতৃত্বরা কি পারেন না, রিজভীকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিসে নিয়মিত নেতা কর্মির ভীড় জমিয়ে ঐ এলাকাটিতে ভিন্ন ধরনের আবহ সৃষ্টি করতে । তাহলে সাংবাদিকরাও ভীড় জমাত খবর সংগ্রহে, পরদিন পত্রিকার মাধ্যমে জনগণ জানতে পারত এবং বিএনপি এর মাধ্যমে জনমতও সৃষ্টি করতে পারত ।
রাজনীতিতে জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন ষড়যন্ত্র ছিল এবং থাকবে আবার সঠিক নেতৃত্বই কার্যকরী আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন । কিন্তু যত দেখছি ততই হতাশ হচ্ছি । আপনাদের নিশ্চয় স্মরন আছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতবার জেল এড়াতে প্রায় দশ দিন আত্ম গোপনে ছিলেন । এ পর্যায়ের নেতারা সাধারনত ঠুনকো মামলায় আত্ম গোপনে যান না এবং যখন তখন কারাবরনও করতে হয় না । কিন্তু বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব নাকি ভীতু মানুষিক অবস্থার কারনে সরকার বার বার গ্রেফতার করে আন্দোলন দমিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন ।
বর্তমান সরকারী দলটি বঙ্গবন্ধুর মত বিশাল রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের হাতে গড়া দল । তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজনীতিবিদদের সম্মান মর্যাদার জায়গা টুকু রাজনীতিতে রাখবেন, এই প্রত্যাশা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি রাখাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ঠুনকো মামলায় কারাবরণ করানোটা আওয়ামী লীগ রাজনীতির অবনমন বৈ কিছুই নয় ।
আপনারা একমত হবেন কিনা জানিনা, তবুও শেয়ার করছি । এক সময়ের আপোষহীন নেত্রী এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাড়ির দখল ঠেকাতে দরজা জানালা বন্ধ করে ভিতরে বসে ছিলেন, পরে দরজা ভেঙ্গে ওনাকে পুলিশ বের করে আনেন । সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া কি দরজা জানলা বন্ধ রেখে বাড়িটি রক্ষা করতে পেরেছিলেন ?
সাধারণ মানুষ প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে খড় কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় কিন্তু নেতারা তার রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভবিষ্যৎ দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক । ধরুন, ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রান্ত হয়, তখন বঙ্গবন্ধু পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুভব করে তৎকালিন সেনা প্রধান শফিউল্লাহকে ফোন করেন । কিন্তু যখন দেখছিলেন শেখ কামাল শেখ জামাল সহ মহিলা পুরুষ সবাইকে নির্বিচারে খুন করছে তখন বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত বুঝেছিলেন ওদের প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । সাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন ধমকের শুরে জানতে চাইলেন তোমরা কি চাও । খুনীরা কিন্তু মুহূর্তের জন্য হলেও ভরকে গিয়েছিল । খুনীরা খুন করেছে ঠিকই কিন্তু মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও বঙ্গবন্ধু সাহসী মৃত্যুকে বেঁচে নেন । মৃত্যু ভয় কার না আছে । বঙ্গবন্ধু যদি ঘরের কোনায় কাঁদতে কাঁদতে জীবন ভিক্ষা চাইতেন অথবা বাঁচার আকুতি নিয়ে খাটের নীচে লুকাতেন, বঙ্গবন্ধুকে ঘরের কোনায় অথবা খাটের নীচেই খুন করত । পর দিন বঙ্গবন্ধুকে জাতি ঘরের কোনায় এবং খাটের নীচ থেকে উদ্ধার করত । কিন্তু জাতি তার জনককে সাহসী ভঙ্গীতে আঙ্গুল উঁচিয়ে দোতলার লুঁটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছে ।
আমি বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর এই কৌশলটা ঠিক মনে করছি না । রাজনীতি যেহেতু জনগনের জন্য এবং রাজনীতি যেহেতু জনগনকে সাহসী করে, পথ দেখায়, আশা জাগায়, স্বপ্ন দেখায় । আর সেই রাজনীতিরই লোক হয়ে মির্জা ফখরুল রিজভীরা নিজেদেরকে সাহসী অবস্থানে দেখবেন না কেন, একা অনুভব করবেন কেন ? ওনারা যদি জনগণের কথা বলেন জনগণই ওনাদের পাশে দাঁড়াবে । নাকি জনগণ বিচ্ছিন্ন রাজনীতির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি ।
এই সেই দিন একটি টিভি টকশোতে রিজভীর আত্ম অবরুদ্ধতাকে নিয়ে উপহাস করে একজন বললেন, ভালইতো বিএনপি একজন সার্বক্ষনিক রাজনীতিবিদ পেল, আরেকজন তো রিজভীকে হাসি ঠাট্রার পর্যায়ে নিয়ে বললেন রিজভী ভাই পার্টি অফিস দখল নিচ্ছেন নাতো, নাকি দাম্পত্য কলহের কারনে পার্টি অফিসে থাকছেন । আবার আওয়ামী লীগ মুখপাত্র হানিফ বলেছেন, রিজভী বিএনপি অফিসে অবস্থান নিয়ে নাটক করছেন ।
নাটক, বাস্তবতা যাই বলি না কেন । আমরা আমাদের ভাষা ও দেশ অর্জন করেছি রাজনীতির মাধ্যমে । তাই রাজনীতিবিদদের পরিপক্ষতা, সহনশীলতার চর্চা, পরমত সহিস্নুতা, অন্য দেশের রাজনীতিবিদদের জন্য অনুকরণীয় হওয়ার কথা । কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদদের কর্মকান্ডে আমাদের দেশের জনগণই দিন দিন রাজনীতি বিমুখ হয়ে ওঠছেন, অন্য দেশের রাজনীতিবিদদের অনুকরনের প্রশ্নই ওঠে না ।
প্রত্যাশা রাখছি, রাজনীতির দেশ বাংলাদেশ রাজনীতিতে আবার ঘুরে দাঁড়াবে, ফিরে আসবে বিশালতা নিয়ে, ভেদাভেদ ভুলে, ষড়যন্ত্র পরিহার করে । রাজনীতির মোকাবেলায় রাজনীতি আসবে অধিকতর পরমত সহিঞ্চুতা, যুক্তিবাদিতা ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে ।
লেখকঃ প্রবাসী, জাপান ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন