সাপ্তাহিকী
|
সাইফ বরকতুল্লাহ
|
|
স্বাগত ২০১৩ : নতুন বছর নতুন আশা
05 Jan, 2013
‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে
...
তোরা সব জয়ধ্বনি কর ”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অমোঘ আহ্বানকে হৃদয়ে ধারণ করে স্মৃতির খেরোখাতা থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মুছে শুরু হলো নতুন বছর। স্বাগত ২০১৩।
অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। নতুন বছরের, নতুন সূর্য নতুন দিনের, নতুন স্বপ্নের। নতুন সূর্যালোকিত দিনের প্রতি অসীম প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা মানুষের।
কালের অনন্ত যাত্রায় নতুনের কাছে প্রত্যাশা শিশিরভেজা পত্রপল্লবের মতো চিরদিন মানব হৃদয়ে জেগে থাকে বলেই জীবন নিরন্তর বহমান। এ স্রোতে এগিয়ে যেতে যেতেও পেছন ফিরে বিষন্ন বেদনায় দেখে নিতে ইচ্ছে করে চলে গেল যে, তাকে। বিদায়ী বছরটি প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দোলাচলে নিয়েছে অনেক কিছু।
সময় যেন এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়া, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তো জীবন এত গতিময়। সেই গতির ধারাবাহিকতায় মহাকালের প্রেক্ষাপটে একটি বছর মিলিয়ে গেল। যে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০১২-এর প্রথম দিনটিকে বরণ করা হয়েছিল, সেই প্রত্যাশার সব কি পূরণ হয়েছে? এ হিসাব না হয় নাইবা করলাম।
নতুন বছর। নতুন স্বপ্ন। চোখের সামনে এসে দাড়ায় ধূসর হয়ে আসা গল্পগাঁথার সারি সারি চিত্রপট। কখনো বুকের ভেতর উঁকি দেয় ব্যক্তিমানুষের একান্তই দুঃখ-যাতনা। কখনো পাওয়ার আনন্দে নেচে উঠে হৃদয়। নানা আনন্দ আর হতাশা, অনিশ্চয়তা আর আবেগের মধ্য দিয়েই জীবন থেকে পার হলো আরো একটি বছর। আর এ বছরটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে আমাদের জীবনে এমনি প্রত্যাশা সবার। নতুন বছরের শুরুতে আমাদের কামনা এ ধারা বিস্তৃত হোক।
২০১৩ সালকে আমি দেখতে চাই ভিন্ন আঙ্গিকে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দেশে সুশাসনের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ কিন্তু আইনের শাসন। হিংসা-প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতিকরা পরমতসহিষ্ণু হয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার আবহ তৈরি করে জনকল্যাণে সবাই একসঙ্গে মনোযোগী হবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। আইন হয়ে উঠুক সব কিছুর নিয়ামক। শাসকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
পরিশেষে কবি ও গীতিকার কেজি মোস্তফার কয়েকটি কথা দিয়েই শেষ করছি-
‘ চারপাশটা অনেক আধুনিক। এই বিশ্বায়নের যুগে চারদিকে থরে থরে সহজলভ্য লাক্সারি ভোগ্যপণ্য। অবশ্য জীবনে তিনটে জিনিস ক্ষণস্থায়ী। সৌভাগ্য, সাফল্য আর স্বপ্ন। ভাবতে গেলে ভেতরটা স্যাঁতসেঁতে লাগবে বই কি। কিন্তু জীবনের শূন্যতাই আমাদের চালিত করে সেই ফাঁক ভরিয়ে তোলে। যদিও বিজ্ঞানের তথা জড়বাদের মূল ধারণা হলো, জড়বস্তুুই একমাত্র সত্য। অন্য সবকিছুই, যেমন আমাদের আমিত্ব, চৈতন্য, চিন্তা ও যাবতীয় অনুভূতি সব কিছুকেই জড় পদার্থের গুণাবলি ও আচরণের দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আমাদের জীবন কিন্তু নানা বিভঙ্গে নিজের মধ্যে অনেক রকম বদল হয়ে যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে আলো নিভে আসে। অলৌকিক মহিমায় জন্ম-মৃত্যু, ভূত-ভবিষ্যত্, আত্মা ও শরীর সবকিছু ব্যাখ্যার অতীত, সবকিছু ঢাকা পড়ে সঙ্কেতের কঠিন আড়ালে। অন্তর্জীবন আর বহির্জীবনের মাঝে এসে দাঁড়ানো প্রতিনিয়তই সেই এক উপলব্ধি, সেই অনন্তের অহরহ হাতছানি! ... বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের পুরনো তারাগুলোর দিকে চেয়ে আছি মুগ্ধ চোখে। পশ্চিম আকাশে প্রায় ডুবে যাওয়া সূর্যের মধ্যে নিজেকে গোপন করার জন্য আশ্রয় খুঁজি। কিন্তু কোথায় আকাশ, কোথায় সূর্য। আকাশের লাল আভা মলিন হয়ে সেখানে ছায়া ছায়া তুলির আঁচড় পড়ছে। ঘরে ফেরা কাক-চড়ুইয়ের দল ঝাঁকড়া গাছগুলোয় বসে তুমুল হল্লা করছে। খুব নিচু লয়ে কোমল সুর জেগে উঠছে, যেন মায়ের আদরমাখা ঘুমপাড়ানি গান, স্বপ্ন, তুই আয়, পৃথিবীতে মানুষ হয়ে বাঁচব। ”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন