স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। তবু আমাদের সামনে কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। দেশের জন্য চাই ত্যাগী, আদর্শ, সৎ ও সাহসী রোল মডেল। চাই তরুণ মেধাবী ও সাহসী নের্তৃত্বের অবারিত প্ল্যাটফরম।
আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক বা জনগণ। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিভাজনে আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাসকরি। সমাজের প্রতি আমাদের অনেক দায়-দায়িত্ব। সমাজের প্রতি আর দশটা দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম একটি হলোÑ ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা। ভোট প্রদান করা আমাদের নাগরিক অধিকার এবং দায়িত্ব। ভোটের সময় আমরা দলবেধেঁ ভোট দিই। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে আমাদের রাজনীতির চরিত্র বিশ্লেষণ করলে ভোট প্রদানে আমাদের দ্বীধা-দন্দ্ব বেড়ে যায়। কাকে ভোট দেব? কাকে বানাবো জনগণের প্রতিনিধি? আমাদের দুর্ভাগ্য, হতাশা, অসহায়ত্ব এই ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করেই। মাঝে মাঝে এমন প্রশ্নও জাগে আমরা আসলে কেন ভোট দেই? আমাদের ভোটে যদি কোনো দুর্নীতিবাজ, অর্থলোভী, ক্ষমতালিপ্সু জনপ্রতিনিধি হয়ে আসেন তাতে আমাদের কি লাভ? দেশের কি লাভ? এসব প্রশ্ন জনগণকে মানবতার কাঠগড়ায় দাঁড় করায় বার বার। তারপরও আমরা ভোট দিতে যাই! আমাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে আসেন প্রিয় জনপ্রতিনিধিরা।
জনগণের বিপুল সমর্থনে যিনি নির্বাচিত হন তিনি জননেতা। আমাদের প্রত্যাশা আর স্বপ্নপূরণের প্রতিনিধি। কিন্তু আমরা কেমন বোকা সরল ভোটার- সেটা বুঝতে পারি যখন আমাদের ভোটে পার পেয়ে নেতাজি লাপাত্তা হয়ে যান। ভোটের আগে কী জনদরদী চরিত্র তাদের। চেনা- অচেনাকে দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে ধরেন। হাতে হাত মেলান। কুশল জানেন। আর ভোটের পরের বিজয়ী এই নেতার পার্থক্য পিলে চমকানোর মতো। ভোটের আগের নেতা কি অসাধারণ সৎ, উদার, নিরহঙ্কারী, আবেগী ও সেবক মানুষ। হাটে, ঘাটে, মাঠে, অলিতে-গলিতে চষে বেড়ান জনগণের দুয়ারে দুয়ারে। ভোট ভিক্ষা চান। হাতে পায়ে ধরেন। রাত-বিরাতে জনগণের কাছে ছুটে যান। আর হাজারো প্রতিশ্রুতির মনভুলানো কথার ঝুড়ি দিয়ে হৃদয় জয় করে নেন আমাদের। আর ভোটের পরের নেতা- জনপ্রতিনিধি হলেও পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
এক জরিপে উঠে এসেছে- দেশের রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। খুবই ভয়াবহ খবর। ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ‘বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম’ শিরোণামের এই জরিপে উঠে এসেছে তরুণ সমাজে রাজনৈতিক ভাবনার নানান বিশ্লেষণ। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে- ৩৮ শতাংশ তরুণ ছাত্ররাজনীতির প্রতি উদাসীন। ৩০ শতাংশ তরুণ মনে করে রাজনীতিতে অংশ নেয়া ঠিক হবেনা। তরুণ ও মেধাবীরা রাজনীতিতে না এলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আসবে কি করে! জরিপটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- ৪১ শতাংশ তরুণ বিদেশে পারি জমাতে আগ্রহী। অথচ বর্তমানে ভোটের বাজারে বিরাট একটা অংশ তরুণ সমাজ। রাজীতির চালচিত্রের পটপরিবর্তনে এখন তরুণ সমাজের ভুমিকা অগ্রগন্য। এখন ভাববার বিষয় হলো- ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৬ কোটি তরুণের মনোভাব আমলে না নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণ কতটা সম্ভব? এই জরিপে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, যেমন- ৯৮ শতাংশ তরুণ নিজেকে সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করতে আগ্রহী। তরুণদের জাতীয় পর্যায়ের রোল মডেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের সমস্যা হলো বর্তমান রাজনৈতিক নের্তৃত্বে কেউ রোল মডেল হতে পারছেন না। তবে সুযোগ আছে। এই ৯৮ শতাংশ তরুণের সামাজিকী মনোভাব, ৪১ শতাংশ তরুণের বিদেশগামী মনোভাবকে পাল্টে দিতে পারেন রাজনীতিবিদরাই।
আমাদের জনপ্রতিনিধিরা কি করেন : জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান। নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের চারপাশে সুবিধাবাদী, চাটুকার, ও তৈলবাজ শ্রেণীর বলয় সৃষ্টি হয়। এই বলয়ে জনগণের আর সহজ প্রবেশাধিকার থাকেনা। জনপ্রতিনিধি দলীয় প্রভাব বিস্তার করেন। সুবিধাবাদীরা তাদের প্রশ্রয়ে সমাজে নানান অপকর্ম চালায়। খুন, করেও পার পেয়ে যায়, ধর্ষন করেও পার পেয়ে যায়! জনপ্রতিনিধিরা দখলবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ বিতর্কিত ও নীতি গর্হিত নানান কাজে জড়িয়ে পড়েন। গরীবের প্রাপ্য রিলিফের টিন, দুস্থমাতার গম পর্যন্ত গিলে খান। জনগণের পেটে ক্ষুধা আর জনপ্রতিনিধিদের থাকে দামী ও বিলাসবহুল শুল্কমুক্ত গাড়ির ক্ষুধা। জনপ্রতিনিধি এলাকায় গেলে কোটি টাকার চাঁদাবাজির বাণিজ্যিক তৎপরতা শুরু হয়। তোরণে তোরণে ছেয়ে যায় এলাকা। আশপাশের সব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে বাধ্য হয় জনপ্রতিনিধিকে স্বাগত জানাতে। আচ্ছা বলি, জনপ্রতিনিধির আগমনের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক কি? কি কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক আয়োজনে সমবেত হবে? কেন তাদের ক্লাশ বন্ধ থাকবে? বরং জনপ্রতিধির উচিত স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগানো। জনপ্রতিনিধিরা এলাকা সফরে এসে সোনার নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল ইত্যাদি উপহার গ্রহণ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, সরকারি অফিসের কাজকর্ম বন্ধ করে একজন জনপ্রতিনিধির শুভাগমনকে আভিজাত্যময় করে তোলা নেতার কাজ হতে পারেনা। এসব তোষামোদকারী ও তুঘলকী কর্মকান্ড জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্রয়েই ঘটে থাকে। মোটকথা জনপ্রতিনিধি যদি প্রশ্রয় না দেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজ থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে।
জনগণ কি চায় : আমরা আমজনতা ‘পাবলিক’। যখন রাস্তায় গর্তে ঝাকুনি খাই, যখন খোলা ম্যানহোলে পরে আহত হই, যখন সড়কে প্রাণ যায়, যখন বাজারে গিয়ে মুখ কালো করে ঘরে ফিরি অথবা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের অভাবে অতিষ্ট হয়ে হাফ ছাড়ি তখন হনে মনে মনে ভাবি ভোট দিয়ে কি ভুল করলাম? জননেতা জনগণের দুঃখ বুঝেনা। জনগণ চায় জনপ্রতিনিধি এলাকায় আসুক। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনুক। তাদের পাশে দাঁড়াক। জনগণের স্থানীয় সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করুক। সংসদে গিয়ে তাদের কথা বলুক। দ্রব্যমূল্য, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, সুশাসন, আইনের অধিকার, বিদ্যুৎ, গ্যাস, কর্মসংস্থান, রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবেশ, ভুমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি নাগরিক অধিকার ও দাবী নিয়ে সংসদে কথা বলুন। এলাকার উন্নয়নে কাজগুলো দ্রুত সম্পাদনের তদারকি করুন। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিন, কাজ করে খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করুন। আপনাদের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, দুবৃত্বায়ন নিরুৎসাহিত করুন। এটুক্ইু জনগণের চাওয়া। সরকারি দলের প্রতিনিধি গালভরা বুলি আওড়াবেন আর বিরোধি দলের প্রতিনিধি হরতাল, রোড শো, আর ওয়াক আউট করবেন এসব জনগণ আর দেখতে চায় না। সংসদে ফাইল ছুড়াছুড়ি, গালাগাল করা, অসহিষ্ণু-অশালীন আচরণ এসব দেখলে আমাদের লজ্জা লাগে। আমরা কি অযোগ্য লোকদের পাঠিয়েছি জনপ্রতিনিধি করে? জনগণ চায় জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সততার নজির সৃষ্টি করুক।
জনগণ চায় ক্ষমতার দম্ভ থেকে জনপ্রতিনিধিরা বেরিয়ে আসুন। জনগণের ভোটের ক্ষমতা নিয়ে আপনারা নাম পাল্টানোর রাজনীতি করবেন কেন? মনে রাখতে হবে- জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনারা কেউ মন্ত্রী, কেউবা এমপি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। সংসদে গিয়ে বেতন, শুল্কমুক্ত গাড়ী এবং অন্যসব সুবিধার বিষয়ে আপনাদের মাঝে তো কোনো বিরুধ দেখা যায়না। সংসদে গিয়ে সমস্যার সমাধানে কথা বলেন না। আর ক্ষমতাসীনরা সংসদে বিব্রতকর প্রশ্নে জবাব দেননা। জাতীয় সংসদের আচরন থেকে কি শিখবে তরুণ সমাজ? আপনারা নিজেদের স্বার্থে আপনারা একাট্টা হতে পারেন, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান কেন? আপনাদের স্বার্থান্বেষী, দম্ভ ও বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশীরা মাতব্বরী করার সুযোগ নেয়। জনপ্রতিনিধিদের লোভের রোষে জনগণের দুঃখ ও হতাশা বাড়ে। আপনারা কি বিবেক দিয়ে ভাবেন এসব বিষয়?
জনপ্রতিনিধির আদর্শে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে : ১. তরুণ প্রজন্মের সামনে নের্তৃত্বের রোল মডেল তৈরি হবে।
২. তরুণরা আদর্শিক অনুপ্রেরণায় এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে রাজনীেিত ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে। ৩. স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে উন্নয়নের জোয়ার আসবে। ৪. দুর্নীতি কমবে; রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রেন ও হাসপাতালের সেবাগুলো মানুষ যথাযথভাবে পাবে। ৫. জনগণ ন্যায্য বিচার পাবে; ক্ষমতার প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে। ৬. অনিয়ম, ঘুষ, নিয়োগ বাণিজ্য, দলবাজি কমবে। ৭. কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে, কৃষি উপকরণ মিলবে সহজ সুবিধায়। ৮. স্থানীয় সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান হবে। ৯. সামাজিক বিভক্তি কমবে, সমাজের অস্থিরতা কমবে। ১০. জনগণ আশা পাবে, ভরসা পাবে; তাদের প্রদেয় ভোটের সুফল উপভোগ করবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
আমাদের স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে অনেক ত্যাগী নেতাও আছেন আমাদের দেশে। কিন্তু তেলবাজ, দুর্নীতি পরায়ণ এক শ্রেণীর নেতার দৌরাত্বের শিকার হয়ে ত্যাগীরা পিছিয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের এভাবে থেমে থাকলে চলবেনা। একজন নেতার জনপ্রতিনিধি হয়ে উঠার পেছনে বিরাট ঘটনাবহুল ইতিহাস থাকে। অসংখ্য ত্যাগী মহিমার নজির তাদের জীবনের নিরন্তর সঙ্গী। রাস্তা-ঘাটে আন্দোলন সংগ্রামে রাত দিন কাটিয়ে, রক্ত পানি করে, জেল খেটে, মামলার ঘানি টেনে, সামাজিক অপবাদ মেনে নিয়ে লাখো মানুষের মণি কোঠায় ঠাই করে নেন একজন নেতা। তারপর তিনি হয়ে উঠেন একজন জনপ্রতিনিধি। অত সোজা কথা না। জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন বলে কিচ্ছু নেই। সুতরাং বিদগ্ধ রাজনৈতিক চেতনা ছাড়া একজন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়না। তাই জনপ্রতিনিধির সারাজীবনের আত্মত্যাগের অর্জনকে সামান্য লোভের মোহে পড়ে কলঙ্কের কালিমা লেপন করা ঠিক নয়।
জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে টিআইবি’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি নিয়ে কয়েকচ্ছত্র কথা বলে শেষ করব। দেশের অর্ধেক সংসদীয় আসনের সদস্যদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, সংসদ সদস্যদের ৯৭ শতাংশই বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত। নবম জাতীয় সংসদ সদস্যদের ‘ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে টিআইবি। এ ব্যাপারে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও খ্যাতিমান রাজনীতিকদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও পাওয়া গেছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই এ ধরনের তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়েছেন। যাইহোক না কেন জনপ্রতিনিধিদের নামে অন্তহীন অভিযোগ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে কিন্তু তারা নিজেরাই দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরা দোষ বা অপরাধ না করেও দোষী বা অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েই বেশি নিন্দিত হন। সেবিবেচনায় এই প্রতিবেদনের ফলাফলটি এসে থাকলেও এটাও শেষ এবং চুড়ান্ত কিছু নয়। আবার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পরাকাষ্টা রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসের ওপর জরিপ চালালেও তার প্রতিফলন কিন্তু কম হবেনা। তাই এ নিয়ে জনপ্রতিধিদের অসহিষ্ণু হবার কোনো কারণ নেই। ধৈর্য্য নিয়ে বুদ্ধিদ্বীপ্ত প্রতিক্রিয়া জনগণের কাম্য।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতিই লাগবে। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিদেরকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মের সামনে আদর্শের মডেল হতে হবে জনপ্রতিনিধিদেরকেই। মূল্যবোধের চর্চা নিজের ও সমাজের মাঝে বিকশিত করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাবে আপন গতিতে। জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা। তরুণদের জন্য ইতিবাচক নের্তৃত্বে পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। শেষ কথায় বলব, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা সেই দায়বদ্ধতার নিদর্শন দেখতে চাই সব দলের কাছে সব সময়। স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। তবু আমাদের সামনে কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। দেশের জন্য চাই ত্যাগী, আদর্শ, সৎ ও সাহসী রোল মডেল। চাই তরুণ মেধাবী ও সাহসী নের্তৃত্বের অবারিত প্ল্যাটফরম।
রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম
এস এম মুকুল
স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। তবু আমাদের সামনে কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। দেশের জন্য চাই ত্যাগী, আদর্শ, সৎ ও সাহসী রোল মডেল। চাই তরুণ মেধাবী ও সাহসী নের্তৃত্বের অবারিত প্ল্যাটফরম।
আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক বা জনগণ। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার বিভাজনে আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাসকরি। সমাজের প্রতি আমাদের অনেক দায়-দায়িত্ব। সমাজের প্রতি আর দশটা দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম একটি হলোÑ ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা। ভোট প্রদান করা আমাদের নাগরিক অধিকার এবং দায়িত্ব। ভোটের সময় আমরা দলবেধেঁ ভোট দিই। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে আমাদের রাজনীতির চরিত্র বিশ্লেষণ করলে ভোট প্রদানে আমাদের দ্বীধা-দন্দ্ব বেড়ে যায়। কাকে ভোট দেব? কাকে বানাবো জনগণের প্রতিনিধি? আমাদের দুর্ভাগ্য, হতাশা, অসহায়ত্ব এই ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করেই। মাঝে মাঝে এমন প্রশ্নও জাগে আমরা আসলে কেন ভোট দেই? আমাদের ভোটে যদি কোনো দুর্নীতিবাজ, অর্থলোভী, ক্ষমতালিপ্সু জনপ্রতিনিধি হয়ে আসেন তাতে আমাদের কি লাভ? দেশের কি লাভ? এসব প্রশ্ন জনগণকে মানবতার কাঠগড়ায় দাঁড় করায় বার বার। তারপরও আমরা ভোট দিতে যাই! আমাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে আসেন প্রিয় জনপ্রতিনিধিরা।
জনগণের বিপুল সমর্থনে যিনি নির্বাচিত হন তিনি জননেতা। আমাদের প্রত্যাশা আর স্বপ্নপূরণের প্রতিনিধি। কিন্তু আমরা কেমন বোকা সরল ভোটার- সেটা বুঝতে পারি যখন আমাদের ভোটে পার পেয়ে নেতাজি লাপাত্তা হয়ে যান। ভোটের আগে কী জনদরদী চরিত্র তাদের। চেনা- অচেনাকে দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে ধরেন। হাতে হাত মেলান। কুশল জানেন। আর ভোটের পরের বিজয়ী এই নেতার পার্থক্য পিলে চমকানোর মতো। ভোটের আগের নেতা কি অসাধারণ সৎ, উদার, নিরহঙ্কারী, আবেগী ও সেবক মানুষ। হাটে, ঘাটে, মাঠে, অলিতে-গলিতে চষে বেড়ান জনগণের দুয়ারে দুয়ারে। ভোট ভিক্ষা চান। হাতে পায়ে ধরেন। রাত-বিরাতে জনগণের কাছে ছুটে যান। আর হাজারো প্রতিশ্রুতির মনভুলানো কথার ঝুড়ি দিয়ে হৃদয় জয় করে নেন আমাদের। আর ভোটের পরের নেতা- জনপ্রতিনিধি হলেও পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
এক জরিপে উঠে এসেছে- দেশের রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। খুবই ভয়াবহ খবর। ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ‘বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম’ শিরোণামের এই জরিপে উঠে এসেছে তরুণ সমাজে রাজনৈতিক ভাবনার নানান বিশ্লেষণ। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে- ৩৮ শতাংশ তরুণ ছাত্ররাজনীতির প্রতি উদাসীন। ৩০ শতাংশ তরুণ মনে করে রাজনীতিতে অংশ নেয়া ঠিক হবেনা। তরুণ ও মেধাবীরা রাজনীতিতে না এলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আসবে কি করে! জরিপটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- ৪১ শতাংশ তরুণ বিদেশে পারি জমাতে আগ্রহী। অথচ বর্তমানে ভোটের বাজারে বিরাট একটা অংশ তরুণ সমাজ। রাজীতির চালচিত্রের পটপরিবর্তনে এখন তরুণ সমাজের ভুমিকা অগ্রগন্য। এখন ভাববার বিষয় হলো- ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৬ কোটি তরুণের মনোভাব আমলে না নিয়ে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণ কতটা সম্ভব? এই জরিপে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে, যেমন- ৯৮ শতাংশ তরুণ নিজেকে সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করতে আগ্রহী। তরুণদের জাতীয় পর্যায়ের রোল মডেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের সমস্যা হলো বর্তমান রাজনৈতিক নের্তৃত্বে কেউ রোল মডেল হতে পারছেন না। তবে সুযোগ আছে। এই ৯৮ শতাংশ তরুণের সামাজিকী মনোভাব, ৪১ শতাংশ তরুণের বিদেশগামী মনোভাবকে পাল্টে দিতে পারেন রাজনীতিবিদরাই।
আমাদের জনপ্রতিনিধিরা কি করেন : জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান। নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের চারপাশে সুবিধাবাদী, চাটুকার, ও তৈলবাজ শ্রেণীর বলয় সৃষ্টি হয়। এই বলয়ে জনগণের আর সহজ প্রবেশাধিকার থাকেনা। জনপ্রতিনিধি দলীয় প্রভাব বিস্তার করেন। সুবিধাবাদীরা তাদের প্রশ্রয়ে সমাজে নানান অপকর্ম চালায়। খুন, করেও পার পেয়ে যায়, ধর্ষন করেও পার পেয়ে যায়! জনপ্রতিনিধিরা দখলবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ বিতর্কিত ও নীতি গর্হিত নানান কাজে জড়িয়ে পড়েন। গরীবের প্রাপ্য রিলিফের টিন, দুস্থমাতার গম পর্যন্ত গিলে খান। জনগণের পেটে ক্ষুধা আর জনপ্রতিনিধিদের থাকে দামী ও বিলাসবহুল শুল্কমুক্ত গাড়ির ক্ষুধা। জনপ্রতিনিধি এলাকায় গেলে কোটি টাকার চাঁদাবাজির বাণিজ্যিক তৎপরতা শুরু হয়। তোরণে তোরণে ছেয়ে যায় এলাকা। আশপাশের সব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে বাধ্য হয় জনপ্রতিনিধিকে স্বাগত জানাতে। আচ্ছা বলি, জনপ্রতিনিধির আগমনের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক কি? কি কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক আয়োজনে সমবেত হবে? কেন তাদের ক্লাশ বন্ধ থাকবে? বরং জনপ্রতিধির উচিত স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা যোগানো। জনপ্রতিনিধিরা এলাকা সফরে এসে সোনার নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল ইত্যাদি উপহার গ্রহণ করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে, সরকারি অফিসের কাজকর্ম বন্ধ করে একজন জনপ্রতিনিধির শুভাগমনকে আভিজাত্যময় করে তোলা নেতার কাজ হতে পারেনা। এসব তোষামোদকারী ও তুঘলকী কর্মকান্ড জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্রয়েই ঘটে থাকে। মোটকথা জনপ্রতিনিধি যদি প্রশ্রয় না দেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজ থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে।
জনগণ কি চায় : আমরা আমজনতা ‘পাবলিক’। যখন রাস্তায় গর্তে ঝাকুনি খাই, যখন খোলা ম্যানহোলে পরে আহত হই, যখন সড়কে প্রাণ যায়, যখন বাজারে গিয়ে মুখ কালো করে ঘরে ফিরি অথবা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের অভাবে অতিষ্ট হয়ে হাফ ছাড়িÑ তখন হনে মনে মনে ভাবি ভোট দিয়ে কি ভুল করলাম? জননেতা জনগণের দুঃখ বুঝেনা। জনগণ চায় জনপ্রতিনিধি এলাকায় আসুক। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনুক। তাদের পাশে দাঁড়াক। জনগণের স্থানীয় সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করুক। সংসদে গিয়ে তাদের কথা বলুক। দ্রব্যমূল্য, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, সুশাসন, আইনের অধিকার, বিদ্যুৎ, গ্যাস, কর্মসংস্থান, রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবেশ, ভুমি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি নাগরিক অধিকার ও দাবী নিয়ে সংসদে কথা বলুন। এলাকার উন্নয়নে কাজগুলো দ্রুত সম্পাদনের তদারকি করুন। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিন, কাজ করে খাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করুন। আপনাদের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, দুবৃত্বায়ন নিরুৎসাহিত করুন। এটুক্ইু জনগণের চাওয়া। সরকারি দলের প্রতিনিধি গালভরা বুলি আওড়াবেন আর বিরোধি দলের প্রতিনিধি হরতাল, রোড শো, আর ওয়াক আউট করবেন এসব জনগণ আর দেখতে চায় না। সংসদে ফাইল ছুড়াছুড়ি, গালাগাল করা, অসহিষ্ণু-অশালীন আচরণ এসব দেখলে আমাদের লজ্জা লাগে। আমরা কি অযোগ্য লোকদের পাঠিয়েছি জনপ্রতিনিধি করে? জনগণ চায় জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সততার নজির সৃষ্টি করুক।
জনগণ চায় ক্ষমতার দম্ভ থেকে জনপ্রতিনিধিরা বেরিয়ে আসুন। জনগণের ভোটের ক্ষমতা নিয়ে আপনারা নাম পাল্টানোর রাজনীতি করবেন কেন? মনে রাখতে হবে- জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আপনারা কেউ মন্ত্রী, কেউবা এমপি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। সংসদে গিয়ে বেতন, শুল্কমুক্ত গাড়ী এবং অন্যসব সুবিধার বিষয়ে আপনাদের মাঝে তো কোনো বিরুধ দেখা যায়না। সংসদে গিয়ে সমস্যার সমাধানে কথা বলেন না। আর ক্ষমতাসীনরা সংসদে বিব্রতকর প্রশ্নে জবাব দেননা। জাতীয় সংসদের আচরন থেকে কি শিখবে তরুণ সমাজ? আপনারা নিজেদের স্বার্থে আপনারা একাট্টা হতে পারেন, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান কেন? আপনাদের স্বার্থান্বেষী, দম্ভ ও বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশীরা মাতব্বরী করার সুযোগ নেয়। জনপ্রতিনিধিদের লোভের রোষে জনগণের দুঃখ ও হতাশা বাড়ে। আপনারা কি বিবেক দিয়ে ভাবেন এসব বিষয়?
জনপ্রতিনিধির আদর্শে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে : ১. তরুণ প্রজন্মের সামনে নের্তৃত্বের রোল মডেল তৈরি হবে।
২. তরুণরা আদর্শিক অনুপ্রেরণায় এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে রাজনীেিত ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে। ৩. স্থানীয়ভাবে এবং জাতীয়ভাবে উন্নয়নের জোয়ার আসবে। ৪. দুর্নীতি কমবে; রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রেন ও হাসপাতালের সেবাগুলো মানুষ যথাযথভাবে পাবে। ৫. জনগণ ন্যায্য বিচার পাবে; ক্ষমতার প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে। ৬. অনিয়ম, ঘুষ, নিয়োগ বাণিজ্য, দলবাজি কমবে। ৭. কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে, কৃষি উপকরণ মিলবে সহজ সুবিধায়। ৮. স্থানীয় সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান হবে। ৯. সামাজিক বিভক্তি কমবে, সমাজের অস্থিরতা কমবে। ১০. জনগণ আশা পাবে, ভরসা পাবে; তাদের প্রদেয় ভোটের সুফল উপভোগ করবে। দেশ এগিয়ে যাবে।
আমাদের স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে অনেক ত্যাগী নেতাও আছেন আমাদের দেশে। কিন্তু তেলবাজ, দুর্নীতি পরায়ণ এক শ্রেণীর নেতার দৌরাত্বের শিকার হয়ে ত্যাগীরা পিছিয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের এভাবে থেমে থাকলে চলবেনা। একজন নেতার জনপ্রতিনিধি হয়ে উঠার পেছনে বিরাট ঘটনাবহুল ইতিহাস থাকে। অসংখ্য ত্যাগী মহিমার নজির তাদের জীবনের নিরন্তর সঙ্গী। রাস্তা-ঘাটে আন্দোলন সংগ্রামে রাত দিন কাটিয়ে, রক্ত পানি করে, জেল খেটে, মামলার ঘানি টেনে, সামাজিক অপবাদ মেনে নিয়ে লাখো মানুষের মণি কোঠায় ঠাই করে নেন একজন নেতা। তারপর তিনি হয়ে উঠেন একজন জনপ্রতিনিধি। অত সোজা কথা না। জনপ্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন বলে কিচ্ছু নেই। সুতরাং বিদগ্ধ রাজনৈতিক চেতনা ছাড়া একজন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়না। তাই জনপ্রতিনিধির সারাজীবনের আত্মত্যাগের অর্জনকে সামান্য লোভের মোহে পড়ে কলঙ্কের কালিমা লেপন করা ঠিক নয়।
জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে টিআইবি’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি নিয়ে কয়েকচ্ছত্র কথা বলে শেষ করব। দেশের অর্ধেক সংসদীয় আসনের সদস্যদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, সংসদ সদস্যদের ৯৭ শতাংশই বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত। নবম জাতীয় সংসদ সদস্যদের ‘ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে টিআইবি। এ ব্যাপারে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও খ্যাতিমান রাজনীতিকদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও পাওয়া গেছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই এ ধরনের তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়েছেন। যাইহোক না কেন জনপ্রতিনিধিদের নামে অন্তহীন অভিযোগ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে কিন্তু তারা নিজেরাই দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরা দোষ বা অপরাধ না করেও দোষী বা অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েই বেশি নিন্দিত হন। সেবিবেচনায় এই প্রতিবেদনের ফলাফলটি এসে থাকলেও এটাও শেষ এবং চুড়ান্ত কিছু নয়। আবার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পরাকাষ্টা রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসের ওপর জরিপ চালালেও তার প্রতিফলন কিন্তু কম হবেনা। তাই এ নিয়ে জনপ্রতিধিদের অসহিষ্ণু হবার কোনো কারণ নেই। ধৈর্য্য নিয়ে বুদ্ধিদ্বীপ্ত প্রতিক্রিয়া জনগণের কাম্য।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতিই লাগবে। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিদেরকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মের সামনে আদর্শের মডেল হতে হবে জনপ্রতিনিধিদেরকেই। মূল্যবোধের চর্চা নিজের ও সমাজের মাঝে বিকশিত করতে হবে। দেশ এগিয়ে যাবে আপন গতিতে। জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা। তরুণদের জন্য ইতিবাচক নের্তৃত্বে পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। শেষ কথায় বলব, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা সেই দায়বদ্ধতার নিদর্শন দেখতে চাই সব দলের কাছে সব সময়। স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। তবু আমাদের সামনে কোনো রাজনৈতিক আদর্শ নেই। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। দেশের জন্য চাই ত্যাগী, আদর্শ, সৎ ও সাহসী রোল মডেল। চাই তরুণ মেধাবী ও সাহসী নের্তৃত্বের অবারিত প্ল্যাটফরম।
এস এম মুকুল, লেখক ও প্রাবন্ধিক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন