সাপ্তাহিকী
|
শরীফ নজমুল
|
|
আইনকে পণ্য নয় সেবা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -- চাই সুশাসন
05 Jan, 2013
গোড়া পচন ধরলে আগায় পানি ঢেলে লাভ কি?
কিম্বা “জীবনে যারে কভু দাও নিকো মালা, মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল?”
বলছিলাম দামিনীর কথা, সে মেয়েটিকে চার্টার্ড বিমানের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লী আসতে চায়নি, চায়নি তার মৃতদেহ প্রধানমন্ত্রী গ্রহন করবেন এত বড় কিছু হতে। হয়ত একটা আটপৌরে জীবনই সে চেয়েছিল। স্বামীর ঘর করবে, হাসি-দুঃখ ভালোবাসায় সংসার গড়বে, বাবা-মার মুখে হাসি ফুটাবে আর ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে। কিন্তু সে তা পারেনি। একটি সভ্য দেশ তার একজন সামান্য মেয়েকে বাচাতে পারেনি, কারন ঘটনার আগে সে ছিল সামান্য আর সামান্যের প্রতি নজর দেবার সময় রাষ্ট্রের কোথায়? যদিও মরনের পর তাকে ঢেলে দিয়েছে বরং বলা ভালো দিতে বাধ্য হয়েছে।
এ যেন সভ্যতার এক নির্মম উপহার!
এবার আসি আমাদের দেশের দিকে, দামিনীর আগেই ধর্ষিত হলো আমাদের বোন টাংগাইলে। কিন্তু আমারা জানলাম না লম্বা সময়। হয়ত ভারতের বিশাল আলোড়নে লজ্জিত হয়ে আমরাও জেগে উঠলাম। মিডিয়া-সোস্যাল মিডিয়া সরব হলো, কয়েকজন গ্রেফতার হলো। হয়ত কিছুদিন মাতামাতি চলবে, তারপর আবার সব ভুলে যাব। এই ফাকে আবার নতুন নতুন ঘটনা ঘটে আমাদের পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ হতে থাকবে। গত বছরও এদেশে সাত শতাধিক বোন ধর্ষিত হয়েছে। কারো ধর্ষনের জন্য কারো শাস্তি হয়েছে কি?
আইন যখন টাকা দিয়ে কেনা পণ্য হয় তখন এ ধরনের ঘটনা থেকে মুক্তি পাবার পথ কি?
প্রভাবশালী না হলে এখানে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা পাওয়া যায় না। যারা ক্ষমতাধর, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলে যাদের মামা-খালু-চাচা আছে তারা তো ধরেই নেয় আইন তাদের জন্য নয়। কিম্বা যদি পর্যাপ্ত টাকা থাকে সেও মনে করে টাকা দিয়ে পুলিশকে কেনা যাবে। আর এ এমন দেশ যেখানে ভিক্টিম হয়ে পুলিশের কাছে গেলেও পরে পুলিশ কে খুশী রাখতে হবে আর তার জন্য হয় মামা না হয় টাকা লাগবে। না হলে আসামীদের হুমকি আর পুলিশের হয়রানী দুটাই সামলাতে হবে।
অর্থনীতির সুত্র বলে মানুষ তার সীমিত সম্পদ ব্যাবহার করে বিভিন্ন দ্রব্যের উপযোগিতা সর্বোচ্চ (benefit maximize) করতে চায়। অর্থাৎ কারো কাছে একশ টাকা থাকলে কেউ কিনবে গানের সিডি যার কাছে গানের ভ্যালু বেশি আর কেউ হয়ত কিনবে মুভির সিডি কার তার কাছে মুভি দেখবার দেখবার ভ্যালু বেশী। আমাদের সরকারের কাছে পুলিশ একটি মুল্যবান কিন্তু সীমিত সম্পদ, দুর্ণীতিতে এমনি তার উপযোগিতা প্রায় শুন্যের কোঠায় তার উপর দেখা যায় সরকার সেই পুলিশ-সম্পদের বড় অংশই ব্যবহার করে ফেলে বিরোধীদল কে সাইজ করবার জন্য। তাছাড়া সরকার দলের প্রভাবশালীরা যেহেতু কিছু ক্রিমিনালদের প্রশ্রয় দেয় নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে, তারা বাকি ক্রিমিনালদের নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশের উপর প্রভাব বিস্তার করবার নৈতিক অধিকার রাখে না। এই সুযোগে দুর্ণীতিগ্রস্ত পুলিশ সে ক্রিমিনালদের সাথে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। ফলাফল হচ্ছে, সাধারন মানুষদের পুলিশদের কাছে যাওয়ার আর জায়গা থাকে না।
প্রতিটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার প্রতিবাদ করতে হবে আর তবে সার্বিকভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দাবী করতে হবে। পুলিশকে দুর্ণীতিগ্রস্ত রেখে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে ব্যবহার না করে তাদের জনগনের সেবক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগনের সচেতনতা, আন্দোলন, মিডিয়া-সোস্যাল মিডিয়ার সক্রিয়তা, সুশীল সমাজের সক্রিয়তা থাকলে তবেই আশা করা যায় সরকারে সদিচ্ছা তৈরী হতে বাধ্য হবে। আর সরাকের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই পুলিশ কে সেবা দান কারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দ্বায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের আইন-শৃংখলা পরিস্থতি নিউ ইয়র্কের চেয়ে ভালো, অতীতের যে কোন সময়ে চেয়ে ভালো, আল্লাহর মাল আল্লায় নিয়ে গেছে, ২৪-ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে জজমিঞা নাটকের অবতারনা, এটা একটা বিচ্চিন্ন ঘটনা এসব না করে/বলে প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি খুন-ধর্ষনের জন্য সরকারের দ্বায়িতশীল ব্যক্তিরা সরি বলবেন। দ্বায়িত্ব এড়ানো নয়, দ্বায়িত্ব নিতে হবে। জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। বিরোধীদলে কে সংসদে যেতে হবে।
গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি না ঢেলে, গলদ কে গোড়া থেকে দূর করতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন