সাপ্তাহিকী
|
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
|
|
হায়েনার কবলে বিশ্বজিৎ!
16 Dec, 2012
বিগত ৯ ডিসেম্বরের হরতালের দিন আমাদের রাজনীতির নির্মমতার শিকার হল বিশ্বজিৎ । বিশ্বজিৎ একজন পোষাক শ্রমিক অর্থাৎ দর্জি । বিশ্বজিতদের তৈরী পোষাকে আমরা নিজেদের পোষাকী সৌন্দয্য বাড়িয়ে ভদ্রোচিত অবয়ব ধারন করি । রাষ্ট্র অর্জন করে প্রবৃদ্ধি। বিশ্বজিতরা একদিন কাজ না করলে পেটে অন্ন জোটে না । তাই হরতালের দিন নিজ ও পরিবারের অন্নের বন্দোবস্ত করতে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নামে । জোট মহাজোটের কর্মসূচী পালন বা ভন্ডুল করা তার চিন্তায় ছিল না । যারা বিশ্বজিতদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাববেন, তাদেরই নির্মমতার শিকার হলেন বিশ্বজিৎ । ইউটিউব ও জিওগ্রাফি চ্যানেলে দেখেছি কিভাবে হিংস্র পশু নিরহ পশুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ।
সম্প্রতি ইউটিউবের একটি ভিডিওতে দেখেছি হিংস্র হায়েনা জীবন্ত মহিশের উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং মহিশটি দাঁড়ানো অবস্থাতেই কামড়ে নাড়ি ভুঁড়ি বের করে খেতে শুরু করল । তেমনি আমাদের রাজনীতির তথাকথিত ছাত্র নামধারী হায়েনারা চাপাতি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করল বিশ্বজিতের দেহ । বাঁচার আকুতি নিয়ে দোঁড়াচ্ছে বিশ্বজিৎ আর হায়নার দল পিছু নিয়ে দৌড়িয়ে-দৌড়িয়ে চাপাতির কোপ ও রড দিয়ে উপর্যোপুরি আঘাত করল। এক পর্যায়ে হায়েনার শিকার মহিশটির মতই অচল হয়ে লুটিয়ে পড়ল বিশ্বজিত । সংবাদ কর্মীরা পত্রিকার জন্য এ্যকশনের মূল্যবান ফটো তুললেন, ভিডিও চিত্র ধারন করলেন নিখুঁতভাবে, পথচারীরা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখলেন বিশ্বজিতের আত্ম চিৎকার । বিশ্বজিতের চিৎকার কাকুতি মিনতি রাজনীতির হায়নাদের মন টলাতে পারেনি । সংবাদ কর্মী পথচারী পুলিশ কেউ বিশ্বজিতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি । সংবাদ কর্মী পথচারিরা বিবেক ধংসনে ভূগছেন কিনা জানি না । বিশ্বজিতকে বাঁচাতে না পারার দায়-দায়িত্ব আমাদের উপরও বর্তায় । সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে না তুললে যে কোন দিন আমি আপনি হায়েনাদের শিকারে পরিণত হব ।
পত্রিকা টিভি মিডিয়া ও ফেইস বুকে ছাত্র নামধারী হায়েনাদের দলীয় পদ পদবী ক্রিয়াশীল সংগঠনের নাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম সহ স্ব-বিস্তারে এসেছে । বিশ্বজিতের ওপর হামলে পড়া হায়েনারা সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মী । জাতি অবাক ও বিস্মিত হচ্ছে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলছেন ঘাতকরা ছাত্র লীগ কর্মি না, এরা ছাত্র লীগ থেকে বহিঃস্কৃত ছাত্র । আমার প্রশ্ন বিশ্বজিতের লোমহর্ষক নির্মম হত্যাকান্ডের পর এরা ছাত্রলীগ কর্মী কি বা ছাত্রলীগ কর্মী না । এ প্রশ্ন আসতে পারে না । আমার প্রশ্ন এরা মানুষ কিনা ? মানুষ কেমন করে হায়েনার মত আচরন করে । দেশে আইন কানুন বলে কোন কিছু আছে কিনা ? যদি থাকে অপরাধী ছাত্র নামধারী হায়েনাদের আইনের হাতে সোপর্দ করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন ।
রাজনীতির নামে জনগনের জানমালকে আপনারা হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন । প্রাইভেট কার ও যাত্রীবাহী বাসে যাত্রী ও ড্রাইভার থাকা অবস্থাতে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পুঁড়িয়ে মারার রাজনীতি থেকে সরে আসুন । নতুবা জনগন নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে রাজনীতির হায়েনা দমনে সংঘবদ্ধ হবে । জনগনকে প্রাণে মেরে রাজনীতি করবেন আপনারা । আর জনগণ নির্বোধ ও অসহয়ায়ের মত চেয়ে চেয়ে দেখবে, এটা ভাববেন না । উদাহরণ আমার আপনার সামনেই আছে - মলম পার্টি, ছিনতাইকারী, ডাকাতকে এখন জনগন পুলিশে সোপর্দ না করে নিজেরাই শাস্তি দেয় । পুলিশ ও আইনের যথাযথ ভূমিকা পালন না করাতে জনগন আইন হাতে তুলে নেয় । জোট মহাজোটের তথাকথিত রাজনীতির এই সর্বগ্রাসি চেহারা না পাল্টালে, জনগনই পাল্টে গিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ও আইনকে হাতে তুলে নিবে।
আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না । আমরা চাই অতীত বরেণ্য রাজনীতিবিদদের যোগ্য উত্তরাধীকারী হিসেবে এই সময়কার রাজনীতিবিদদের ভূমিকা ।
লেখকঃ জাপান প্রবাসী
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন