
‘কেমন আছেন আপনি?’
পূর্বের তামিম ইকবাল হলে সঞ্চালকের এই প্রশ্নের উত্তরে হয়তো ‘ভালো আছি’ কথাটা বলেই ক্রিকেটের প্রসঙ্গে চলে যেতেন। কিন্তু গত মার্চের সেই হার্ট অ্যাটাকের পর তামিমের জীবনটাই পাল্টে গেছে। এই প্রশ্নের উত্তরে এখন তামিমকে তাই বলতে হয়, ‘ভালো। শরীর আল্লাহর রহমতে...বিশেষ করে ওই ঘটনার পর ভালোই সুস্থ হয়ে উঠেছি।
পরিবারের সঙ্গে এখন অনেক সময় কাটাতে পারি, যেটা ভালো। আলহামদুলিল্লাহ।’
এটুকু বলে তামিম একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলেন। প্রথম আলো কার্যালয়ে প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সারাটা সময় এমন হাসিমুখে ও আড্ডার মেজাজেই ছিলেন তামিম। তাঁকে আরেকটু সহজ করতে সঞ্চালক উৎপল শুভ্র বলেন, ‘অফিশিয়ালি আপনার বয়স ৩৬ বছরের কিছু বেশি। কিন্তু আমার কাছে তামিম ইকবালের বয়স ১৪৫ দিন।’
তামিম মুখে হাসি ধরে রেখে চোখের ভাষায় জিজ্ঞাসুর দৃষ্টিতে তাকাতেই সঞ্চালকের ব্যাখ্যা, ‘২০২৫ সালের ২৪ মার্চ (তামিমের হার্ট অ্যাটাকের দিন) আমার চোখে তামিম ইকবালের পুনর্জন্ম হয়েছে। এই নতুন জীবনটি ১৪৫ দিনের।’
ভিডিও সাক্ষাৎকারটি গতকাল প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে। অর্থাৎ ‘পুর্নজন্মে’র পর তামিমের বয়সে আরও দিন যোগ হয়েছে। তবে দিন তো আর আগের মতোই। এই ১৪৫ দিনের জীবনটা সমন্ধে জানতে চাওয়া হয়েছিল তামিমের কাছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই রান সংগ্রাহকের উত্তর, ‘খুব কঠিন। প্রথমে তো এভাবে ভাবতাম না যে কয়টায় ঘুমাচ্ছি, কয়টায় উঠছি, কতক্ষণ ঘুমাচ্ছি, যেকোনো সাধারণ মানুষের মতোই আমি এসব নিয়ে কখনো ভাবতাম না। এখন ভাবতে হয়। কতক্ষণ ঘুমাচ্ছি, সঠিক সময়ে ঘুমাচ্ছি কি না, যদিও এখনো সঠিক সময়ে ঘুমাই না।’
স্ত্রী ছাড়াও তামিমের জীবনে এসেছে নতুন সঙ্গী। শুনুন তামিমের মুখেই, ‘ওষুধ হয়ে গেছে এখন আমার আজীবনের সঙ্গী।’ হার্ট অ্যাটাকের পর জীবন নিয়ে তামিমের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টেছে, ‘অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। জীবনে যেকোনো কিছুই হতে পারে, যেকোনো সময়। জীবনকে অনিশ্চিত বলার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। আমি সেই কারণটা খুব কাছ থেকে অনুভব করেছি। আমার মনে হয় জীবনটা পাল্টেছে। কিন্তু এটাও জীবনের সৌন্দর্য যে যা কিছুই ঘটুক সামনে এগোতে হয়। আমিও সামনে এগোচ্ছি।’
তামিমের কাছে সরাসরি জানতে চাওয়া হয়েছিল, জীবনকে তাঁর দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটা কি পাল্টেছে? উত্তর শুনুন তামিমের মুখেই, ‘সত্যি বলতে আমি ধরা খেয়ে গেছি। আমি মনে করি না আমার জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। আমার মনে হয়, আমি একই রকম আছি। কিন্তু আমার স্ত্রী একটি সুবিধা পেয়ে গেছে। যেহেতু আমার শরীর খারাপ, আমি যদি ঘুমাতে চাই, কথা বলার একটা সুযোগ পেয়ে গেছে। আগে কী হতো, হয়তো বলত না কিংবা বললেও আমি শুনতাম না। এখন ওর (স্ত্রী) কর্তৃত্ব বেড়ে গেছে। ওষুধ খাও, আবার অমন হতে চাও নাকি, আবার ট্রমার মধ্যে আমাদের ফেলতে চাও নাকি...এসব আরকি। এসব দিক থেকে ব্যাপারটা পাল্টেছে। তবে একটু তো সতর্ক থাকতেই হবে। বড় একটা ঘটনা পার করে এসেছি।’
তবে তামিমের একটি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। সেটা তিনি নিজেই বললেন, ‘আমি আমার বাচ্চাদের এখন যেভাবে দেখি, সেটা একদমই আলাদা। কারণ, অনেক সময় একা বসে ভাবি, সেদিন যদি কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে এদের কী হতো?’ তামিম এ ক্ষেত্রে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা টানলেন, ‘(বাচ্চাদের ক্ষেত্রে) আমাকে ছাড়া তাদের জীবন এবং আমাকেসহ তাদের জীবন আলাদা হবে, যেটা আমি অনেক অল্প বয়সে অনুভব করেছি। আমার বাবা থাকতে জীবনটা যেমন ছিল, আর বাবা না থাকতে জীবনটা যেমন—বিশাল পার্থক্য।’