Image description
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি একাডেমিক স্থাপনার মূল ফটকে তালা ঝুলিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিএসএল)। আগামী ১৩ নভেম্বরের ঘোষিত ‘লকডাউন কর্মসূচি’র অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।

 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাটিকে গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাতের অন্ধকারে চারুকলা অনুষদ, ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইইআর), পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, কার্জন হল গেট এবং বিজ্ঞান ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফটকের শিকলে সাদা কাগজে “লকডাউন বিএসএল” লিখে টানানো হয়।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিজেরাই প্রকাশ করেন নিষিদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন।

 

তিনি তার পোস্টে লেখেন, “১৩ তারিখ সারাদিন, লকডাউন সফল করুন। লকডাউন বিএসএল- চারুকলা অনুষদ, আইইআর, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, কার্জন হল গেইট, বিজ্ঞান ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”

 

একই ছবি নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এইচ এম আল আমিন আহমেদ লেখেন, “দেখে শান্তি পেলাম! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লকডাউন, বিএসএল। ১৩ তারিখ সারাদিন, লকডাউন সফল করুন।”

 

তিনি আরও লেখেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার সূতিকাগার। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাত থেকে মুক্ত করে সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে।”

 

এদিকে, ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পাঁচজন নিরাপত্তা প্রহরীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তারা হলেন- আইইআরের শাহ আলম ও মো. সেলিম, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সফিকুল ইসলাম, কার্জন হলের আলী আহমেদ এবং চারুকলা অনুষদের মাঝের ফটকের সংগ্রাম হোসেন।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, “যেসব গার্ড এসব গেটে দায়িত্বে ছিলেন, তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সহকারী প্রক্টররা ঘটনাস্থলে গেছেন এবং সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

 

অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “তালা লাগানোর ঘটনাটি সত্য। সকালে তালাগুলো খুলে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে এবং তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

 

ক্যাম্পাসে হঠাৎ রাতের এ ধরনের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকার দাবি জানিয়েছেন।

 

এদিকে নিষিদ্ধ ও বিতাড়িত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম জানিয়েছেন, “নিষিদ্ধ ও বিতাড়িত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্মূল এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির মূলোৎপাটনে আজ ও আগামীকাল আমরা ডাকসু মাঠে থাকব। সকল শিক্ষার্থীকে দেশবিরোধী আওয়ামী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দলবেঁধে নামার আহ্বান জানাচ্ছি।”

 

তিনি আরও জানান, বুধবার রাত ৮টায় ডাকসু ভবনের সামনে গণজমায়েত, রাত ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল এবং পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।