যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে ঘিরে একের পর এক বিতর্ক ট্রাম্প প্রশাসনে চাপ তৈরি করছে। ইয়েমেনে হামলার আগে সেনা অভিযানের তথ্য ‘সিগন্যাল’ অ্যাপে শেয়ার, প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী সন্দেহে লক্ষ্যবস্তু করা নৌকায় প্রথম দফার হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা- এসব ঘটনা ঘিরে হেগসেথের পদত্যাগের দাবিও জোরালো হচ্ছে।
ফক্স নিউজের সহ-উপস্থাপক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে আসা সাবেক ন্যাশনাল গার্ড মেজর হেগসেথ বিতর্কের সঙ্গে অপরিচিত নন। এ বছরের শুরুতে মার্কিন সিনেটে অল্প ভোটে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে অনুমোদন পান।
মাদকবাহী সন্দেহে লক্ষ্য করে ভেনেজুয়েলার নৌকায় হামলা, বিশেষ করে প্রথম হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া দুজনকে পরবর্তী হামলায় হত্যা ও ইয়েমেনে হামলার আগে বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপ সিগন্যালে স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য শেয়ার করার অভিযোগে হেগসেথের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র উপদেষ্টা ও সাবেক মেরিন কর্নেল মার্ক ক্যানসিয়ান বলেন, তিনি আবারও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। আসলে তার দুটি বড় ‘অপরাধ’ এখন এক জায়গায় এসে মিশেছে। তবে এসব ঘটনায় রিপাবলিকানদের কিছু অংশের সমর্থন হারালেও ট্রাম্পের আস্থা এখনো তার প্রতি আছে বলে মনে হয়।
ওবামা প্রশাসনের সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জিম টাউনসেন্ড বলেন, হেগসেথ এখন ‘পাতলা বরফের’ ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তার ভাষায়, ট্রাম্প এমন একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেয়েছেন, যিনি তার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
টাউনসেন্ড মনে করেন, রিপাবলিকানদের বড় একটি অংশ যদি কোনো ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ হয়, বা ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ধারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে, তাহলে হেগসেথকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেওয়াও হতে পারে।
জানা গেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে হেগসেথ অনুমোদন পাওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত মদ্যপান ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরও কেলেঙ্কারি তার পিছু ছাড়েনি।
চলতি বছরের মার্চে ইয়েমেনে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিগন্যাল চ্যাটে আলোচনা করছিলেন হেগসেথ। দ্য অ্যাটলান্টিকের প্রধান সম্পাদক ভুল করে সেই চ্যাটে যুক্ত হয়ে পড়েন। সেখানেই হেগসেথ জানিয়েছিলেন হামলার সময়সূচি, কোন বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হবে।
পেন্টাগনের স্বতন্ত্র পরিদর্শকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেগসেথের ওই আচরণ মার্কিন পাইলটদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করেছিল।
হেগসেথকে নিয়ে আরেক বিতর্ক শুরু হয় এই বছরের ২ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনায়। মাদকবাহী সন্দেহে একটি নৌকায় প্রথম হামলায় দুজন জীবিত ছিলেন। তবে দ্বিতীয় দফায় ফের হামলা চালিয়ে সেই দুজনকেও হত্যা করা হয়।
হেগসেথ ও হোয়াইট হাউজ দাবি করে আসছে, দ্বিতীয় হামলার সিদ্ধান্ত আসলে নেন অভিযানের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ফ্র্যাঙ্ক ব্র্যাডলি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নন।
কংগ্রেস সদস্যদের কাছে সম্প্রতি ঘটনাটির দীর্ঘ ফুটেজ দেখানো হয়েছে, যার ছোট একটি অংশই এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে এসেছে। এ নিয়ে মতভেদ তীব্র।
ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জিম হাইমস বলেন, ফুটেজে দেখা গেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী জাহাজ ডুবে যাওয়া দুইজনকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। দুষ্কৃতী হোক, তবুও তারা তখন ধ্বংস হয়ে যাওয়া নৌকার নাবিক ছিলেন।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বলেন, চারটি হামলাই ‘সম্পূর্ণ বৈধ ও প্রয়োজনীয়’ ছিল। তার দাবি, জীবিত দুজন নৌকাটি উল্টে যাওয়া অবস্থায় আবারও ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন ও লড়াইয়ে ফিরে যেতে চাচ্ছিলেন।
ডেমোক্র্যাটদের একটি অংশ এরই মধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করেছে। তবে ট্রাম্পের সমর্থন থাকায় আপাতত হেগসেথের পদ নিরাপদ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবু বিশ্লেষক ক্যানসিয়ান সতর্ক করে বলেন, এরপর যদি হেগসেথের বিরুদ্ধে আর কোনো কেলেঙ্কারির অভিযোগ আসে, তাহলে হোয়াইট হাউজ ধৈর্য হারাতে পারে। এরই মধ্যে যা ঘটেছে, তা খুবই বিব্রতকর।
শীর্ষনিউজ