Image description
 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিলসহ ভোটের সার্বিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ রবিবার কমিশন সভায় বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানা যায়, সভায় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ, মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময়, লোকবল, ভোটের সময় বৃদ্ধি ও বুথ বাড়ানো, বাজেট, তফসিল ঘোষণার দিন ও সময় চূড়ান্ত হবে। তবে কমিশন সভায় নির্বাচনের তারিখসহ সার্বিক বিষয় চূড়ান্ত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করা হবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার প্রাথমিক প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন। এই কমিশন সভায় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য সময় ও বুথ বাড়ানো, তফসিল ঘোষণা, বাজেট, মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় ও ভোটের তারিখ নিয়ে পর্যালোচনা হবে। ভোটের কাজের সার্বিক বিষয়ে অগ্রগতির পাশাপাশি পোস্টাল ভোটিংয়ের ব্যালট পেপার আনা-নেওয়ার সময়ও চূড়ান্ত হবে এ সভায়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। এর পরে প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ভোটের সার্বিক দিকে তুলে ধরবে নির্বাচন কমিশন। এরপর তফসিল ঘোষণা করা হবে। জানা গেছে, ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি রাখছে কমিশন। ওই দিন জাতির সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে চূড়ান্ত করা তফসিল তুলে ধরতে পারেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন।

Kiswan

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১০ বা ১১ ডিসেম্বর এ সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসির একজন কমিশনার। প্রথা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

 

ইসি এরই মধ্যে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে এবং ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনও সম্প্রতি বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়েই তফসিল ঘোষণা হবে।’ তিনি জানান, ‘গণভোট বিষয়ে এখনও তেমন প্রচার শুরু হয়নি। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে বড় ধরনের প্রচার চালাবে।’

এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, কমিশন সভায় তফসিলের সময়সূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তা চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ‘রবিবারের বৈঠকের পর ওই সপ্তাহের যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করা হবে।’ 

ইসি সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে (৮ ডিসেম্বর, ৯ ডিসেম্বর, ১০ ডিসেম্বর কিংবা ১১ ডিসেম্বর) সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর ভোটগ্রহণ হবে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে (৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যে যেকোনো একদিন)।

রবিবারের সভায় ১০ এজেন্ডা : এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে আজ রবিবারের কমিশন সভায় ১০টি এজেন্ডা রাখা হয়েছে। আইন ও রীতির আলোকে তফসিল-পূর্ব ও তফসিল-উত্তর কার্যক্রমসমূহ এক নম্বর এজেন্ডায় রাখা হয়েছে। গণভোট আয়োজনসহ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির সর্বশেষ অবস্থা এজেন্ডার দুই নম্বরে রাখা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সর্বোচ্চ যোগাযোগ, মতবিনিময় ও সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়াদিসহ ১০টি এজেন্ডা রাখা হয়েছে।

কমিশন সভার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেহেতু প্রধান নির্বাচন কমিশনার এরই মধ্যে জানিয়েছেন তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করা হবেÑ তাই এই বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ওই দিন ঘোষণা করা হবে না। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।’

ছুটির দিনেও বৈঠকে ইসি : এদিকে আজকের কমিশন সভাকে সামনে রেখে গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশনে প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আজও (শনিবার) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের জন্য ব্যালটবাক্স, লোকবলসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো কিছু চূড়ান্ত করা হয়নি।’

অন্যদিকে গতকাল শনিবার বিকালে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এক কর্মশালায় ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি পুরো মাত্রায় থাকলেও তফসিল কবে ঘোষণা হবে, সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।’

কর্মশালায় নির্বাচন আয়োজনে ইসি পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। এ সময় নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ইসি জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করি, সঠিক তথ্যটা দেন...নিশ্চয়ই নির্বাচনের ব্যাপারে জোর প্রস্তুতি চলছে।’

দেশের ভেতরের পোস্টাল ভোটের নিবন্ধন শুরু তফসিলের পর : আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ও সরকারি কর্মচারীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নিবন্ধন করতে পারবেন। গতকাল শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে বসবাসরত নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ভোটার, নিজ এলাকার বাইরে থাকা সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। বিস্তারিত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে জানা যাবে। এদিকে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে প্রবাসীদের নিবন্ধনের সময়সীমা ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ প্রবাসী তাদের নাম নিবন্ধন করেছেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে ভোট দানের জন্য পোস্টাল ভোট বিডিতে ঠিকানা সংশোধনের শেষ সময় শেষ হয়েছে। নিবন্ধনের সময় ভুল ঠিকানা দিয়ে থাকলে ভোটারের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বা প্রয়োজনে কর্মস্থল বা পরিচিতজনের ঠিকানা যথানিয়মে প্রদান করে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।