এখনকার অধিকাংশ শিশুর হাতে স্মার্টফোন থাকে। যদিও স্মার্টফোন শিশুদের নিরাপদ রাখা এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে সুবিধা প্রদান করতে পারে, তবুও বিজ্ঞান বলে যে খুব অল্প বয়সে স্মার্টফোন দেওয়া শিশুর জন্য বেশ কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে।
পেডিয়াট্রিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১২ বছর বয়সের আগে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করে তাদের স্থূলতা, বিষণ্ণতা এবং ঘুমের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদিও গবেষণাটি এই সমস্যাগুলোর জন্য সরাসরি স্মার্টফোনের দায়বদ্ধতা প্রমাণ করেনি, তবে এটি স্পষ্টভাবে একটি সম্পর্ক দেখায়।
মার্কিন কিশোর মস্তিষ্কের বিকাশ (ABCD) গবেষণায় ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১০,০০০ এরও বেশি শিশু-কিশোরের ওপর দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই গবেষণায় ১২ বছর বয়সে প্রথম স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করা শিশুরা তাদের ফোন না থাকা সমবয়সী শিশুদের তুলনায় ৩০% বেশি বিষণ্ণতা, ৪০% বেশি স্থূলতা এবং ৬০% বেশি ঘুমের অভাবের সম্মুখীন হয়।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, যারা অল্প বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক অবস্থার উন্নতি এবং ঘুমের স্বাভাবিক রুটিনে সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষত ১২ বছর বয়সের আগে ফোন ব্যবহার শুরু করার কারণে শিশুদের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক বিকাশে বাধা তৈরি হয়।
গবেষণার প্রধান লেখক জানিয়েছেন যে, ১২ এবং ১৬ বছর বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও মানসিক অবস্থা একে অপর থেকে ভিন্ন। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মধ্যে স্থূলতা বাড়িয়ে দেয়, কারণ তারা ভিডিও দেখা, গেম খেলা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় কাটায়, যা তাদের শারীরিক গতিশীলতা কমিয়ে দেয়।
এছাড়া, স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার ফলে অতিরিক্ত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয় খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা স্থূলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিষণ্ণতা সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১২ বছর বয়সের আগে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করেছে, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার হার বেশি (৬.৫%)। এর কারণ হতে পারে, অনলাইনে অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা, সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়া এবং সামাজিক আলোচনা থেকে বাদ পড়ার অনুভূতি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, ১২ বছর বয়সে প্রথম স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করা শিশুদের ঘুমের মান খারাপ হয়ে যায়। স্ক্রিন টাইম এবং নীল আলো রাতে মেলাটোনিন উৎপাদনে বাধা দেয়, যার ফলে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই ঘুমের সমস্যা, বিষণ্ণতা এবং স্থূলতার সমস্যা একে অপরকে আরও তীব্র করে তোলে।
এভাবে, গবেষণাটি দেখায় যে, ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে ফোন ব্যবহার শুরু করলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ঘুমের মান খারাপ হতে পারে, এমনকি যারা কখনো ফোন ব্যবহার করেনি তাদের তুলনায় এই সমস্যা আরও বড় হয়ে ওঠে।