Image description
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে সামনে জাতীয় নির্বাচন। সাধারণত নির্বাচনের আগে ও পরে পুঁজিবাজার চাঙ্গাভাব থাকে। তবে আর্থিক খাতে লুটের ভয়াবহ চিত্রের কারণে সতর্ক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এতে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন ধারাবাহিকভাবে কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ১৪২ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারের টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বন্ধ কোম্পানি থেকে শুরু করে লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর হুহু করে বাড়ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৪১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৩২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৪২ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ ছাড়া গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৪৫টি কোম্পানির। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২৫টির। আর ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী কালবেলাকে বলেন, বিগত সরকারের সময় আর্থিক খাতে দুর্নীতি ও ব্যাংক লুটের কারণে ৫ ব্যাংক ও ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্যানিক তৈরি হয়েছে, যার কারণে বিনিয়োগে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন অনেকে। এ ছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন। তারা নির্বাচনের বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে। যার কারণে ব্যাংকের সুদহার অপরিবর্তিত থাকার পরও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আসছে না বলেও জানান তিনি।

বাজার বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর দাম বাড়ার তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জিলবাংলা সুগার মিল। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বাড়ার কারণে ডিএসইর পক্ষ থেকে চিঠি দিলে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, শেয়ারের দর বাড়ার কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৫-২৬ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৭ টাকা ৯১ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ১৯ টাকা ৯৫ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬৭ টাকা ১০ পয়সায়। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭৮ টাকা ৮৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৭৪ টাকা ৩৯ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৫ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ টাকা ১৯ পয়সায়। টালমাটাল পুঁজিবাজারে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হুহু করে বাড়ছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিডি থাইফুডের শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও দাম বেড়ে চলেছে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা এখন বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ারদর বাড়া শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে পাঁটিই জেড ক্যাটাগরির বা দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। সপ্তাহের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১০ দশমিক ৬০ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৭০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দর বেড়েছে ৫৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অথচ কোম্পানিটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। দর বাড়ার তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড। এ ছাড়া তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, কেটিএলের ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, কেপিপিএলের ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, শেপার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ, ডিবিএইচ আইএসটি মিউচুয়াল ফান্ডের ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং তাল্লু স্পিনিংয়ের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া দরপতনের তালিকা বড় হওয়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।