Image description
কারসাজি অব্যাহত, সরকারের তদারকি নেই

দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে কৃষকের নতুন পেঁয়াজও বাজারে আসতে শুরু করেছে। এরপরও ভরা মৌসুমে আড়তদারদের সিন্ডিকেটে অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বাজার। এদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আজ রোববার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি না করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক।

জানা যায়, ওই চক্র সেপ্টেম্বর থেকেই মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি শুরু করে। এদের কারসাজিতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরপরও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় শনিবার পাইকারি পর্যায়ে এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ফের ৪৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়, যা একদিন আগেও ১২০ টাকা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বাজারসংশ্লিষ্টরা খুচরা পর্যায়ে আরেক দফা দাম বৃদ্ধির শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এরপরও প্রশাসন নীরব বলে অভিযোগ উঠেছে। পেঁয়াজের ঘাটতির কথা বলে আমদানিকারকরা আমদানির অনুমতি চাচ্ছেন। ঘাটতির অজুহাতে তারা দামও বাড়াচ্ছেন। তবে কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সংকট নেই, তাই কৃষকদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এতদিন পেঁয়াজ আমদানি করতে দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। কারসাজির মাধ্যমেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। কমিশন জানায়, গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে বাজারে এসেছে ৩৩ লাখ টনের মতো। এছাড়া একই সময়ে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানিও হয়েছে।

এদিকে এতকিছুর পরও বাজার সহনীয় রাখতে আজ থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের আমদানির অনুমোদন থাকবে। শনিবার রাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত যেসব আমদানিকারক রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই শুধু আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। শনিবার রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ঘুরে এবং আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পুরোনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮২৫ টাকা, যা কেজিপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় ১৬০-১৬৫ টাকা। একদিন আগেও ১২০ টাকা ছিল। এছাড়া পাঁচদিন আগে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। এই পেঁয়াজ এক মাস আগে শ্যামবাজারে পাইকারি আড়তে বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি।

অন্যদিকে রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, জিনজিরা কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজারে খুচরা দোকানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা, যা এক দিন আগেও একই দাম ছিল। তবে তিন দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ছিল। অক্টোবরের শেষদিকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সেপ্টেম্বরে কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

জিনজিরা কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. হাকিম বলেন, শুক্রবার পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনেছি, তা শনিবারও বিক্রি করছি। তবে শুনেছি পাইকারি বাজারে আড়তদাররা ফের পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। এই খুচরা বিক্রেতা বলেন, এখন দাম বাড়ার কথা না। কারণ বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে এসেছে। পাশাপাশি আগের পেঁয়াজেরও মজুত আছে। তবে আড়তদাররা খুচরায় পেঁয়াজ কম করে ছেড়ে দাম বাড়াচ্ছেন। তবে আমি বিক্রেতা হয়ে বলছি, আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

এদিকে শ্যামবাজার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ বলেন, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। তাই বাড়ছে দাম। দুই মাস ধরে আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চাচ্ছি। কিন্তু এখনো সরকার অনুমতি দেয়নি। প্রতিবেশী দেশে পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১০ টাকা। অনুমতি পেলে সব খরচ মিলিয়ে আমরা ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারতাম। এতে বাজার স্বাভাবিক হয়ে যেত।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। তারা পেঁয়াজ মজুত করছে, বাজারে ছাড়ছে না। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারকে আমদানির অনুমতি দিতে চাপ দিচ্ছে। সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে। কিন্তু সরকারসংশ্লিষ্টদের এদিকে তদারকির কোনো বালাই নেই। তিনি জানান, এমন সময়ে পেঁয়াজ আমদানি হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন বলেন, আমদানির কথা সামনে এনে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু চক্র। উদ্দেশ্য বাড়তি মুনাফা করা। তবে প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।