Image description

ঢাকা-১৩ আসনে (মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর) প্রার্থী হচ্ছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। এসব এলাকা তাঁর রিকশা মার্কার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের কর্মীরা অন্তত ২০ হাজার পোস্টার লাগিয়েছেন।

খেলাফত মজলিসের আমিরের পাশাপাশি মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন করলে তিনটি আসনের যেকোনো একটিতে করবেন। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনের কথাও বলেছেন মামুনুল। এর বাইরে জন্মস্থান ঢাকা-৭ অথবা নানাবাড়ি বাগেরহাট-১ আসন।

খেলাফত মজলিস বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি দলের সঙ্গে পাঁচ দফা দাবির যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, আট দলের সঙ্গে তাঁর দলের কোনো নির্বাচনী সমঝোতা হয়নি। তারা পাঁচ দফার অভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই মামুনুল হকের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা যোগাযোগ রেখে আসছিলেন। এতদিন শোনা যাচ্ছিল, রাজধানী থেকে নির্বাচন করলে মামুনুল হক ঢাকা-১৩ অথবা ঢাকা-৭ আসন থেকে করতে পারেন। বিএনপি আসন দুটি ফাঁকা রাখার পরে এই আলোচনা আরো পোক্ত হয়। তবে গত ৪ ডিসেম্বর লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর (আংশিক) ও কোতোয়ালি (আংশিক) এলাকা নিয়ে ঢাকা-৭ আসনে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। ওই দিন রাতেই ঢাকা-১৩ আসনে মামুনুল হকের রিকশা মার্কার পোস্টার সাঁটানো হয়।

পোস্টারে কোনো নির্বাচনী আসন বা এলাকা উল্লেখ নেই। নীল-সবুজ পোস্টারের মাঝ বরাবর দলীয় প্রতীক, এক কোণায় স্লোগান এবং একেবারে নিচে বড় অক্ষরে লেখা মামুনুল হক।

ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনতে আগামী নির্বাচনে তারা ‘এক আসন, এক প্রার্থী’ নীতিতে এগোচ্ছে। এটি হলে একটি আসনে সমঝোতায় একজন প্রার্থীই নির্বাচন করবেন। তাঁকে সমর্থন দেবে জোটের সব দল। এটি হলে ঢাকা-১৩ থেকে সরে যেতে পারেন মোবারক হোসাইন। সেখানে নির্বাচন করবেন মামুনুল হক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খেলাফত মজলিসের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক নেতা স্ট্রিমকে বলেন, গত মাসে দুদিনে প্রায় ১৫ হাজার ভোটারের মতামত নিয়ে সমীক্ষা করেছি। প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ মাওলানা মামুনুল হককে ঢাকা-১৩ আসনে প্রার্থী চেয়েছেন। এরপরই এই আসন থেকে আমিরের নির্বাচন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক হাসান জুনায়েদ স্ট্রিমকে বলেন, ঢাকা-১৩ আসন থেকেই মামুনুল হক নির্বাচন করবেন। এ ব্যাপারে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। শিগগির ঘোষণা আসতে পারে।

একই আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন। এ ব্যাপারে জামায়াত এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। মোবারক হোসেন স্ট্রিমকে বলেছেন, ‘উনি (মামুনুল হক) যে পোস্টার সাঁটিয়েছেন, সেখানে কোনো এলাকার উল্লেখ করেননি। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। যে কেউ তাঁর দলের পোস্টার লাগাইতেই পারেন। এ ব্যাপারে দলে কোনো আলোচনা হয়নি। আসন ছাড়া তো পরের কথা। আলোচনাই হয়নি।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর রোডে পোস্টার ঝুলছে মামুনুল হকের। স্ট্রিম ছবি
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর রোডে পোস্টার ঝুলছে মামুনুল হকের। স্ট্রিম ছবি

মোহাম্মদপুরে মামুনুল হকের প্রভাব

মামুনুল হকের খেলাফত মজলিস কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। ঢাকা-১৩ আসনের মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর এলাকায় বেশ কিছু কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে মামুনুল হকের পরিবারের রয়েছে একটি বড় মাদ্রাসা।

মোহাম্মদপুরের ঐতিহ্যবাহী সাত মসজিদ সংলগ্ন প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মামুনুল হক। এর বর্তমান পরিচালক তাঁর বড় ভাই মাওলানা মাহফুজুল হক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’র মহাসচিব। তাঁদের বাবা প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকও জামিয়া রাহমানিয়া এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন। ফলে সারাদেশেই পরিবারটির বেশ প্রভাব রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব মোহাম্মদপুর ও আদাবরে।

এ কারণে সমঝোতা অনুযায়ী জামায়াতের নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে মামুনুল হকের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন আট দলের নেতারা। ২০০৮ সাল থেকে আসনটিতে জয়ের আসনে ছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি তুলনামূলক দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।

জোটের রাজনীতিতে নানা সমীকরণ

গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এর একদিন পরই মাদারীপুর-১ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এখন পর্যন্ত ২৮ আসনে প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ রয়েছে। এখানে বিএনপি জোট থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।

আমাকে অনেকেই বলেন– ঢাকা-১৩ আসনে জামায়াতের অত্যন্ত পটেনশিয়াল জায়গা। ছয় মাস ধরেই প্রতিদিন ৫-৭টা প্রোগ্রাম করি। আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে আমি চেষ্টা চালাচ্ছি। মানুষের রেসপন্স খুবই ভালো। বাকি সিদ্ধান্ত দলের। এই আসনের জন্য আমি জামায়াতকে বলি নাই আমাকে প্রার্থী দেন। আমাকে অর্ডার করেছে আমি দাঁড়ায়া গেছি। আমার নিজস্ব কোনো ডিজায়ার নেই এখানে। মোবারক হোসাইন, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য

এর মাঝে এই এলাকায় নিজ দলীয় প্রতীকে মামুনুল হকের পোস্টার সাঁটানোকে বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে গত কয়েক মাস ধরে এক মঞ্চে আন্দোলন করা আট দল থেকে আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত আলাপ চলছে। তফসিল ঘোষণার পরে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার কথা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন আট দলের সমন্বয়ক ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

ঢাকা-১৩ আসনে প্রায় এক বছর ধরে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে আসছেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন। মোটর সাইকেল শোভাযাত্রাসহ একাধিক শোডাউন করেছেন তিনি। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আট দলের ভেতর নির্বাচনী সমঝোতার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আন্দোলনে থাকা দলগুলো বলছে, ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনতে আগামী নির্বাচনে তারা ‘এক আসন, এক প্রার্থী’ নীতিতে এগোচ্ছে। এটি হলে একটি আসনে সমঝোতায় একজন প্রার্থীই নির্বাচন করবেন। তাঁকে সমর্থন দেবে জোটের সব দল। এটি হলে ঢাকা-১৩ থেকে সরে যেতে পারেন মোবারক হোসাইন।

মোবারক হোসাইন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাকে অনেকেই বলেন– ঢাকা-১৩ আসনে জামায়াতের অত্যন্ত পটেনশিয়াল জায়গা। ছয় মাস ধরেই প্রতিদিন ৫-৭টা প্রোগ্রাম করি। আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে আমি চেষ্টা চালাচ্ছি। মানুষের রেসপন্স খুবই ভালো। বাকি সিদ্ধান্ত দলের।’

জামায়াত সাংগঠনিকভাবে নির্দেশ দিলে প্রার্থিতা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে উদারতা দেখাতে কার্পণ্য করবেন না বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে মোবারক হোসাইন বলেন, ‘এই আসনের জন্য আমি জামায়াতকে বলি নাই আমাকে প্রার্থী দেন। আমাকে অর্ডার করেছে আমি দাঁড়ায়া গেছি। আমার নিজস্ব কোনো ডিজায়ার নেই এখানে।’