Image description

বহু টালবাহানা ও আইনি লড়াইয়ের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে এনেছে ভারত সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মালদহের মহদীপুর সীমান্ত দিয়ে পুলিশ ও বিএসএফ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তারা ভারতে প্রবেশ করেন বলে সরকারি সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মনোজ কুমার যাদব। তবে, বাকি চারজন ফেরত না আসায় ডেপুটি হাইকমিশনারকে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। বিজিবি’র লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এক বিবৃতিতে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায় ফ্ল্যাগ মিটিং করে সোনালীদের বিএসএফের হাতে তুলে দেয়া হয়।

গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল যে, সোনালী বিবি এবং তার আট বছরের শিশুকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হোক এবং সরকার মানবিক কারণে তা করতে সম্মত হয়েছিল। গত ২৭শে জুন দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার অভিযোগে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর খাতুন, তার স্বামী দানিশ শেখ এবং তাদের আট বছরের ছেলেসহ ছয়জনকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া  হয়। এরপর তাদের অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে তারা বাংলাদেশের কারাগারে ছিলেন। তবে, সোনালীর স্বামীসহ আরও চারজন এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন বলে পরিবারের দাবি।

সোনালীর বাবা ভদু শেখ ভারতীয় নাগরিক দাবি করে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে আদালতে মামলা করেন। কলকাতা হাইকোর্ট চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেও ভারত সরকার তা মানেনি। পরে সুপ্রিম কোর্ট সোনালীকে সুপুত্র ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশের দুই দিন পর ফিরিয়ে আনা হলো সোনালীকে। ভারতে আনার পরই সোনালীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোনালী বলেন, দেশে ফিরে ভালো লাগছে।

বিএসএফকে সীমান্ত নিয়ে সংযত থাকার বার্তা বিজিবি’র 
ওদিকে ভারতীয় নাগরিক সোনালী বিবিকে ফেরত পাঠানো নিয়ে বিজিবি’র ৫৯ মহানন্দা ব্যাটালিয়নের তরফে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে সোনালী বিবির ঘটনাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের অমানবিক পুশইনের শিকার উল্লেখ করে সংযত থাকার বার্তা দেয়া হয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত দিয়ে পুশইনের তীব্র সমালোচনা করে বিবৃতিতে কিবরিয়া বলেছেন, বিএসএফের পুশইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। 

বিজিবি’র তরফ থেকে আশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পুশইনসহ সব ধরনের অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কার্যকলাপ বিএসএফ বন্ধ করবে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে সীমান্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ, মানবিক ও আইনসম্মত প্রক্রিয়া বজায় রাখতে বিএসএফের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানানো হয়েছে।

সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন সময়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার অভিযোগে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিএসএফ অবশ্য সব সময় বলে এসেছে আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।