Image description

’২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার ১ বছর ৪ মাস পর পরিচয় শনাক্তের জন্য অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন করা ১৮২ জুলাই শহীদের লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর আজ (রোববার) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার কবরস্থানের ৪ নম্বর ব্লক থেকে লাশগুলো উত্তোলন শুরু করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকালে রায়েরবাজার কবরস্থান এলাকা পরিদর্শন করে সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিট। সিআইডি’র পক্ষ থেকে পুরো গণকবর এলাকা হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন এবং নমুনা সংগ্রহের জন্য অস্থায়ী ঘর বানানো হয়েছে। সেখানেই লাশগুলোর ময়নাতদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে আবারো মরদেহগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে। আর অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন হওয়া এসব শহীদদের পরিচয় শনাক্তের এই পুরো প্রক্রিয়ায় সিআইডি সদস্যদের সহায়তা করবে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ইউনিট। মরদেহ উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অন্তত এক মাস বা তারও বেশি সময়ও লাগতে পারে।

সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন হওয়া জুলাই শহীদদের পরিচয় শনাক্তে তাদের লাশ উত্তোলনের জন্য আমরা অনেকদিন ধরেই প্রিপারেশন নিচ্ছি। এজন্য আমাদের ক্রাইম সিন ইউনিট মাঝেমধ্যেই রায়েরবাজার কবরস্থানে যান। আমাদের প্রিপারেশন সমাপ্তির পর্যায়ে। সব ঠিক থাকলে রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ’র উপস্থিতিতে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন শুরু হবে। আর এই কাজে আমাদের সাহায্য করবেন প্রখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. লুইস ফাউন্ডাব্রিডার। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ জনকে রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। যে জায়গায় তাদের দাফন করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সে জায়গাটি বিশেষভাবে মার্বেল পাথর, টাইলস দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গায় মোট ১৮২ জনের লাশ বেওয়ারিশভাবে দাফন করা হয় সে সময়।  আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এসব লাশ উত্তোলন করে তাদের ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণ করে লাশগুলোর পরিচিতি ও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা হবে। লাশগুলো উত্তোলনের পর ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা নিয়ে আবার যথাযথ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হবে।  

এর আগে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ১১৪ ব্যক্তির মরদেহ শনাক্ত করার জন্য মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম আদালতে আবেদন করেন। তার ওই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গত ৪ঠা আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান কবর থেকে বেওয়ারিশভাবে দাফন হওয়া লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ২০শে সেপ্টেম্বর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘এখনো শনাক্ত হয়নি ১১৪ বেওয়ারিশ লাশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়- রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ৪ নম্বর ব্লকের ৩৭ নম্বর লেনে সারিবদ্ধভাবে দাফন করা রয়েছে জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ জনের লাশ। দাফন করা এসব কবরের পুরো জায়গা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাকা দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। দেয়ালের কালো টাইলসের উপর নামফলকে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহীদদের গণকবর’। সেখানে এক শহীদের স্বজনের কথা উল্লেখ করা হয়। ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম বলেন, গত বছরের ১৮ই জুলাই আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হন তার ছেলে সোহেল রানা। অনেক খোঁজ করার পরও সোহেলের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি ভিডিও দেখে বুঝতে পারি- ওইটা সোহেলের লাশ। এর ৩৪ দিন পর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহের নথির মধ্যে সোহেলের ছবি খুঁজে পাই। সেখান থেকে জানতে পারি রায়েরবাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে আমার সন্তানকে দাফন করা হয়েছে। এরপর থেকে অনেকবার রায়েরবাজার কবরস্থানে এসেছি কিন্তু কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ঠিক কোনটা আমার ছেলের কবর। শহীদ সোহেল রানার ভাই মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, আমার ভাই তো বেওয়ারিশ না।’  এ ছাড়াও গত এক বছরে অনেকেই সেখানে এসেছেন তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ করতে।