গত ঈদে কারাবন্দিদের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ আপ্যায়নের পর এবার শীতের শুরুতেই মাগুরা কারাগারের সব বন্দির জন্য তেলের পিঠা বানিয়েছেন মাগুরা জেল সুপার মহিউদ্দীন হায়দার।
শুক্রবার সকালে খাবারের আগে শীতের পিঠার বরাদ্দ পেয়ে কারাবন্দিরা যেমন আনন্দিত হয়েছেন তেমনি তাদের পরিবারের সদস্যরাও খাবারের বৈচিত্র্যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
প্রায় সাড়ে ১১ লাখ জনঅধ্যুষিত মাগুরা জেলায় ১৭২ জনের ধারণক্ষমতা উপযোগী হিসেবে জেলা কারাগারটিতে প্রায় প্রতিদিনই দুই থেকে তিনগুণ হাজতিকে বসবাস করতে হয়। তারপরও কারা অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত খোলামেলা পরিবেশের পাশাপাশি কারারক্ষী এবং কর্মকর্তাদের মানবিক আচরণ কারাবন্দি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে মাগুরা কারাগারটি উল্লেখযোগ্য নজির স্থাপন করেছে।
কারাগারটির দায়িত্বরত সুপার শেখ মো. মহিউদ্দীন হায়দার মাগুরায় যোগদানের পর থেকেই কারাবন্দিদের পরিবারের কাছে অত্যন্ত মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
সাম্প্রতিককালে কারামুক্তির পর মাগুরা জেলা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন হাজতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাজতি কয়েদিরা কারা অভ্যন্তরে কারারক্ষী কিংবা অন্য কোনো পক্ষের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিনা- সেটি দেখভাল করতে প্রতি মাসে বন্দি-দরবার এবং গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে বিরাজমান সমস্যা নিরসনে কারা কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হচ্ছেন বলেও তারা জানিয়েছেন। এছাড়া কারা অভ্যন্তরে অভিযোগ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে নানা সমস্যা সমাধানের ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হলেও হাজতি কয়েদিদের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন জরুরি বলে তারা জানিয়েছেন।
মাগুরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে খন্দকার সাইফুল ইসলাম নামে একজন জানান, কারাবন্দিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ ভিতরকার শৃঙ্খলা রক্ষায় জেল সুপার অত্যন্ত সচেতন এবং দায়িত্বশীল। তিনি গত ঈদে পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গেলে জেল সুপার জেলগেটে তাদের বিশেষভাবে আপ্যায়ন করেছেন। পৃথিবীর কোনো কারাগারে এমন ঘটনা অতীতে ঘটেছে কিনা জানি না।
কারামুক্ত রিয়াজুল ইসলাম নামে অপর একজন বলেন, কেবলমাত্র শীত পড়তে শুরু করেছে। আমাদের গ্রামাঞ্চলের বাড়িতেও শীতের পিঠা বানানো হয়নি। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের প্রত্যেককে ৩টি করে তেলের পিঠা খাইয়েছেন। এটি নতুন একটি দৃষ্টান্ত।
মাগুরা জেল সুপার শেখ মো. মহিউদ্দীন হায়দার কারাবন্দিদের শীতের পিঠা খাওয়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কারাগারে অপরাধ সংশ্লিষ্টরা থাকলেও আইনের মধ্যে থেকেই প্রত্যেকের ক্ষেত্রে মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। শুক্রবার মাগুরা কারাগারে থাকা ৩১৪ জন বন্দির জন্য তেলের পিঠা বানানো হয়। এর জন্য নতুন কোনো বাজেট করতে হয়নি। নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই এটি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।