ছাত্রদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগের মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শুনানি নিয়ে জামিনের আবেদন নাকচ করে শুক্রবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মেহেদী হাসান মিলন তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এরশাদ হালিমের পক্ষে তার আইনজীবী শ্যামল কুমার রায় জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
তিনি আদালতকে বলেন, ‘এ আসামি কোনোভাবে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত না। তাকে হয়রানী করতে মামলায় জড়ানো হয়েছে। কার্যত এ ধরনের কোনো ঘটনায় ঘটেনি। ঘটনা ঘটলে মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা জীবনে এরশাদ হালিম অত্যন্ত সেধাবী ছিলেন। তিনি কোনোভাবে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত না। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরীর দায়িত্বে রয়েছেন। অভ্যন্তরীন অফিসিয়াল রাজনীতির শিকার তিনি। বয়স্ক একজন মানুষ। জামিনের প্রার্থণা করছি।’ শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেয়।
মামলার বিবরণ থেকে, ভিকটিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের (২০২২-২৩) শিক্ষাবর্ষের একজন নিয়মিত ছাত্র। গত ২৬ সেপ্টেম্বর তার বিভাগের পদার্থবিজ্ঞান মাইনর ল্যাব পরীক্ষায় একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে এরশাদ হালিমের সাথে যোগাযোগ করে। এরশাদ হালিম ভিকটিমের সমস্যা সমাধান করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন এবং তার মিরপুর মডেল থানাধীন পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসায় যেতে বলে। ওই শিক্ষার্থী সরল বিশ্বাসে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে তার বাসায় যায়। বাসায় ওই ছাত্রকে যৌন নির্যাতন করেন এরশাদ হালিম। পরে সে বাসা থেকে চলে আসে। এই বিষয় কাউকে না বলতে ভয়ভীতি দেখায়।
পরদিন ওই ছাত্রকে ফোনে এরশাদ হালিম জানান, তার পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে প্রক্টর স্যারের সাথে আলোচনা করেছেন এবং তাকে বিকালের শিফটে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিবে। সেই সাথে তাকে ওই দিন পুনরায় তার শেওড়াপাড়ার বাসায় যেতে বলে। তবে তার সমকামী আচরণের কারণে ওই দিন সে তার বাসায় যায়নি। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় এরশাদ হালিম ফোন করে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে এবং দ্রুত ঢাকায় এসে তার বাসায় রাত্রি যাপন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। গত ১০ অক্টোবর ঢাকায় আসার পর ওই ছাত্র এরশাদ হালিমকে ফোন করে বাসায় যাওয়ার জন্য বললে সে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। তার বাবা অসুস্থ থাকায় এবং পরীক্ষার বিষয়টি পরিবার জানতে পারলে তার বাবা আরো অসুস্থ হয়ে যাবে মর্মে সে কোন উপায় না পেয়ে ১৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে শেওড়াপাড়ার বাসায় যেতে বাধ্য হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাকে মারধর করে, বিকৃত যৌনাচার করে। নির্যাতনে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে তাকে হলের সামনে নামিয়ে দেন এরশাদ হালিম। এ ঘটনায় শুক্রবার ওই ছাত্র শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে রাজধানীর শেওরা পাড়ার নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। পরে তাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা এজাহারভুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন ওসি সাজ্জাদ রোমন।
তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়ায় ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সমকামিতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, এ মামলায় তাকে শুক্রবার বিকেলে আদালতে তোলা হবে।