Image description

রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সীমান্তে নজরদারির দুর্বলতার সুযোগে চট্টগ্রামে অস্ত্র চোরাচালান চক্র পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অস্ত্র সহজলভ্য হয়ে ওঠায় উদ্বেগজনক মাত্রায় বাড়ছে সহিংসতা। গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১৫ মাসে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ৫০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর অধিকাংশেই ব্যবহৃত হয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে খুন হন সরোয়ার হোসেন বাবলা। এতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ইস্যু আবারও আলোচনায় এসেছে।

এদিকে, গত কয়েক মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাও উদ্বেগজনক। তাদের দাবি, বহু বছর আগের পুরনো অস্ত্রগুলো এখন আবার অপরাধী চক্রের হাতে ধরা পড়ছে। গত সোমবারও রাউজানে অভিযান পরিচালনা করে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, শতাধিক গুলি ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। গত এক বছরে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৪৩৪টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং দুটি দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া

অস্ত্রগুলোর মধ্যে কয়েকটির ব্যালিস্টিক পরীক্ষা পুরনো অপরাধ মামলার সঙ্গে মিলেছে। এটি প্রমাণ করে যে, অস্ত্রগুলো বারবার ব্যবহার ও পুনঃবিক্রয়ের মাধ্যমে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন সরবরাহ বন্ধ হলেও পুরনো অস্ত্রগুলো সংস্কার করে পুনরায় বিক্রি করা হয়। এইভাবে টিকে আছে এক প্রাতিষ্ঠানিক সহিংসতার চক্র।

সংশ্লিষ্টদের মতেÑ পাহাড়, সীমান্ত ও বন্দর ঘিরে গড়ে উঠেছে অস্ত্র বাণিজ্যের চক্র। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দুর্বল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের সুযোগে চক্রটি এখন সক্রিয়।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করছি, সেগুলো নতুন করে দেশে আনা হয়নি। এর বেশিরভাগই পুরনো। কিছু অস্ত্র এক দশকেরও বেশি পুরনো। এর মানে হলো, বহুদিন ধরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র অপরাধীদের হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান, ভারতীয়, চীনা ও তুর্কি আগ্নেয়াস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, এসব অস্ত্রের কিছু রাজনৈতিক মজুদ থেকে এসেছে, আর কিছু এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারত-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে।

চট্টগ্রামের খুনের জনপদ হিসেবে পরিচিত রাউজান উপজেলা। গত ১৩ মাসে সেখানে খুন হন ১৭ জন। গত সোমবার রাউজানে পরিচালিত এক অভিযানে পুলিশ ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল চারটি পিস্তল, একটি রাইফেল, একটি শটগান ও দুটি দেশীয় বন্দুক, সঙ্গে শতাধিক গুলির খোসা ও কার্তুজ। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে চারটি আমেরিকার তৈরি পিস্তল, যার দুটি ছিল পুলিশ কর্তৃক ইস্যুকৃত; যা আগে হারিয়ে যাওয়ার রিপোর্ট করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিম হত্যাকাণ্ডসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি অপরাধে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেনÑ সাধারণ ধারণা হলো, এসব অস্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে আসে। স্থানীয় অপরাধীরা প্রয়োজনে সেগুলো কিনে নেয়, আর অভিযান শুরু হলে তারা অস্ত্রগুলো পাহাড়ের গভীরে নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে ফেলে। আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।