গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় বয়স্ক নারী ও তার ছেলেসহ কমপক্ষে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার বেইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও জায়তুন এলাকাগুলোতে এসব হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
গাজা সিটির এক ঘটনায় একটি ড্রোনের আক্রমণে ৭০ বছর বয়সী এক নারী ও তার ছেলে নিহত হন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’জনকে লক্ষ্য করে ড্রোনটি দীর্ঘ সময় তাড়া করে এবং হামলার পর এলাকাটি নিরাপদ না হওয়ায় কেউ কাছে যেতে পারেনি।
‘ইয়েলো লাইন’-এর বাইরে অভিযান
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, পৃথক ঘটনায় তারা তিনজনকে হত্যা করেছে যারা নাকি যুদ্ধবিরতির সময় নির্ধারিত ‘ইয়েলো লাইন’ সীমানা অতিক্রম করেছিলেন। তবে স্থানীয় সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, নিহত নারী ও তার ছেলে ওই সীমারেখা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিলেন এবং সেখানে স্পষ্ট কোনো চিহ্ন নেই।
গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে তীব্র হামলা
শনিবার শুজায়িয়া এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক ভবনসহ জনপরিসরে হামলা চালায়। ট্যাঙ্ক, আক্রমণাত্মক ড্রোন ও স্থলবাহিনীর সহায়তায় বড় ধরনের অভিযান শুরু হলে বহু বাসিন্দা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। ইসরায়েলি বাহিনী শহরের পূর্বাংশে বালুর বাঁধ নির্মাণ করছে বলেও জানা গেছে।
সালাহুদ্দিন সড়কের পশ্চিমাংশে ইসরায়েলি বাহিনী ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার রিপোর্টাররা।
যুদ্ধবিরতি ‘সঙ্কটময় পর্যায়ে’
দোহা ফোরামে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি বলেন, গাজার যুদ্ধবিরতি “গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে” রয়েছে। যদি স্থায়ী সমাধানের দিকে নতুন করে অগ্রগতি না হয়, তা ভেঙে পড়তে পারে।
সৌদি আরবের এক কূটনীতিকও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনার মতো কোনো সঙ্গী পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রাণহানি বাড়ছে, মানবিক সঙ্কট তীব্রতর
অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৬৭ জন নিহত ও ৯৫৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন পর্যন্ত ৬২৪ মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহতদের মধ্যে ৭০ জন শিশু রয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে।
শীত নেমে আসার সাথে সাথে মানবিক সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ইসরায়েলি সংস্থা বি’তসেলেম বলেছে, সামগ্রী প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে হাজারো শিশু এখনো গ্রীষ্মকালীন পোশাকে ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। গত মাসের ঝড়ে প্রায় ১৩ হাজার তাঁবু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজার প্রতি চারটি পরিবারের একটি দিনে মাত্র একবার খাবার পাচ্ছে এবং ১০ শতাংশ পরিবার গত মাসে অন্তত একদিন পুরোপুরি না খেয়ে ছিল। জরুরি মানবিক তহবিলেরও মাত্র ৪০ শতাংশ পাওয়া গেছে।
রাফাহ ক্রসিং সীমাবদ্ধতার প্রস্তাবে আপত্তি
মিশর ও কাতারসহ আটটি মুসলিম-প্রধান দেশ ইসরায়েলের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে, যেখানে রাফাহ সীমান্ত কেবল একমুখী করে গাজা থেকে বের হওয়ার পথ হিসেবে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। দেশগুলো বলেছে, এমন পদক্ষেপ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি বাড়াতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করবে।