Image description

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখন এক সংকটাপন্ন মুহূর্তে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জসিম আল থানি। তিনি বলেন, স্থায়ী শান্তির দিকে দ্রুত অগ্রগতি না হলে এই প্রক্রিয়া ভেঙে পড়তে পারে। দোহা ফোরামে শনিবার তিনি বলেন, সরেজমিনে যা চলছে, তা আসলে সত্যিকারের যুদ্ধবিরতি নয়, মাত্র একটি বিরতি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

কাতারি প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনিদের চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এগুলোর কোনোটিই এখনও অর্জিত হয়নি।

ফোরামে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানও একই সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সময়মতো হস্তক্ষেপ না করলে শান্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্থবির হয়ে যেতে পারে। জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে হামাস অধিকাংশ অঙ্গীকার পূরণ করেছে। জীবিত সব জিম্মি এবং মৃতদের দেহাবশেষ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কেবল একজনের মরদেহ গাজায় রয়েছে।

এই সতর্কবার্তাগুলো এসেছে এমন সময়ে, যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত সাত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা প্রায় ৬০০ বার ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল অন্তত ৩৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে ৭০ জনেরও বেশি শিশু রয়েছে। ইউনিসেফ বলেছে, যুদ্ধবিরতি শিশুদের নিরাপত্তায় পরিণত হতে হবে, নয়তো আরও প্রাণহানি ঘটবে।

ফিদান জানান, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (আইএসএফ) তুরস্ককে যুক্ত করতে কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ আগ্রহী। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তা চান না। তিনি তা প্রকাশ্যেই বলেন। 

নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্ট আইডে আরও জরুরি সুরে বলেন, আন্তর্জাতিক বাহিনী ও শান্তি পরিষদ এই মাসেই গঠন করতে হবে। তার দাবি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে দায়িত্ব পালনে বিলম্বের সুযোগ দিচ্ছে।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি প্রস্তাব করেছেন, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে দ্রুত গাজার ইয়েলো লাইন-এ মোতায়েন করা উচিত। তিনি বলেন, ইসরায়েল প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং এর দায় অন্য পক্ষের ওপর চাপাচ্ছে। শীত ঘনিয়ে আসায় আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আরও বাড়ছে। ইসরায়েলের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে মিসর ও কাতারসহ আটটি মুসলিম দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের রাফাহ ক্রসিং শুধু ফিলিস্তিনিদের বের হওয়ার জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি পরিকল্পনার বিরোধী এই একমুখী ব্যবস্থা ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী বাস্তুচ্যুতি ঘটাতে পারে। কারণ এতে কেবল বের হওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু ফিরে আসা ও মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ থাকবে।

সৌদি আরবের প্রতিনিধি মানাল রাদওয়ান বলেন, গাজার সংকটকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখলে ভুল হবে। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের বৃহত্তর সংগ্রামের সঙ্গে এটি গভীরভাবে যুক্ত। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংঘাতের মূল কারণ নিরসন না হলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ও রাজনৈতিক অবসাদ তৈরি হবে।

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন, টেকনোক্র্যাট ফিলিস্তিনি সরকার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং ইসরায়েলের পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এগুলেঅ এখনও শুরু হয়নি। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ১২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।