Image description

এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কমছে না। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর)  মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষ থেকে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘বিএনপির চেয়ারপারসন চিকিৎসা নিতে পারছেন। সমন্বিত মতামতের পর তাকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কিনা, সে বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।’’ এখন মেডিক্যাল বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেয় সবাই সেই অপেক্ষায় আছেন।

এদিন সন্ধ্যায় এভারকেয়ারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে গেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান।

এরই মধ্যে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে এসএসএফের নিরাপত্তা পেতে শুরু করেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী দুপুর থেকেই হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বেড়েছে।

তবে কিছু অযাচিত উপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কতিপয় অখ্যাত গণমাধ্যম। সেখানে উপস্থিত কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তিকে খালেদা জিয়ার বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করছেন তারা। সেই ভিডিও আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে।

দলীয় নির্দেশে ভিড় কমেছে নেতাকর্মীদের, বাড়ছে অযাচিত উপস্থিতি 

গত ২৩ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরদিন থেকে সেখানে উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। তাদের নিবৃত করতে রীতিমতো কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদেরও হিমশিম খেতে হয়। তবে সোমবার (১ ডিসেম্বর) দলীয় হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি ভিড় না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের সামনে সাধারণ মানুষের ভিড় আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় নেতারাও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন।

তবে সাধারণ নেতাকর্মীদের ভিড় কমলেও হাসপাতালের সামনে অযাচিত কতিপয় ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা গেছে। যারা ভাইরাল হওয়ার জন্য সেখানে অভিনব অবস্থান করছেন। এদের কেউ খালেদা জিয়াকে ফুসফুস দিতে চান, কেউ বারবার মোনাজাত ধরছেন। আবার কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

এ সুযোগে কতিপয় অখ্যাত গণমাধ্যমকর্মী তাদের ভিডিও ধারণ করছেন।

তবে তাদের এসব আচরণ নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। আগত কয়েকজন জানান, একজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের চিকিৎসা ঘিরে এ ধরনের নোংরামি মেনে নেওয়া যায় না।

ফেসবুকে গুজব, ডা. জাহিদের ব্যাখ্যা

এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে একটি পক্ষ। এ নিয়ে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় দুপুরে হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারছেন। তাকে বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কিনা, সে বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। আজকেও যুক্তরাজ্য থেকে এসে বিশেষজ্ঞরা তাকে দেখবেন। দেখার পর সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতে লন্ডন নেওয়া হবে কিনা সিদ্ধান্ত হবে।

ডা. জাহিদ বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। তবে এ মুহূর্তে তার বর্তমান অবস্থা এবং মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনও কিছু করার সুযোগ নেই। সেটিও সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখতে হবে।’’ তিনি গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান। দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।

অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা ও এসএসএফের তৎপরতা

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সে অনুযায়ী তার নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধা এবং উচ্চ মর্যাদা বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয় সরকার।

দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ভিভিআইপি বিশেষ নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ সদস্যরা এভারকেয়ার হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কাউকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তল্লাশি করা হচ্ছে আগন্তুকদের।

অবশ্য বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, সোমবার (১ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি তৎপরতা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

এর আগে রবিবার (২৩ নভেম্বর) রাত ৮টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি টেস্ট করানোর পর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন—খালেদা জিয়ার ফুসফুস ও হার্টে সংক্রমণ হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার ছাড়াও মেডিক্যাল বোর্ডে রয়েছেন অধ্যাপক এফএস সিদ্দিকী, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. জিয়াউল হক, ডা. মামুন আহমেদ ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম।