বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কারণে তার দেশে ফেরা নিয়ে বেশি আলোচনা। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দলীয় চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে তারেক রহমান দ্রুতই দেশে আসবেন। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে লন্ডনে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেয়া হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিলম্বিত হতে পারে।
গত ২৩শে নভেম্বর গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়। গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান। বৈঠক শেষে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তারেক রহমান শিগগিরই চলে আসবেন। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একইসঙ্গে দলীয় প্রধানের অসুস্থতায় তাড়াহুড়ো কিংবা আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাস্তবতার নিরিখে পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের বিষয়ে মত তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। সেখানে তারা বলেন, খালেদা জিয়া তার মা। সেখানে যেমন আবেগ ভালোবাসা রয়েছে, আবার তেমনি দেশের প্রতিও তার প্রতিশ্রুতি আর দায়বদ্ধতা আছে। যেসব জায়গায় নিরাপত্তা ইস্যু জড়িত, যেখানে হুমকি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে- সেসব জায়গা আগে ঠিক করার পরামর্শ দেন নেতারা।
ওদিকে তারেক রহমানের দেশে আসার ব্যাপারে কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া নিরাপত্তার ব্যাপারেও সহযোগিতা করার বিষয়ে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ট্রাভেল পাসের কথাও সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত তারেক রহমান ট্রাভেল পাস চাননি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মানবজমিনকে জানায়, দেশে ফেরার জন্য তারেক রহমানের প্রস্তুতি রয়েছে। পাশাপাশি শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে বেগম খালেদা জিয়াকেও লন্ডন নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। লন্ডন থেকে একটি চিকিৎসক প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এই চিকিৎসকরা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ দেবে। এর আগে চীন থেকে আসা একটি চিকিৎসক দল ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ছেলে তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন।
প্রায় ১৭ বছর ধরে লন্ডনে আছেন তারেক রহমান। ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ এক-এগারোর জরুরি জমানায় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগারে তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পরের বছরে ৩রা সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। ১১ই সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান তিনি। এরপর সেখান থেকেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পরে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এমন আলোচনা ছিল। এর মধ্যে তার মা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তার দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়।