জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাম্প্রতিক সময়ে ‘যেকোন মূ্ল্যে’ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা বলছে। দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে প্রতিনিয়ত উঠে আসছে- রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, দুর্নীতি দমন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য তারা বৃহত্তর পরিবর্তন আনতে চায়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিরোধী মহল ও পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন এনসিপির কথিত সংস্কার বাস্তবেই সংস্কার, নাকি নতুন রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিং? এনসিপি বলছে, যে কোন মূল্যে সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির ‘যে কোন মূ্ল্যে’- এই শব্দ চয়নই উদ্বেগজনক। কারণ কথিত সংস্কারের ভেতরে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রেই এর বিপরীত চিত্রই প্রকাশ পাচ্ছে।
ঘোষণায় আশাবাদ ও বাস্তবতায় অসঙ্গতি
পর্যবেক্ষকদের মতে, দলটি যে পরিমাণ বড় বড় কথা ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি, নেতৃত্বের স্থিতিশীলতা ও তৃণমূলের প্রস্ততিতে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া দলটির কার্যক্রমেও অসঙ্গতি রয়েছে। মুখে সংস্কারের কথা বললেও নিজেরা নানা রকমের অনিয়ম-অপকর্মে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
এছাড়া সংগঠনের দুর্বলতা তো আছেই। হঠাৎ ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিলেও তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাঠামো এখনও দুর্বল ও অনির্দিষ্ট এ অভিযোগ বহুদিনের। অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসঙ্গতি ও নেতৃত্বে মতপার্থক্য নিয়ে সমালোচনা আছে। জাতীয় ইস্যু ব্যবস্থাপনায় দলের অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে কম এমন মতও পাওয়া যায়।
সংস্কার নাকি রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের কৌশল?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বড় বড় সংস্কারের কথা বলা হলেও এনসিপি বাস্তবে মূলত ক্ষমতার সুবিধা হাতছাড়া করতে করতে চাইছে না । দলটির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোতে অস্বচ্ছতা, মনোনয়ন ও নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ, দলের অভ্যন্তরে ভিন্নমত দমনে অসন্তোষ- এসবও বিরূপ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘যে কোন মূল্যে সংস্কার’ এই বক্তব্যে ইতিবাচকতার চেয়ে নেতিবাচক সুর বেশি। কারণ এটি ইঙ্গিত দেয়, দলটি প্রয়োজন হলে কঠোর বা বিতর্কিত সিদ্ধান্তকেও ন্যায্যতা দিতে পারে। জনগণের আস্থা অর্জনে এখনো যোজন-যোজন দূরে।
এদিকে, এনসিপি পরিবর্তনের কথা বললেও নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তাদের দলে অনুপস্থিত। যেসব খাতে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে দলীয় অবস্থান বিতর্কিত। ভোটারদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছাতে ব্যর্থ, এসব কারণে জনআস্থায় ঘাটতি রয়ে গেছে দলটিতে। সাধারণ মানুষ মনে করেন, এনসিপি সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে যত দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করছে, বাস্তবে ততটা শক্ত অবস্থান নয়। ঘোষণার চেয়ে কার্যকারিত, প্রতিশ্রুতির চেয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা-এই জায়গাগুলোতে দলটির আরও অনেক কাজ করার বাকি আছে।
বিরোধী রাজনৈতিক মহলের ভাষ্য অনুযায়ী- সংস্কারের ডাক দিচ্ছে, অথচ দলের মধ্যকার ভিন্নমত দমনে সক্রিয় দলটির শীর্ষ নেতারা। যেখানে দলীয় মতপ্রকাশই নিরাপদ নয়, সেখানে জাতীয় সংস্কারের কথা বললেও তা কেবলই স্লোগানই থাকে। দলে স্বজনপ্রীতি একটা বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে সংগঠনের বড় বড় পদে একই গোষ্ঠীর প্রভাব, নতুনদের জায়গা না পাওয়া, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব- এগুলো এনসিপির ঘোষণাকে বিতর্কিত করছে। দলটির অভ্যন্তরেই সংস্কার নেই অথচ প্রতিনিয়ত সংস্কারের কথা বলছে। সংস্কারের আড়ালে এনসিপি আসলে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেস্টা করছে-পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতাই। এনসিপির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।
এর বিপরীতে এনসিপি আহ্বয়াক নাহিদ ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের পাহারাদার হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের ফসল সমানভাবে ঘরে তুলছে বিএনপি ও জামায়াত। নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি দল প্রকাশ্যে করছে, একটি গোপনে। এবারের ভোট দেশ পরিবর্তনের ভোট। বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে।”
তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বিএনপি নয়, জামায়াত এবং ছাত্ররা যারা এখন এনসিপি নামে আবির্ভূত মূলতঃ এরাই গণঅভ্যত্থানের পুরো সুফল ভোগী।
শীর্ষনিউজ