Image description
 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেছেন, দেশের উন্নয়নের নামে দেউলিয়াত্বে পৌঁছে দিয়েছেন। আপনাদের পায়ের মাটি সরে গেছে। এখনো যদি আপনারা না বুঝেন, “সেই ইতিহাসের পথ ধরতে হবে”।

শেখ হাসিনা বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পালায় না” তিনি রান্না করা ভাতও খেয়ে যেতে পারেন নি। গণআন্দোলনের মুখে তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিলো। আপনারা যদি জনগণের মনের অবস্থা না বুঝেন, নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা করেন, তাহলে শেখ হাসিনার মতো আপনাদেরকেও মানুষ বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করে ছাড়বে।

বরিশালে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ ৫ দফা দাবিতে ইসলামী সমমনা ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর আরো বলেন, যারা দেশকে অশান্ত করার প্রক্রিয়া করছেন তাদের জায়গা বাংলার জমিনে হবে না। এ দেশ নিয়ে যারা ছিনিমিনি করছেন তাদের বলতে চাই নির্বাচন নিয়ে আর ছিনি মিনি করার সুযোগ নেই। চরমোনাই পীর আরো বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছেন, বিএনপির শাসন দেখেছেন, জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছেন। ৫৩ বছরে মানুষ শান্তিতে ছিলো না, এক বারের জন্য হলেও মানষ এখন ইসলামের শাসন দেখতে চায়।

তিনি বলেন, ইসলামের পক্ষে রায় হলে কোনো মায়ের কোল খালি হবে না, দেশে কোনো চাঁদাবাজি, গুণ্ডামি থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না। তিনি বলেন, আজকের সমাবেশের উপস্থিতি প্রমান করে মানুষ ইসলামের পক্ষে রয়েছে। এ সমাবেশের সফলতার ফসল ঘরে তোলার জন্য ঘরে ঘরে দাওয়াত দিতে হবে। তিনি বলেন গত ৫৩ বছরে বিএনপি দেখেছি, আওয়ামী লীগ দেখেছি, জাতীয় পার্টি দেখেছি কিন্তু ইসলাম আমরা দেখি নাই। এক বারের জন্য হলেও ইসলামের পক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবর রহমানকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, আমরা অনেকে আগে পীর পছন্দ করতাম না। আমিও ছাত্রজীবনে এমনটা মনে করতাম। কিন্তু আজকে চরমোনাই পীর সাহেবের পাশে বসে মনে হলো তিনি শুধু পীর নন তিনি এদেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠার একজন মহাবীর। তিনি বলেন, আমরা ৮দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ তায়া’লা কুরআনে দুইটা দলের কথা বলেছেন। একটা হলো হিজবুল্লাহ, আরেকটা হিজবুশ শয়তান। সুতরাং আমরা আল্লাহর দলে থাকতে চাই। আসুন আমরা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোরআনের আইন চালু করি। আমরা মানবরচিত আইনের সংবিধান দেখতে চাই না। মদিনার ইসলাম কায়েম করতে চাই। সংস্কারের মাধ্যমে আমরা সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে চাই।

তিনি বলেন, ৫৪ বছরে বাংলাদেশের সংসদে কোরআনের কোনো আইন পাস হয়নি। ইসলাম ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে মানুষের লেখা কোনো সংবিধান চলবে না। আসুন আল্লাহর দেওয়া বিধান কোরআনের আইনকে বাংলাদেশে আইনে চালু করি।

মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। কেউ খাবে তো কেই খাবে না তা হবে না ইনশাআল্লাহ। ইসলামী হুকুমত হলে এদেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ধর্মীয় আচার পালন করবে।

তিনি বলেন, ইসলামী হুকুমত হলে দেশের সবাই একসাথে হাসবো একসাথে কাঁদবো, যদি খেয়ে থাকি তবে একসাথে খাবো, না খেয়ে থাকলে সবাই একসাথে না খেয়ে থাকবো।

তিনি বলেন, আজকের এ সমাবেশ দেখে কেবল জালিম ও চাঁদাবাজরাই নাখোশ হতে পারে, মুক্তিকামী মানুষ আশার আলো দেখবেন ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সহকারী মহাসচিব মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসির আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চান, জেনারেল সেক্রেটারি নিজামুল হক নাঈম প্রমুখ।

এদিকে ইসলামী সমমনা ৮ দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। সকাল থেকে বরিশাল জেলাসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার হাজার মুনষের পদচারনায় মুখরিত হয় বেলস্ পার্ক ময়দান। দুপুরের মধ্যে পুরো এলাকা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সমাবেশে আগতরা জানান, নতুন দিনের সূচনায় ভূমিকা রাখবে এই সমাবেশ।