পটুয়াখালীর বাউফলে জাল কাগজ তৈরি করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক পরিচয় তুলে বিএনপি কর্মী ফয়সাল পঞ্চায়েতকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তাকে আটক করে। পরে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে দায়ের করা একটি রাজনৈতিক মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হলে ফয়সালকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাউফল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অফিসিয়াল প্যাড ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দপ্তর সম্পাদকের স্থানে ফয়সাল পঞ্চায়েতের নাম লেখা ছিল। অথচ তাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয় ইউএনও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি খাস জমির বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর। অভিযোগ হয়, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এক বছরের জন্য খাস জমি চাষাবাদের অনুমতি দিতে ইউএনওর সহযোগী হিসেবে ফয়সালসহ কয়েকজন কাজ করেছেন। এরপর থেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে তার নাম সামনে আসে।
গ্রেফতার ফয়সালের বোন মিম্মি পঞ্চায়েত অভিযোগ করে বলেন, তাদের পরিবার বরাবরই উপজেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, ফয়সাল কখনোই স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করেননি। তিনি দাবি করেন, পারিবারিক জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাদের বাড়ির ভূমিদস্যু মোচন পঞ্চায়েত জাল কাগজ বানিয়ে তার ভাইকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাজিয়ে গ্রেফতার করিয়েছে।
মিম্মি বলেন, ‘মোচন পঞ্চায়েত শুধু আমাদের সাথেই নয়, বাড়ির প্রায় সবার সাথেই জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছেন এবং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেন।’
ফয়সালের চাচাতো ভাই রিয়াজ পঞ্চায়েত জানান, গ্রেফতার ফয়সাল কালাইয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সদস্য এবং নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘একটি চক্র শুধু তাকে নয়, আমাকে পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পরিচয়ে ফাঁসিয়েছিল, অথচ আমি অতীতে বহুবার আওয়ামী নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তদন্তে আমার বিষয়ে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল।’
অন্যদিকে, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাইরাল হওয়া প্যাডটি আসল হলেও দপ্তর সম্পাদকের স্থানে ফয়সালের নামটি ভুয়া। তিনি দাবি করেন, ‘সুপার এডিটিং’-এর মাধ্যমে আসল দপ্তর সম্পাদক জসিমের নাম মুছে ফয়সালের নাম বসানো হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মোসলেম পঞ্চায়েত ওরফে মোচন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি দাবি করেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসানোর কাজে জড়িত নই। ব্যক্তিগত জমির বাইরে অন্য কারও জমির কাছেও যাই না। যারা আমার জমি দখলের চেষ্টা করে, তারাই এসব মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।’
পটুয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কোনো কর্মকর্তা এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বাউফল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম জানান, ফয়সালের গ্রেফতারের বিষয়টি প্রথমে থানা পুলিশ জানত না। ডিবি আটক করার পর তারা অবগত হন। তিনি বলেন, ‘তার রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করে আদালতকে অবহিত করা হবে।’