Image description

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। আজকের আলোচনায় থাকা এমন কিছু ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে একসঙ্গে উপস্থাপন করা হলো।

দেশের দৈনিক পত্রিকা— প্রথম আলো, সমকাল, যুগান্তর, আজকের পত্রিকা, ইত্তেফাকসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি’ 

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয়েছে। রবিবার মধ্যরাতের পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা গেছে। সেখানে চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়াকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, এমন একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তার অবস্থা সংকটজনক। তিনি ভেন্টিলেশনে আছেন। তবে লাইফ সাপোর্টে আছেন, এটা ঠিক নয়।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা জানান, আগামী কয়েকটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কিডনির কার্যক্ষমতায় স্থিতিশীলতা আনতে হবে। তা না হলে স্থায়ী উন্নতি আসা কঠিন।

২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার গভীর রাতে তার অবস্থার অবনতি শুরু হয়। তিনি কয়েক বছর ধরে এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তার শরীর ক্রিয়াশীল আছে। হাত-পা কিছুটা নাড়াচাড়া করতে পারছেন। দুয়েকটি কথাও বলেছেন গতকাল। 

 

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যায় অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন সমকালকে বলেন, তিনি স্থিতিশীল (স্টেবল) থাকলেও শঙ্কামুক্ত নন। তবে গত শুক্রবার রাতের তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন। অক্সিজেন লেভেল কিছুটা কম রয়েছে।

গতকাল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা জানান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালের, চিকিৎসাকর্মীর, স্বাস্থ্যকর্মীর। সারা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো যে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেটি এখানে করার আয়োজন করা হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ওনার অবস্থা গত তিন দিন ধরে একই পর্যায়ে আছে।

জাহিদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে তদারক করছেন। তিনি সার্বক্ষণিকভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

যুগান্তরের আজকের প্রধান শিরোনাম— ৩২ আসনে ঢুকে যেতে পারে পলাতকরা: ‘ভোট বানচালের চেষ্টায় আ.লীগ’।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ভারতে পালিয়ে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির প্রধান শেখ হাসিনা ও অন্যান্য পলাতক নেতারা ভয়ভীতি এবং নাশকতার নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার ফাঁসির দণ্ড এবং ঢাকার বিশেষ আদালতে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় মোট ২৬ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পরও তারা নতুন করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে নেমেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকতে পারে। বিশেষ করে ৩২টি সীমান্তবর্তী আসনে তারা ভয়ভীতি, উসকানি, সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া এবং সহিংসতা ঘটাতে পারে। প্রতিবেশী দেশ থেকে অস্ত্র এনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সহায়তায় হামলা চালানোর আশঙ্কাও রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর দেশজুড়ে লুট হওয়া ৫,৭৬৩টি অস্ত্রের মধ্যে ১,৩৪০টি এখনো উদ্ধার হয়নি। আওয়ামী লীগের আমলে ইস্যু হওয়া ১০,৫০৬টি অস্ত্রের ৬৫৭টি জমা না-পড়ায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে। এসব অস্ত্র সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের হাতে যেতে পারে।

গোয়েন্দারা আরও জানিয়েছে, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনাসহ ১০টি আসনে চরমপন্থিদের তৎপরতা রয়েছে, পার্বত্য এলাকায় সক্রিয় রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, অর্থের ব্যবহার, ভোটারদের হুমকি—এসব কারণেও সহিংসতা বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনটিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম ও অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী সবাই পলাতক আওয়ামী নেতাদের অনুপ্রবেশ, অবৈধ অস্ত্র, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এআই-নির্ভর ডিপফেক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ঘাটতিকে বড় ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে মোট ৬২টি সীমান্তবর্তী আসনের মধ্যে ৩২টিতেই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ১০%–এর বেশি। এসব আসনে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি, হামলা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা হতে পারে। গত ১১ মাসে সংখ্যালঘুদের ওপর ২,৬৮৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার ৭৬শতাংশ রাজনৈতিক কারণে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোতেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে, ফলে সহিংসতা আরও তীব্র হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়েও আছে বহু প্রশ্ন। তবে পুলিশ বলছে, সব ঝুঁকি মাথায় রেখে তারা নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।

আজকের পত্রিকার দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম— ‘প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি: হাসিনার ৫, রেহানার ৭ ও টিউলিপের ২ বছর কারাদণ্ড’

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে অনিয়ম করে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৫ বছর, তার বোন শেখ রেহানাকে ৭ বছর এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪। বিচারক মো. রবিউল আলম সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন। টিউলিপ ও শেখ রেহানাকে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

একই মামলায় সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১২ জন কর্মকর্তাকে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে শুধুমাত্র রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে ছিলেন এবং তাকে আদালতে হাজির করা হয়। অন্য সব আসামি পলাতক; তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার অযোগ্য শেখ রেহানাকে পূর্বাচল প্রকল্পের প্লট পাইয়ে দেন। টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর মায়ের জন্য প্লট বরাদ্দে প্রভাব খাটিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দেন।

দুদক গত জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও অন্যদের বিরুদ্ধে মোট ৬টি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে তিন মামলার রায় গত ২৭ নভেম্বর ঘোষিত হয়, যেখানে শেখ হাসিনা মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড পান। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ পুতুলও পৃথক মামলায় ৫ বছর করে দণ্ডিত হন।