Image description

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ধানের শীষের প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিনের সাম্প্রতিক সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তিনি তার নির্বাচনি মিডিয়া সেলের দায়িত্ব দিয়েছেন সরোয়ার হোসাইন লাভলুকে, যিনি অতীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা জানান, সরোয়ার হোসাইন লাভলু একসময় আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পরে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সীতাকুণ্ড পৌরসভা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আশরাফুর রহমান আমার দেশকে বলেন, সরোয়ার লাভলু একসময় শিবিরের নেতা ছিলেন। তিনি একজন সুবিধাভোগী ও স্বার্থপর প্রকৃতির মানুষ। এদের মতো লোকের স্থান জামায়াতের মতো সংগঠনে হবে না।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, লাভলুর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ নেতাদেরও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রশাসনিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তারা দাবি করেছেন, উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী সুরাইয়া বাকেরকে নিয়ে তার বাড়িতে কেক কাটা, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ কামালের জন্মদিন পালন করা, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে অতিথি হওয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কল্যাণ পার্টির অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া, এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সীতাকুণ্ডে তিনি ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত বলে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের নেতারা জানান।

সীতাকুণ্ড পৌরসভা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, “২০১৫ সালে পৌরসভা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক করার জন্য দলীয় প্যাডে লাভলু আমার স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেছিল। সে একসময় শিবিরের রাজনীতি করতো বলে আমি তাকে বিএনপিতে আনতে আগ্রহী ছিলাম না। দলীয় প্যাডে আমি স্বাক্ষর না করলেও সারোয়ার লাভলু পরে আমার স্বাক্ষর জাল করে সে নিজেকে ওই পদের পরিচয় দিতে শুরু করেন। এটিকে কেন্দ্র করে ওই সময় ইউসুফ নিজামীসহ সারোয়ার লাভলুর সাথে আমার প্রচুর ঝামেলা হয়েছিল।

পৌরসভা বিএনপির সভাপতি ইউসুফ নিজামী বলেন, দলীয় প্যাডে আমার স্বাক্ষর আছে ঠিকই। পরে সাধারণ সম্পাদক আজাদের অনুমতি নিয়ে লাভলু নিজেই সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর করেছে। তবে বর্তমানে তিনি পৌরসভা বিএনপির কেউ নন।

সাবেক ছাত্রদল নেতা ইকবাল বাহার চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, তিনি দলের প্রাথমিক সদস্য নন। একজন ব্যক্তি একদিকে শিবির, অন্যদিকে বিএনপি, আবার কোথাও আওয়ামী লীগ— এটা কীভাবে সম্ভব।

বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জহুর আলম জহুর আমার দেশকে বলেন, বহুমুখী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাভলুর মতো বিতর্কিত একজন শিবির নেতাকে ধানের শীষ মিডিয়া সেলের দায়িত্বে দিয়েছে। কাজী সালাউদ্দিনের সাথে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী নেই। তাই সাবেক শিবির নেতাকে তিনি মিডিয়া সেলের দায়িত্বে দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দিশারী যুব ফাউন্ডেশন ও দুরন্ত পথিক আদর্শ সঞ্চয় সমবায় সমিতির ব্যানারে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বিএনপির কেউ না হয়েও তিনি "সীতাকুণ্ড বিএনপি" ও “মিডিয়া সেল” নামে একাধিক ফেসবুক পেজ খুলে নিজস্ব প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ।

কাজী সালাউদ্দিনের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে লাভলুকে রাখার সিদ্ধান্তে সীতাকুণ্ড বিএনপিতে নতুন করে অনৈক্য তৈরি হয়েছে। বিএনপি'র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসলাম চৌধুরীর সমর্থনে আকবরশা থানা এলাকায় আজ এক বিশাল সমাবেশ হয়েছে। দুদিন যাবৎ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজী সালাউদ্দিনের মনোনয়ন প্রত্যাহার ও আসলাম চৌধুরীর নাম ঘোষণা দাবিতে মশাল মিছিলসহ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।