Image description

গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১৮৫ জন ‘শহীদ হয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। একই সঙ্গে ছাত্রদলের হাতে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ছাত্রশিবির মেডিকেল জোন শাখার উদ্যোগে আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাদ্দাম।

এর মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগরীর সকল মেডিকেল ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত ছাত্রশিবিরের এই শাখা প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে এসেছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাত। এ ছাড়া বিশেষ আলোচক ছিলেন ছাত্রলীগের হাতে নিপীড়নের শিকার ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক ও সাবেক মেডিকেল জোন সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘রগ কাটা’ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, এই প্রশ্নটা সব জায়গায় করা হয়। কিন্তু ছাত্রশিবির কোথায় রগ কাটে কেউ বলতে পারে না। এখানে বলে, রাজশাহীতে কাটে, রাজশাহী যাওয়ার পর শুনলাম চট্টগ্রামে কাটে। চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম, ওখানেও একই প্রশ্ন করে।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গুম কমিশনের রিপোর্টে গুমের শিকারদের তালিকায় প্রথমে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এর মধ্যে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও আছে। আর দ্বিতীয় পজিশনে আছে ইসলামী ছাত্রশিবির, যাদের গুমের অবস্থান ৩১%। রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সবগুলো প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছিল। তাহলে রগ কাটার অভিযোগে আমাদের একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারল না কেন? তাদের সঙ্গে তো আমাদের খাতির ছিল না, বরং ভয়ই পেত আমাদের। এজন্য বিভিন্ন প্রোপাগান্ডাও চালাত। জুলাই আন্দোলনে প্রথমে বলেছে যে এই কাজগুলো করছে জামায়াত-শিবির-বিএনপি। এরপরে এক পর্যায়ে বলছে এটা করছে জামায়াত-শিবির, ২ তারিখে গিয়ে বলছে শিবিরই করছে। শেখ হাসিনা কনফিডেন্টলি বলেছে কারণ ডিজিএফআইয়ের রিপোর্ট ছিল তার কাছে। তো আমাদের উপর অনেক নিপীড়ন চালিয়েছে, কিন্তু এই প্রমাণ তারা করতে পারেনি। কিন্তু এই প্রোপাগান্ডাটা কেন করে? এখন দেখবেন, বিএনপি আর ওই রগ কাটা বাদ দিয়ে এখন বলছে গুপ্ত। কারণ রগ কাটা দিয়ে আর কাজ হয় না। এখন গুপ্ত বলাও ছেড়ে দিয়েছে। কারণ প্রোপাগান্ডা এখন আর চলবে না।

48
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম

 

বিএনপি ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর ধর্ষণের যতগুলো রিপের্ট আমার কাছে আছে, তাতে ৭২টা কেস ছাত্রদলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ১৮৫ জন ইতোমধ্যেই ‘শহীদ’ হয়েছে কিনা আল্লাহই জানে, তবে মারা গেছেন। অনেকের জন্য তারা মায়াকান্না করেছে, অনেকের জন্য করেনি। যাদের জন্য মায়াকান্না করেছে, সেটিও নিজেদের রাজনীতির জন্য।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, জুলাই বিপ্লবে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ভাই-বোনদের রক্তাক্ত করেছিল, তখন সবার আগে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল মেডিকেল জোনের ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা। ওই সময়ে যে পরিমান রোগী ছিল, আমাদের সে পরিমান ডাক্তার ছিল না।

তিনি বলেন, ইসরায়েলিরা যেভাবে ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করে, ওই সময়ে ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দফায় দফায় হামলা করে। ওই সময়ে আহতদের চিকিৎসার সামগ্রিক বিষয়ে তদারকি করেছেন মেডিকেল শাখার ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা।

47 (1)
প্রধান আলোচক ছিলেন ডা. কানিজ ফাতেমা রিফাত

 

প্রধান আলোচক ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাত ভাল চিকিৎসক হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যত পেশা আছে, তার মধ্যে মেডিকেল অন্যতম কঠিন সাবজেক্টগুলোর একটি। তবে আল্লাহর রহমত আমাদের সঙ্গে থাকলে খুব সহজে এই সংগ্রামের জীবন পার করা যায়।

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ নাঈম, কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক হাফেজ ডা. রেজওয়ানুল হক ও কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান সম্পাদক ডা. রিফাত মাহবুব। এতে সভাপতিত্ব করেন মেডিকেল জোন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ডা. যায়েদ আহমাদ। নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব ও পপুলার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরোজ মিথিলা। এ ছাড়া ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করে মেডিকেল জোন শিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মেডিটিউন শিল্পীগোষ্ঠী’।