Image description

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বিরোধ থাকলেও গণত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ইস্যুতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নাশকতা প্রতিহত করতে সব রাজনৈতিক দলই রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। গণহত্যাকারী কার্যক্রম নিষিদ্ধ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ (১৩ নভেম্বর) সারাদেশে লগডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

আর এ কর্মসূচিকে ঘিরে গত কয়েকদিন যাবৎ সারাদেশে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও চোরাগোপ্তা হামলা চলছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই পলাতক আওয়ামী লীগ এমন কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশে নাশকতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে অত্যন্ত আশার বিষয় এই যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ইস্যুতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির নামে নাশকতা সৃষ্টির যে প্রচেষ্টা তা ঠেকাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলই রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নব নির্বাচিত ছাত্র সংসদ যেমন ডাকসু, চাকসু, রাকসু ও জাকসু এসব ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী অন্যান্য সকল ছাত্র দলও রাজপথে অবস্থান করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তাদের যে ঐক্য তা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রকৃত গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য হল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন মত ভিন্ন কর্মসূচি থাকবে কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে সবাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হবে।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য এটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময় সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য খুবই প্রয়োজন। দলগুলোর মধ্যে বিভেদ থাকলে ফ্যাসিবাদী শক্তি তার সুযোগ নিতে পারে। তাই দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে সব দলকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ভূমিকা রাখতে হবে। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিদেশে বসে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদেশে নাশকতা সৃষ্টির নির্দেশ দিচ্ছে। তার নির্দেশে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ককটেল মারা হচ্ছে, চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করতে দেশে ভয়াবহ নাশকতা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কার কথা গোয়েন্দাদের তরফ থেকে গত মাসে সরকারকে জানানো হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্থাপনা, কেপিআই এলাকা, গার্মেন্ট শিল্প এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গতমাসে চট্টগ্রামের ইপিজেড ও রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে যে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে তাতে নাশকতার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাপকভাবে নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে বাংলাদেশ পড়তে পারে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে বলেও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। আর এই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই গত ২৯ অক্টোবর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যমুনায় অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে। নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে।
এই আশঙ্কারই বহিঃপ্রকাশ গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে দেখা গেল। ওইদিন চট্টগ্রামে নির্বাচনী জনসংযোগের সময় নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনের দলটির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় ‘গণসংযোগে অংশ নেয়া’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা (৪৩) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এরপর গত ১০ নভেম্বর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে তারেক সাইফ মামুন নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে মামুন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রসীদের একজন। গত সোমবার দিবাগত রাতে গুলশান লেকের পাড়ে সৌরভ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সৌরভ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিদেশে বসে দেশে নাশকতা সৃষ্টির এই যে অপচেষ্টা করছে তা প্রতিহত করতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। রাজধানীজুড়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নাশকতা ও অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে গত মঙ্গলবার থেকে রাজপথে নেমেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা ১ হাজার ৪০০ শিশু-কিশোর, তরুণ হত্যা করে এখন ভারত বসে অডিও বার্তা পাঠিয়ে নাশকতা করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনকি একজন পুড়ে মারাও গেছেন। কোনো একটা চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে। তবে তাদের সে আশা আর কখনো পূরণ হবে না। দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তাদের সকল অপতৎপরতাকে মোকাবেলা করবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের নাশকতা-অপতৎপরতা প্রতিরোধে আজ (১৩ নভেম্বর) রাজপথে থাকবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আন্দোলনরত ৮ দল। গতকাল মগবাজার আল ফালাহ মিলনায়তনে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ৮ দলের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ফ্যাসিবাদী শক্তির নাশকতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে আট দলের নেতারা সর্বস্তরের জনশক্তিসহ দেশব্যাপী রাজপথে অবস্থান করবেন।

জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একই সাথে তারা আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজধানীতে প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া পতিত ফ্যাসিবাদের হিংস্রতা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদের হিংস্র রূপ আবারও দেখা দিয়েছে। অগ্নিসন্ত্রাস, চোরাগোপ্তা হামলা, ককটেল হামলাসহ নানাভাবে ভয়ঙ্কর দানবতুল্য সেই অপশক্তি আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। এই শক্তিকে প্রতিহত করতেই হবে। জনপ্রশাসনের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক শক্তিকেও ঐক্যবদ্ধভাবে এদের মোকাবিলা করতে হবে।

নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদ। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ ১৩ তারিখ কথিত লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে, সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন