সিলেট-৪ আসনে আসন গেড়ে বসতে চাচ্ছেন আরিফুল হক চৌধুরী। গ্রিন সিগন্যালও পেয়েছেন। মাঠে নেমে পড়েছেন। সাড়াও ফেলছেন। ভোটের মাঠ হেলে পড়েছে তার দিকেই। খামতি আছে একটি জায়গায়। সেটি হচ্ছে এখনো বিএনপি দলীয়ভাবে ঘোষণা করেনি তার নাম। আর এতেই জট লাগছে। মাঠে থাকা অন্য প্রার্থীরা আরিফ নামার পর কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও ফের সরব হয়ে উঠেছেন। টক্কর দিতে চাচ্ছেন আরিফকে। যুক্তি একটাই-এখনো তো কাউকে এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি বিএনপি’র। ফলে মাঠে থাকা সবাই শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। আর তাদের সেই ইঙ্গিত পরিষ্কার হয়েছে আরিফের কাছেও। এজন্য তাকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এখনো এ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় দলের ভেতরে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি নেতায় নেতায় বাড়ছে দ্বন্দ্বও। এতে ক্ষতি হচ্ছে বিএনপি’রই।
সিলেট-৪ আসনের ভোটের মাঠ আরিফের জন্যই সাজানো। সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন পাবেন না। সেটি নিশ্চিত ছিল। এ কারণে তিনি নিজেও গণ-অভ্যুত্থানের আগে ও পরে ঢুঁ মেরেছেন ওই আসনে। সাইফুর রহমানের নির্বাচনের সময় মূল কুশীলব হিসেবে কাজ করেছেন। এ জন্য এ আসনে তার পরিচিতি রয়েছে। নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার পর থেকে আরিফের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এ আসনের ভোটাররা।
মাঝখানে ছেদ পড়েছে। আরিফ যখন ঘোষণা দিলেন তিনি সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হবেন তখন সিলেট-৪ আসনের হিসাব পাল্টে যায়। তার সম্মতি নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী। তার নামার খবরও জানতেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সবার মতামতে মিফতাহ যখন মাঠে নামেন তখন তিনি একেবারেই নতুন মুখ। কিন্তু ভোটে মাঠের মিফতাহ সিদ্দিকী অবিরাম পরিশ্রম করে মাঠ প্রস্তুত করেন। তাকে প্রার্থী ধরে কাজ শুরু করেন দলের নেতাকর্মীরা। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে এ আসনের অনেক বিতর্কিত ঘটনা থেকে তিনি ছিলেন দূরে। পূর্ব অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পরিচিত দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। ওই এলাকার রাজনৈতিক মাঠে আছে তার শক্ত অবস্থান। এবারের ভোটে মাঠে জামানও কাজ শুরু করেন। দিয়েছেন নজরকাড়া কয়েকটি শোডাউনও। তাকে নিয়েও স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ভোটাররা।
আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ গোয়াইনঘাট। এ উপজেলার দুই বারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তিনি মাঠে পুরোপুরি সক্রিয়। তার পক্ষে গোয়াইনঘাটের ভোটের মাঠ চাঙ্গা। মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপি নেতা হেলাল আহমদ। গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে সিলেটে ফিরে ভোটের মাঠে কাজ শুরু করেন আরিফ। তিনি নামায় পরিস্থিতি পাল্টালেও মাঠে থাকা প্রার্থীরা দলীয় ভাবে প্রার্থী ঘোষণায় মাঠ ছাড়েননি। মাঠে রয়েছেন মিফতাহ সিদ্দিকী। জানালেন- দলীয় ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। প্রার্থী ঘোষণা কখন করা হবে সেটি দলের সিদ্ধান্ত। প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর যদি নির্দিষ্ট প্রার্থীর বাইরে অন্য কেউ মাঠে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দেন তখন সেটি হবে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী। ভোটের মাঠে নেমে সাড়া দেয়া বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাবেক নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে অনেক কথাই বলেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, কেউ এসে নিজ মুখে দলের প্রার্থী ঘোষণা দিলে তো হবে না। দল থেকে ঘোষণা আসতে হবে। তার আগে কেউ বলতে পারবেন না তিনি দলের প্রার্থী। জামান বলেন-তিনি ভোটের মাঠে রয়েছেন এবং দলের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। তার পক্ষে ভোটের সাড়া রয়েছে বলে জানান জামান। একটি মশালকে কেন্দ্র করে আলোচনায় এসেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। গোয়াইনঘাটে তার সুসংহত অবস্থান। আর ওখান থেকেই তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পক্ষে কয়েকদিন আগে কয়েকশ’ মানুষ রাতের আঁধারে সালুটিকরের পার্শ্ববর্তী নতুন বাজারে মশাল মিছিল করেছে। এখনো ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। জানিয়েছেন, তার পক্ষে জনগণ রয়েছে। তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এদিকে-বিএনপি নেতা হেলাল আহমদও তিন উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এত কিছুর পরও চিন্তিত নয় আরিফ বলয়ের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি’র সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জৈন্তাপুরে তিনি বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মী ও মাদ্রাসাকেন্দ্রিক আলেম- ওলেমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। গোয়াইনঘাটের নন্দিরগাঁওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সভা করেছেন। তার পক্ষেই হাওয়া বইছে। উন্নয়নের ‘ম্যাজিকম্যান’ হিসেবে তার পক্ষে রয়েছে মাঠ। বিএনপি মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি তিন উপজেলার চেহারা বদলে দিতে চান- প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।