সাইবারস্পেসে নারীর প্রতি সহিংসতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খানের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতার মানহানীর মামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছেন ছাত্রীরা।
আজ বুধবার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে সামনে থেকে মশাল মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ছাত্রীদের হলগুলো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা, গুপ্ত বটের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, অনলাইনে নারী নির্যাতন বন্ধ করো করতে হবে, ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন, ইন্টেরিম কি করে ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ছাত্রদলের সভাপতি তানজিলা হোসাইন।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশের নারীরা কিভাবে এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা পালন করেছে। শুধুমাত্র জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নয় এই বাংলাদেশে যতগুলো অভূতপূর্ব আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে সব কয়টাতেই নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। জুলাই গণ-অভুত্থান পরবর্তী সময়ে এসে আমরা দেখলাম যেই নারীদের অংশগ্রহণে যেই নারীদের লড়াই সংগ্রামের ফলে এই ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় আসলেন, দায়িত্বে আসলেন সে আসার পর সম্পূর্ণভাবে নারীদের যে নিরাপত্তা সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আমরা দেখলাম আমাদের শিক্ষিকার (নাহরীন ইসলাম খান) নামে জামায়াতের এক নেতা মামলা করে দিয়েছেন। এই জায়গা থেকে আমাদের কাছে স্পষ্টত প্রতিমান হয়, যতগুলো নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সবকয়টাতে জামায়াত চুপ থেকেছে। এমনকি যেই সকল নারীরা জামায়াত এবং শিবিরের বিরুদ্ধে গঠনমূলক রাজনৈতিক বিরোধিতা করেছে তাদের প্রত্যেককে অনলাইনে যতভাবে হেনস্থা করা যায়, মানসিক নির্যাতন করা যায় তার সবটাই তারা পরিকল্পনামাফিক করেছেন এবং এখনো করে চলছেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ সদর থানা আমলি আদালতে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয় । মামলার বাদী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি।
জাহিদুল ইসলাম এজাহারে বলেন, ‘আমার উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা যে মন্তব্য করেছেন, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ। আমি কখনো এমন কথা বলিনি। এতে আমার ব্যক্তিগত মর্যাদা ও জামায়াতে ইসলামীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ জন্য আমি মামলাটি করেছি।’
বাদী আরও বলেন, ঘটনার তারিখে ও সময়ে গাজী টিভির ‘রেইনবো নেশন বনাম ধর্মীয় কার্ড, টাইমলাইন বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক কাজী জেসিনের পরিচালনায় ড. নাহরিন ইসলাম খান বলেন, ‘জামায়াতের সিরাজগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি বলেছেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেছেন, তাঁদের স্ত্রীদের প্রতি জামায়াতের হক।’ ড. নাহরিন ইসলাম খানের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ ও জামায়াতে ইসলামীর নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী দাবি করে এজাহারে জাহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি কখনো এমন বক্তব্য দেননি।