Image description

আগামীকাল ১৩ নভেম্বর 'ঢাকা লকডাউন' কর্মসূচির ডাক দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আগুন-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমে তৎপর হয়ে উঠেছে গণহত্যাকারী দলটির সন্ত্রাসীরা। দিল্লিতে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে তাদের সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন গণরোষের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী হাসিনা। দলীয় ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের রাস্তায় নামিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া রক্তের নেশায় পাগলপ্রায় এই খুনি।



'ঢাকা লকডাউন' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার বেশ কিছু ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বেশ কয়েকটি আগুন-সন্ত্রাসের ঘটনার পর ফ্যাস্টিট আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত ফেসবুক পেজ ও আইডি থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএস-স্টাইলে দায় স্বীকার করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আগুন-সন্ত্রাসী ভয়ঙ্কর রুপ বেরিয়ে এসেছে বলে মনে করেন নেটিজেনরা। যা নিয়ে জনমনে ও রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক ক্ষোভ ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।



‘জঙ্গি তত্ব’ ফেরি করে ১৬ বছর ধরে নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বিষিয়ে তোলা হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার কথা রয়েছে আগামীকাল ১৩ নভেম্বর। সেকারণে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে ভারতের মদদে ‘লকডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ের সামনেও ঘটানো হয়েছে ককটেল বিস্ফোরণ। যদিও রোষাণল থেকে বাঁচতে ভারত ও অন্যান্য দেশে পলাতক রয়েছে দলটির অধিকাংশ শীর্ষ নেতা।  



আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, গত ১১ দিনে ১৫টি স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।



এদিকে, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, ১৩ নভেম্বর ঘিরে গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এবং ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ‘‘কোনো শঙ্কা নেই এবং চিন্তার কোনো কারণ নেই এবং পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।’’



স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগুন সন্ত্রাসে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।সরকার এবং এনসিপি ও জুলাই ঐক্যসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই নাশকতার ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। তারা অভিযোগ করছে, আওয়ামী লীগই আগুন সন্ত্রাসের উৎপাদক এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। 'জুলাই ঐক্য' মঞ্চ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।



এপ্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব মন্তব্য করেছেন, দেশের গণমাধ্যমগুলো আওয়ামী লীগের আগুন সন্ত্রাস লিখতে লজ্জা পাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২৪’এর নজিরবিহীন গণ অভ্যুত্থানে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়া আওয়ামী লীগ ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতেই স্থান পাচ্ছে না গণহত্যাকারী হাসিনা, তখন তাকে আলোচনায় ওঠাতে নতুন ছকে এগোচ্ছে দিল্লি।



অভ্যুত্থানের মুখে জনরোষ থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনার ওপর শুরুতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল দিল্লি। তার অনেকগুলোই ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভকে তোয়াক্কা না করে ভারত এখন হাসিনাকে বেশি করে মুখ খুলতে দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার পর্যন্ত দিতে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগবিহীন নির্বাচনকে বানচাল করতে এটিকে ভারতের প্রকাশ্য তৎপরতা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।



এদিকে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া সে বক্তব্যটি হলো ‘কেউ বাসে আগুন দিতে গেলে তাকে সেই আগুনেই ফেলে দেবেন’।এছাড়া ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ যদি এভাবে গাড়িতে আগুন ও মানুষের জীবনে আগুন ধরাতে চেষ্টা করে ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।