নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি জাতীয় সংসদ আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা না করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন। যদিও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার লিফলেট বিতরণসহ ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। জোটের শরিক দল জমিয়তে ওলামা ইসলামকে আসনটি ছেড়ে দিতে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি বলে জমিয়তের নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। এ কারণে তাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক সংসদ-সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শাহ আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব ওরফে ভিপি রাজিব, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রনি, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইমলাম টিটু, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া, থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী প্রমুখ। ১৫ মাস ধরে তারা গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৭ বছর আওয়ামী লীগ তথা শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। হামলা-মামলা, জেল-জুলুম নির্যাতন তারা সহ্য করেছেন। দেশে যখন গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে তখন জোটের নামে বিশেষ রাজনৈতিক দল উড়ে এসে জুড়ে বসার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি-নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলার কোনো আসন যেন বিএনপি জোটের কোনো শরিক দলকে ছেড়ে না দেয়।
ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া জানান, এ আসনে তৃণমূলের চাওয়া দলের ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। কারণ জোটের কোনো ব্যক্তিকে বর্গা দেওয়া হলে সাংগঠনিকভাবে দল দুর্বল হয়ে পড়বে। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে না।
জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শাহ আলম বলেন, নীতিগত কারণে আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমি জয়ী হলেও ১ হাজার ২০০ ভোটের ব্যবধানে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছিল।
এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েও দলের সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়িয়েছি। ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে বিএনপির নেতাকর্মীদের আমি আগলে রেখেছি, পাশে দাঁড়িয়েছি।
জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রনি জানান, দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গুমের শিকার হয়েছি। শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে কথা বলায় জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে-তুমি মাঠে আছো মাঠে কাজ করো। তাই আমি দলের ৩১ দফা বাস্তবায়নে এবং মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে কাজ করছি।
এ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের শরিক জেলা জমিয়তে ওলামা ইসলামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাশেমী নির্বাচন করেছেন। তিনি জানান, এবারও আসনটি জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে ছাড় দিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, নির্বাচনি জোট হলে মার্কা কোনো বিষয় নয়। জমিয়তে ওলামা ইসলামের খেজুর গাছ বৈতরণী পার হয়ে যাবে।
জেলা জমিয়তে ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদৌস জানান, জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী-জমিয়তের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিলেমিশে কাজ করে জোট প্রার্থীকে জয়ী করবে বলে আশা করছি।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল জব্বার, জেলা এনসিপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আল আমিন। এ আসনে একজন প্রভাবশালী শিল্পপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।