ফের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘আমির’ নির্বাচিত হয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান। ২০২৬-২৮ কার্যকালের জন্য তাকে নতুন আমির ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরই এ পদে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই একই পদে নতুন দায়িত্ব পেলেন তিনি। ১৯৪১ সালে মাওলানা মওদূদীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সাত দশকে দলটির আমির হিসেবে তিনিসহ ছয়জন নেতা দায়িত্ব পেয়েছেন।
রবিবার (২ নভেম্বর) দলটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অভ্যন্তরীণ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংগঠনের ‘আমির’ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর আগে, গত ৯ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশের রুকনদের (সদস্য) নিকট থেকে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণের কার্যক্রম শেষে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম ভোট গণনা শেষ করেন। শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংগঠনের ‘আমির’ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী ২০২৬-২৮ কার্যকালের জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘আমির’ নির্বাচিত হয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডা. শফিকুর রহমান দলটির নেতৃত্বে আসার পর থেকে তার দূরদর্শিতায় দলের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সংস্কারমুখী ও যুগোপযোগী চিন্তা-ভাবনা ও কথা-কাজের কারণে ছোট-বড় সব শ্রেণির মানুষের কাছেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন এবং তাদের কাছে দলের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। এবারও বৃহৎ স্বার্থে দলটির রুকনরা (সদস্য) তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হয়েছে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ব্রিটিশ উপনিবেশকালে ভারতের লাহোরে (বর্তমানে পাকিস্তান) মাওলানা মওদূদীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশে আমির নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন নেতা। তাদের মধ্যে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মাওলানা আবদুর রহিম, ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম, ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আব্বাস আলী খান (ভারপ্রাপ্ত), ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মকবুল আহমদ এবং ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ ও ২০২২ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, ডা. শফিকুর রহমান ১৯৭৭ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন। পরে সংগঠনটির সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ও সিলেট শহর শাখার সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে জামায়াতে যোগদানের মাধ্যমে বৃহত্তর রাজনীতিতে পদার্পন করেন শফিকুর রহমান। এরপর সিলেট শহর, জেলা ও মহানগরে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি পদে আসীন হন। ২০১৬ সালে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমীর নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য আমিরে জামায়াত হিসেবে ১ম বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন তিনি। পরে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর দ্বিতীয় বারের মতো আমির নির্বাচিত হন এবং ১৮ নভেম্বর ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য ২য় বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন।