ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির কমিটি স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
শনিবার রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। একইদিন দুপুরে ভোলা শহরে বিএনপি ও ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পরপরই কমিটি স্থগিতের ঘোষণা এলো।
এদিকে শনিবার দুপুরে বিএনপি ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় বিজেপির প্রায় ২৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। এই সংঘর্ষে আহতের তালিকায় একজন পুলিশ সদস্য এবং এক সাংবাদিকও রয়েছেন। শহরের নতুন বাজার এলাকায় বিজেপির দলীয় কর্মসূচিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকটি গাড়ি, দোকান ও রাজনৈতিক পোস্টার–ব্যানার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ ও নৌবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। ভোলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, তবে বিএনপির দাবি তাদেরও অনেকে আহত হয়েছেন।
ভোলা বিজেপির প্রচার সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির একটি পক্ষ আমাদের কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ সভায় বিএনপির লোক এসে ভাঙচুর করেছেন। এর বিচার চাই আমরা।’ হামলার ঘটনায় বিজেপির ২৫ জন আহত হওয়ার দাবি উঠেছে।
অন্যদিকে রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, এই ধরনের সংঘাত জাতীয়তাবাদী শক্তির সম্মান ক্ষুন্ন করছে এবং ভোট রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে; তাই ঐক্যের বিকল্প নেই।
একাধিক সূত্র ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জানান, সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে ভোলা-১ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন। এই আসন থেকে বিজেপির চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি আন্দালিভ রহমান পার্থ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একইসঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক (সাবেক সভাপতি) গোলাম নবী আলমগীর আসনটি থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। মূলত এটিকে কেন্দ্র করে নানা কর্মসূচি চলছে। নিজের অবস্থান নড়বড়ে বুঝে বিজেপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ নানাভাবে হয়রানি এবং কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন গোলাম নবী আলমগীর।
দলীয় সূত্র বলছে, নিজের প্রভাব ধরে রাখতেই গোলাম নবী আলমগীরের অনুসারীরা সাম্প্রতিক সময়ে নানা কর্মসূচিতে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিচ্ছেন। ভোলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রও বলছে, আলমগীর ও তার ভাতিজা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আসিফ আলতাফের বিরুদ্ধে দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন বিরক্ত।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, জেলা বিএনপির নেতা গোলাম নবী আলমগীর একসময় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তোফায়েল আহমেদের সাথে তার যে ব্যাপক সখ্যতা তা ছিল সর্বজন স্বীকৃত। তোফায়েল আহমেদ মিটিং করেও বলছেন — ভোলা বিএনপির সাথে তার এতোটাই ভালো সম্পর্ক যে, গোলাম নবী আলমগীর জেলা বিএনপির সভাপতি হয়ে উনি যদি কোনো কাজ নিয়ে তার কাছে আসেন অথবা ফোনে কোনো কাজের অনুরোধ জানান তাহলে কাজটা তিনি (তোফায়েল আহমেদ) করে দেন। আর গোলাম নবী আলমগীর বিএনপির ৬৪ জেলার মধ্যে একমাত্র জেলা সভাপতি ছিলেন, যার নামে বিগত ১৭ বছরে একটিও মামলা হয়নি। কোনোদিন পুলিশও তাকে গ্রেপ্তার করেনি; এমনকি কোনোদিন কারাগারেও যাননি
একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর ভোলায় সন্ত্রাস চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে গোলাম নবী আলমগীর এবং তার ভাতিজা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আসিফ আলতাফ ব্যাপকভাবে জড়িত।
অন্যদিকে ভোলার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গোলাম নবী আলমগীর এবং তার ভাতিজা আসিফ আলতাফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে চরম বিরক্ত। গত কয়েকদিনে গোলাম নবী এবং আসিফের সমর্থকেরা যেভাবে অযাচিত ভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে— এই বিষয়টি প্রশাসন অত্যন্ত খারাপ ভাবে নিচ্ছে। গোলাম নবী আলমগীর এবং আসিফ আলতাফকে বারবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কথা বললেও তারা প্রশাসনকে অসহযোগিতা করায় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ঢাকাটাইমস