Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রংপুরের ছয়টি আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা প্রচারে নেমেছেন। একটি আসনে বিএনপির একাধিক নেতা নির্বাচনি মাঠে থাকায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কিছুটা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভাজনও তৈরি হচ্ছে। তবে প্রতিটি আসনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন একক প্রার্থী ঘোষণা করায় নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় তারা এগিয়ে রয়েছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্য দলগুলোও প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি।

রংপুরের আসনগুলোয় বিএনপির ১৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় ও উৎকণ্ঠার মাঝেই তারা ব্যাপক অর্থব্যয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। বিএনপির একাধিক কর্মী জানান, এমন অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন যারা পাবেন না, তারা হয়তো নির্বাচনকালে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন। শুধু তাই নয়, দলীয় প্রার্থীকে অযোগ্য প্রমাণের উদ্দেশ্যে তারা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষেও কাজ করতে পারেন। দলের জন্য এটি বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে। আগে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে এ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন, তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী। চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসবে বলে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। এরপরও বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে নেতাকর্মীরা আশাবাদী।

এদিকে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা জানান, সুষ্ঠু ভোট হলে তারা নির্বাচিত হবেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে তারা যাচ্ছেন। ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে তারা জানান।

রংপুর-১ আসন : গঙ্গাচড়া ও সিটি করপোরেশনের ১-৮নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন-গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোর্কার হোসেন সুজন। জামায়াতের প্রার্থী রংপুর মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু ও গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা হানিফ খান সজিব।

 

রংপুর-২ আসন (তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ) : এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক সংসদ-সদস্য পরিতোষ চক্রবর্তী, বদরগঞ্জ পৌর কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, বদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক এবং পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল। জামায়াতের প্রার্থী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মাওলানা মো. আশরাফ আলী। রংপুর-৩ আসন : রংপুর সদর ও সিটি করপোরেশনের ৯-৩৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ও রংপুর মহানগর কমিটির সদস্য রিটা রহমান, রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, মহানগর কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন এবং রংপুর মহানগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু। জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মদ আমিরুজ্জামান পিয়াল।

রংপুর-৪ আসন (কাউনিয়া ও পীরগাছা) : এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও পীরগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আফসার আলী, কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা এবং পীরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। জামায়াতের প্রার্থী রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মুহাম্মাদ জাহিদ হাসান এবং এনসিপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা আখতার হোসেন।

রংপুর-৫ আসন (মিঠাপুকুর) : এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন। জামায়াতের প্রার্থী রংপুর জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রব্বানী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অধ্যাপক গোলজার হোসেন।

রংপুর-৬ আসন (পীরগঞ্জ) : এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী অটোরিকশা ও ভ্যান শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আসফাকুল ইসলাম মনু। জামায়াতের অধ্যাপক মাওলানা মো. নূরুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী কেন্দ্রীয় সহকারী দপ্তর সম্পাদক বরকতুল্লাহ লতিফ।

জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসাবে খ্যাত রংপুরের ছয়টি আসনে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় থাকলেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, নির্বাচন করার সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

রংপুর-৬ আসনে (পীরগঞ্জ) মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে অনেক যোগ্য নেতা আছেন। তাই একাধিক ব্যক্তির মনোনয়ন প্রত্যাশা করাটা স্বাভাবিক। দলের পক্ষেই তো সবাই প্রচার চালাচ্ছেন। এতে ক্ষতি নেই। বরং দলের কথা জনগণের কাছে পৌঁছানোয় লাভ হচ্ছে। দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই সবাই নির্বাচনে কাজ করবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। দলের হাইকমান্ড যাকে প্রার্থী করবে, তার পক্ষে সবাই থাকবে।

রংপুর-৩ আসনে (সদর) মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু জানান, প্রচারে একাধিক ব্যক্তি অংশ নেওয়ায় দলে কোনো বিভাজন তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। এখানে অনেক যোগ্য নেতা আছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে আমরা সবাই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি সুসংগঠিত দল। দলের হাইকমান্ড যাকে প্রার্থী করবেন, সবাই তার পক্ষে আমরা কাজ করব। রংপুর জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রব্বানী বলেন, সারা দেশের মতো রংপুরের ছয়টি আসনেও দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলের পক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পক্ষে সাধারণ মানুষ ভোট দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এনসিপি নেত্রী তাকিয়া জাহান চৌধুরী বলেন, রংপুর-৬ আসনে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। তবে আমি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। দলের বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।

রংপুর-৩ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান পিয়াল বলেন, আমরা কোনো দলাদলিতে নেই। আমাদের পক্ষে জনগণ ভোট দেবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।