Image description
ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই বিএনপির মূল টার্গেট। সেভাবেই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে দলটি। এরই অংশ হিসাবে চলতি নভেম্বরের প্রথমার্ধের যে কোনো সময় অন্তত ২০০ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যা গত অক্টোবরে দেওয়ার কথা ছিল। পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট ইস্যুতে তৈরি রাজনৈতিক সংকট ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনার পথও খোলা রাখতে চায় বিএনপি। এ মুহূর্তে তারা এই ট্র্যাকের বাইরে যেতে চাচ্ছে না। দুই ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান চান। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারে। এদিকে সনদ ও গণভোট নিয়ে বিএনপির অবস্থান সমর্থন করেছে যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গে থাকা মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বিএনপির পাশে থাকবে বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট ইস্যুতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। এর মধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সরকারের ভেতরের কয়েকজন ব্যক্তিও যুক্ত রয়েছেন বলে তারা সন্দেহ করছেন। কিন্তু যতই উসকানি দেওয়া হোক না কেন বিএনপি কারও ফাঁদে পা দেবে না। মাঠের কোনো কর্মসূচির কথাও ভাবছেন না। নেতারা আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের মধ্য দিয়ে সরকার ও ঐকমত্য কমিশন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তাদেরই এখন এর সমাধান করতে হবে। কয়েকটি ইসলামি দল মাঠে আন্দোলন করছে, সরকারকে বিব্রত করছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই বিএনপি তা করতে চায় না। এজন্য বিএনপি সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া তফশিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমিশনের সভায় আলোচনা হয়নি, এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিএনপি। যা নিয়ে এখন একটি সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন সংকট তৈরি করেছে। তবে বিশ্বাস করি এই সংকট কেটে যাবে। এই দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত কঠিন একটি সময় পার হচ্ছি। এই সময়টা আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। বিএনপি সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করে চলবে। আমরা চাই জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে অন্তর্বর্তী সরকার মনোযোগী হোক।’

এদিকে গত অক্টোবরের মধ্যে অন্তত ২০০ আসনে একক প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। জানা গেছে, এর মধ্যে জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ায় একক প্রার্থী ঘোষণা পেছানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসের প্রথমার্ধের যে কোনো সময় একক প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আগামী সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকের পর দু-একদিনের মধ্যে একক প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, ‘অক্টোবর মাসের শেষ দিকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। সেটা তো হয়নি। দেখা যাক। শরিক দলের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেটা চূড়ান্ত করতেও একটু সময় লাগবে।’

সনদ ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপির পাশে মিত্ররা : এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করে তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিএনপির দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে কাজ করেছে তা বোকামি, মূর্খতা। যদি বুঝতেন তাহলে সনদ বদলাবার আগে বিএনপির সঙ্গে কথা বলতেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। কারও সঙ্গে কথা বলেননি। নিজের মতো করতে গেছেন। এটা এখন হজম করতে পারবেন? যদি তারা মনে করেন, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করলেই বিএনপি খুশি হয়ে যাবে, তা আমার মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিএনপিকেই।’

তিনি মনে করেন, ‘বিএনপির দাবি সঠিক। কারণ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের মতো পরিস্থিতি বর্তমানে দেশে নেই। দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে দুটো নির্বাচনের ঝুঁকি নেওয়ার অবস্থায় নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি নির্দিষ্ট বিষয়ে। তবে তারা কোনো নির্বাহী আদেশ দিতে পারে না। সেই সমর্থন আমরা তাদের দিইনি।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, গণভোটকে অনেকে সংসদের আসন নির্ধারণের ‘টুল’ হিসাবে ব্যবহার করছেন। আজকে যে গণভোটের দাবিটা তোলা হচ্ছে, ডিসেম্বরে যদি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হয়, সময় আছে এক মাস, এই সময়ে কি আরেকটা নির্বাচন সম্ভব?

বিএনপির অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে যখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করল, তখন সেটায় অনেক পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, তেমনটা বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে তারা আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা, বিশ্বাসের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছেন।’ বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদও।