বিএনপির দাবিতে জোট শরিককে দলীয় প্রতীক দেওয়ার নিয়ম পুনর্বহাল করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হলে তা জামায়াতে ইসলামী মানবে না বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেন, অগোচরে উপদেষ্টা পরিষদ আরপিও সংশোধন করছে। যা একটি দলের কাছে সরকারের নতি স্বীকার।
আগে আরপিওতে জোট শরিককে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ ছিল। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবে এ নিয়ে পরিবর্তন এনে গত সপ্তাহে আরপিও সংশোধনে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
এ পরিবর্তনের ফলে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। বিএনপির জোট শরিকরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। বিএনপি এবং এর মিত্র দলগুলো এর বিরোধিতা করছে। গত মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। যদিও গত আগস্টে খসড়া প্রস্তাবের সময় বিএনপি জোট শরিককে প্রতীক দেওয়া বন্ধের পক্ষে ছিল।
জামায়াত অভিযোগ করেছে, আরপিও সংশোধনের চারদিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জোট শরিকের প্রতীকে নির্বাচন করার নিয়ম পুনর্বহালের পক্ষে প্রস্তাব করেন। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে জামায়াত।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোটের সময় নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই শনিবার প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে ভিডিও বার্তায় ডা. তাহের বলেছেন, গত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এর আগের সপ্তাহে গৃহীত আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি দলের অযৌক্তিক দাবির কাছে নতি স্বীকারের শামিল। এর মাধ্যমে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়ে একটি দলের চাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে পরিষদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন তারই উদাহরণ।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদ উভয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রতিটি দল নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবে। জামায়াত সেই সিদ্ধান্তের পক্ষেই আছে, জাতিও একমত। এর পরিবর্তন হলে এর বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ হবে।
সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপির ভূমিকাকে অনাকাঙ্ক্ষিত আখ্যা দিয়ে ডা. তাহের বলেন, জনগণ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন চায়। নির্বাচনের ঠিক আগে এ ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা কোনো চাপে নতি স্বীকার করবেন না।
ডা. তাহের বলেছেন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া থেকে পিছিয়ে যাওয়া মানে হবে নিজেরই সংস্কার কর্মসূচি পরিত্যাগ করা। প্রধান উপদেষ্টা নিজের পরিকল্পনাকে নিজ হাতে ধ্বংস করবেন, এটা জাতি বিশ্বাস করে না। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ় অবস্থান নেবেন, সংস্কার বাস্তবায়নে সঠিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।