
সিলেটের একটি ভিডিও ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি দু’দিন আগের। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের পাশে রেখে বক্তব্য রাখছিলেন আরেক উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে তিনি দলের ভেতর ও বাইরে থেকে যারা বিরোধ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন; সিলেট জেলা ও নগর বিএনপি’র একটি অনুষ্ঠান ছিল কোর্ট পয়েন্টে।
মিছিলপরবর্তী সময়ে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। তার বক্তব্যের শেষপর্যায়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী বলে ওঠেন- ‘আমার বক্তব্য আর লম্বা করবো না। যার জন্য বক্তব্য লম্বা করেছিলাম তিনি এসে গেছেন। এখন তিনি বক্তব্য রাখবেন।’ তবে খন্দকার মুক্তাদিরকে পাশে রেখে আরিফুল হক চৌধুরী বিরোধ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘এই সিলেটে আমরা প্রমাণ করতে চাই আমাদের মধ্যে কোনোভাবে কোনো বিরোধ নেই। আমরা একই দলের, একই চেয়ারম্যানের নির্দেশে, একই ভাবে আছি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। কেউ ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করলে ভুল করবা। আমরা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অটল। আমরা দলীয়ভাবে কাজ করে যাবো।’ আরিফের এই বক্তব্যে তাৎক্ষণিক সায় দেন উপস্থিত থাকা সিলেট বিএনপি’র নেতারা।
এ সময় সেখানে জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আরিফের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপিতে নানাভাবে বিরোধ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। মুক্তাদির ও আরিফকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে নানাভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ফলে ওইদিন আরিফুল হক চৌধুরী বক্তব্যে যে কঠোর নির্দেশনা এসেছে সেখানে প্রমাণিত হয়েছে সিলেট বিএনপিতে দলীয়ভাবে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ নেই। শুধু ওইদিনই নয়, সিলেটের দলীয় কর্মসূচিতে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী একসঙ্গে অংশ নিচ্ছেন। সিলেটে দলের সকল বিষয়ে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা। সিলেট বিএনপি’র বর্তমান সময়ে যে ক’জন অভিভাবক রয়েছেন তার মধ্যে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী অন্যতম। তারা দু’জনই চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
সিলেট-১ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে আব্দুল মুক্তাদির। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু প্রহসনের ওই নির্বাচনে তিনি মাত্র দু’ঘণ্টায় প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন। এরপর অনেকটা জোরপূর্বকই তাকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তবে ভোটের মাঠ থেকে তিনি সরে গেলেও প্রকাশ্যে সিলেটবাসীর কাছে বিচার দিয়ে মাঠ ছাড়েন। প্রায় ১২ বছর ধরে সিলেটের রাজনীতিতে সরব রয়েছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। বলা হচ্ছে; সিলেট জেলা ও নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে নেতাকর্মীরা এখন তার নেতৃত্বেই চলছেন। অন্যদিকে সিলেটের ভোটের রাজনীতির ‘ম্যাজিকম্যান’ বলা হয় আরিফুল হক চৌধুরীকে। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৩ সালে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনেও তিনি ফের মেয়র নির্বাচিত হন। দু’দফা সিটি মেয়র থাকায় সিলেটের রাজনীতিতে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ২০২৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী দলের সিদ্ধান্ত মেনে সিটি নির্বাচনে অংশ নেননি। এরপর থেকে আরিফুল হক দলীয় রাজনীতিতে সরব রয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি সিলেটের নির্বাচনী মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তার আগে তিনি মানুষের ‘ইজাজত’ নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গত শুক্রবার তিনি নগরের শেখঘাট জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে জনগণের সঙ্গে প্রার্থী হওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। তবে; এখনই তিনি চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা দেননি তিনি।