Image description
ধর্মভিত্তিক দলের মেরূকরণ

রাজধানীতে সমাবেশের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক মেরূকরণ বার্তা দিয়েছে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো। এক সময়ে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী বিএনপি’র বাইরে গিয়ে নতুন একটি  রাজনৈতিক ফ্রন্ট গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ইসলামী কয়েকটি দল এই মেরূকরণে একসঙ্গে আছে। এর বাইরেও আরও কয়েকটি দল এই রাজনৈতিক মেরুতে অংশী হতে যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নতুন এই রাজনৈতিক মেরু তৈরি হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য, রাজনীতিতে সামনে আরও নানা সমীকরণ হবে। জামায়াত তাদের মতো করে জোট করতেই পারে। এটা দেশ ও রাজনীতির জন্য ভালো। সংসদে শক্তিশালী সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রয়োজন রয়েছে। শক্তিশালী পক্ষের মধ্যে ভোটের লড়াই হলে দেশের গণতন্ত্র সুসংহত হবে। 

গত শনিবার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করেছে জামায়াত। সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিসহ জামায়াতের অন্য নানা দাবির সঙ্গে যেসব দল মোটামুটি একমত তাদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে সমাবেশ থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়া জামায়াত আমীরকে দেখতে সেখানে ছুটে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় তাৎক্ষণিক মির্জা ফখরুল হাসপাতালে ছুটে যাওয়াকে রাজনীতির অঙ্গনে উদার বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির এই উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন অনেকে। 

বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াত তাদের সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানায়নি। আমন্ত্রণ জানালে বিএনপি’র নেতারা সমাবেশে যেতেন কিনা তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। তবে জামায়াতের আমীর অসুস্থ হওয়ার পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। এতে প্রমাণিত হয় যে, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে যে দুঃশাসন করেছে, সেই অপশাসন থেকে বের হয়ে আসার এটা একটা প্রতীক। আমন্ত্রণ জানালো কি জানালো না সেটা বিষয় না। বিএনপি উদারতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আগামীতেও এই রাজনীতি করবে বিএনপি। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মানবজমিনকে বলেন, রাজনীতিতে নানা সমীকরণ হবে। আর জামায়াত জোট করতেই পারে। আর আমরা বলেছি যে, যুগপৎ আন্দোলনের শরীক দল ও জোটদের নিয়ে আমরা ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠন করবো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, রাজনীতিতে সবারই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ আছে। ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোকে জোটবদ্ধ করার যে উদ্যোগ জামায়াতে ইসলামী নিয়েছে, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ জনগণ একটা জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এজন্য সংসদে একটি শক্তিশালী সরকারি দল ও বিরোধী দল প্রয়োজন। 

বিএনপি  জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠন করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে সমমনা দলের বাইরে থাকা দলের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা এটা এখনো পরিষ্কার নয়। 
বিএনপি’র দলীয় সূত্রের দাবি, সম্প্রতি বেশকিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলটির সঙ্গে জামায়াতের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। এ কারণে জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা রাজনীতিতে খুবই খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করছে বলে মনে করছেন বিএনপি’র নেতারা। বলছেন, এজন্য পলাতক স্বৈরাচার হরতাল ডাকে, গোপালগঞ্জে হরতাল ডাকে। এর মাধ্যমেই তারা ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন তারা।  

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, জামায়াতের রাজনৈতিক ধরন পরিষ্কার নয়। তারা একবার বলছে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে, আরেকবার বলছে, নির্বাচন এপ্রিলে। আবার পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে। অপরদিকে, আবার প্রতিটি আসনে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর দেশের ক্রুশিয়াল মোমেন্টে জামায়াতের রাজনীতি সবসময় জনশ্রোতের বিপরীত। এখন মিলছে তারা পল্টিবাজ চরমোনাই পীরের সঙ্গে। যা অন্যান্য ইসলামী দলগুলো ভালোভাবে দেখছে না।

ওদিকে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে নাকি জোটগতভাবে অংশ নেবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সমমনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সমমনাদের কিছু আসন ছাড় দেবে বিএনপি। আসন বণ্টনের সুযোগ না পেলেও তাদের নিয়ে সরকার গঠন করবে বিএনপি।  
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ২০১৮ সালে আমরা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সময়মতো এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো। এরপরে আপনাদের জানানো হবে।