Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম। কিন্তু চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। চট্টগ্রামের দিকে অনেক অপশক্তি দৃষ্টি দিচ্ছে। চট্টগ্রামকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হলে সমগ্র বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। চট্টগ্রাম নগরীতে বহু নাগরিক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। এই চট্টগ্রামকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। 

রোববার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যানে এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। 

কক্সবাজারে ঘটনার কথা উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজারে সত্য উন্মোচন করেছেন। এ কারণে আমাদের ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলা করা হয়েছে। বাঁশখালীতে এনসিপির সংগঠকের ওপর হামলা করা হয়েছে। ব্যানারে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই- বাধা দিলে বাধবে লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে। বাধা দিয়ে থামানো যাবে না। 

তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মনে করি। চট্টগ্রাম নতুন অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য আমরা পুনরুদ্ধার করব। এই চট্টগ্রামকে আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে নাগরিকের চট্টগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করলাম। গুটিকয়েক পরিবারের হাতে চট্টগ্রামকে আমরা ছেড়ে দেব না। এখানে পাহাড়ি-বিহারি, হিন্দু-মুসলমান, সব জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে হবে। সব সম্প্রদায়ের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামকে বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামের নাগরিক সমস্যার সমাধান করতে চায়। এই চট্টগ্রাম নগরী নানা লুটেরা, নানা মাফিয়ার কারণে বেহাল। এই চট্টগ্রাম নগরীকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে, নতুন করে সাজাতে হবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা নতুন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। আমরা দেশ গড়ার জন্য পদযাত্রা শুরু করেছি। এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই- যেখানে বৈষম্য থাকবে না, চাঁদাবাজি থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না, স্বৈরতন্ত্র থাকবে না।’ 

 

এ সময় নাহিদ চট্টগ্রামের ভাষায়- ‘বউত দিন হাইয়ো, আর না হাইয়ো’ স্লোগানে নেতাকর্মীদের মাতিয়ে তুলেন। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।  এদেশের মানুষকে পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির শিকার হতে হয়। শিক্ষাবোর্ডে গেলে, থানায় গেলে, সচিবালয়ে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে অতীতে বিভাজন করা হয়েছে। এখন বাঙালি-অবাঙালি, সুন্নি এবং অসুন্নির মধ্যে আর বিভাজন করা যাবে না। চট্টগ্রামের মানুষ ধর্মপ্রাণ। অতীতে ধর্ম পালনের কারণে নিপীড়ন করা হয়েছে। এখন এসব চলবে না। 

এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ঢাকায় ১৬ জুলাই প্রতিরোধ করা হয়েছিল। এর একদিন আগে চট্টগ্রামে প্রতিরোধ হয়েছে। চট্টগ্রাম লড়াইয়ের শহর, প্রতিরোধের শহর। আমরা স্বৈরাচার হটিয়েছি, কিন্তু সফল রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। আমাদের এখন রাষ্ট্র গঠনে মনযোগ দিতে হবে। অতীতে বাংলাদেশে যারা শাসন করেছে তারা কেউ দিল্লীকে, কেউ লন্ডনকে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। তারা লুটপাট করে সেখানে পালিয়েছে। এখন তরুণ প্রজন্ম জেগেছে। এই তরুণ প্রজন্মকে টাকা দিয়ে কেনা যায়নি। হাসিনা কিনতে পারেনি। আমরা এই প্রজন্ম বাংলাদেশকে গড়ব।

সন্ধ্যা ৬টা সমাবেশে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিকাল ৪টার পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে এনসিপির নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। সমাবেশকে ঘিরে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিপ্লব উদ্যানের আশপাশে উচু ভবনেও মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন করা হয় গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি, সোয়াতসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। 

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে জমায়েতের পর পদযাত্রা নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেইটের বিপ্লব উদ্যোনে আসেন নেতাকর্মীরা। ঢোল ও বাদ্যের তালে তালে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান নেতাকর্মীরা। হাজারো নেতাকর্মী এসময় ‘মুজিববাদ-মুর্দাবাদ, ইনকিলাব-জিন্দাবাদ, আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই, কথায় কথায় বাংলা ছাড়-বাংলা কি তোর বাপদাদার’- এ ধরনের নানা গ্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা। পদযাত্রায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ অন্যরা। পদযাত্রা এগিয়ে যাবার সময় সড়কের দু’পাশে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। নাহিদ ইসলাম বারবার হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান।

গত শনিবার থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মসূচি শুরু করে এনসিপি। শুক্রবার রাতেই কেন্দ্রীয় নেতারা কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। শনিবার সকালে প্রথমে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। শহরের প্রধান সড়ক হয়ে পাবলিক লাইব্রেরির শহিদ দৌলত মাঠে সমাবেশ করে এনসিপি। এরপর চকরিয়া উপজেলায় গিয়ে সমাবেশ করে বান্দরবানে গিয়ে কর্মসূচি পালন করেন নেতারা।

বান্দরবান থেকে রাতে চট্টগ্রাম নগরীতে ফেরেন এনসিপি নেতারা। রোববার সকালে রাঙামাটিতে কর্মসূচি শেষ করে সরাসরি চট্টগ্রাম নগরীতে আসেন এনসিপি নেতারা। সোমবার সকালে তারা খাগড়াছড়িতে গিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।