
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা এখনো ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) টিপ দেওয়াটা শেখাতে পারিনি, এখন আমরা আছি পিআর নিয়ে। এখানে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে যে যার ভাগ-বাঁটোয়ারা পাবে, এ নিয়ে ব্যস্ত আছে। কিন্তু গণতন্ত্রের কী অবস্থা হবে, কোনো দল সরকার গঠন করার মতো মেজরিটি (সংখ্যাগরিষ্ঠতা) পাবে কি না এবং তাহলে অস্থিতিশীল একটা ঝুলন্ত সংসদ হলে দেশের কী অবস্থা হবে, এসব কিছু তাদের মাথায় নেই। সারা দেশে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ভোট পেলে একটা সিট পাবে, এই চিন্তায় তারা আছে।’
গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জুলাই আপ্রাইজিং অ্যান্ড রিউমার ইন পলিটিকস’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস নামের একটি প্ল্যাটফরম এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগকে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়ে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ‘মরিয়া’ প্রমাণ করেছে, তারা ভারতের লোক। কোনো অবস্থায়ই যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না হয়, সে আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত মরিয়া প্রমাণ করিল, তারা ভারতের লোক। কারণ, তারা (দেশকে) ভারতের করদরাজ্য বানানোর জন্য এখানে অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা জায়গায় তারা সফল হয়েছে যে নিজে অন্তত আশ্রয়টা পেয়েছে, এইটুকু।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের মহাসমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, আমাদের কেউ কেন যায়নি। আমাদের দাওয়াতই দেয়নি, যাব কীভাবে! দাওয়াত দিলেই যে যেতে পারত, এমনো তো না। সবকিছুতেই ব্লেম (দোষারোপ) করা।’ বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘সংস্কার কেন হচ্ছে না, এ জন্যও বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। আমি প্রতিনিয়ত মিডিয়াতে বলছি যে সংস্কারের যখন কেউ ‘স’ উচ্চারণ করেনি, তখন আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি আরো দুই বছর আগে। এই সরকারের দায়িত্ব নেওয়ারও এক বছর আগে।’ এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে যারা পলুটেড (কালিমালিপ্ত) করে বা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে অপমানিত করে যারা বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের অপপ্রচার করছে, এর শেষ কী? এর শেষ হচ্ছে, আমরা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ইতিহাসকে অপমান করছি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এখন আমরা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ছি। এখনো নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা হয়নি। এখনো নির্বাচন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কোনো নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। সেই অবস্থার মধ্যেই সবাই পিআর পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) বলে চিল্লাচ্ছে। আজকেও পিআর পিআর করে মহাসমাবেশ একটা করছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ ত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একটা উন্নত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ সৃজন করার জন্য যে সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা যেতে চাচ্ছি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যে তাগিদ, এগুলো সবকিছু পূরণ করার জন্য আমাদের একটা দ্রুত নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দরকার।’ গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দীন হায়দার, আইনজীবী রাশনা ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সালমা বেগম ও তানভীর হাসান জুয়েল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলরের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম প্রমুখ।