নিউ ইয়র্ক শহরের জ্যাকসন হাইটস্ এলাকা অনেকটা লন্ডনের ব্রিক লেনের মতো, দুটোই বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। যেন ওই দুই শহরে দুই টুকরো বাংলাদেশ। বাংলাদেশিদের ভিড়ভাট্টা, তাদের পোশাক-আশাক, কথাবার্তা, দোকানপাটের পসরা ইত্যাদি দেখলে মনে হয় যেন বাংলাদেশেই আছি, স্বল্পসংখ্যক কিছু বিদেশি কালো-ধলো মানুষ বাঙালিপাড়ায় ঘুরতে এসেছে।
অনুমান করি, জ্যাকসন হাইটসের এই বাঙালি পরিবেশ, ভক্ত-অনুরাগীদের মুহুর্মুহু 'অমুক ভাইয়ের আগমন/শুভেচ্ছা স্বাগতম,' 'অমুক ভাই এগিয়ে চলো/ আমরা আছি তোমার সাথে' জাতীয় স্লোগান, সেই সঙ্গে কয় দিন ধরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে-হোটেলের লবিতে পথেঘাটে প্রটোকলের আদিখ্যেতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গসুখ, নরেন্দ্র মোদি-বান কি মুন (বাংলা তরজমা করলে কি বানরুটির চাঁদ জাতীয় কিছু দাঁড়ায় নাকি?) গয়রহের দুর্লভ দর্শনলাভ ইত্যাদির রোমাঞ্চ হয়তো বাংলাদেশের ওই বিশাল বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচির মতো প্রতিনিধি দলের কারো কারো দুর্বল পরিপাকযন্ত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করলেও করতে পারে। তবে জ্যাকসন হাইটসের সেই সংবর্ধনা সভায় (ইতিমধ্যে যেটা বোধ করি ঐতিহাসিক সভার মর্যাদা লাভ করেছে) যে ব্যক্তিটি ছিলেন মধ্যমণি তাঁর পাকাশয়ে ওসব কড়াপাকের বস্তুগুলো যে বিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল, তার পরিণতিতে সেই সাবেক মাননীয়টি রাজনৈতিকভাবে হয়ে গেলেন লতিফ থেকে 'লেইট লতিফ'। জ্যাকসন হাইটস নয়, যেন চৌথা আসমানের হাইটস থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরের অতল তলে তলিয়ে গেলেন মন্ত্রী নামদার।
২.
এই মন্ত্রীর 'ট্র্যাক রেকর্ড' ঘাঁটলে দেখা যাবে, তিনি যখন-তখন যেমন-তেমন মুখ চালাতেই শুধু অভ্যস্ত নন, 'হাত থাকতে মুখ কেন' থিওরিতেও তিনি কম পারদর্শী নন। তাঁর দাপটে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-প্রশাসক সবাই একঘাটে পানি খায়, এক গামছায় গা মোছে। তিনি হুমকি দেন, যারা হরতাল করবে, তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে কতল করা হবে। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দম্ভোক্তি করেন : আরো অনেক বক্তা থাকতে পারে, লতিফ সিদ্দিকী একজনই। যে কায়দায় তিনি 'আমি মানি নাকো কোনো আইন/আমি ভীম ভাসমান মাইন' (বিদ্রোহী : কাজী নজরুল ইসলাম) ঘোষণা দিয়ে শত শত কোটি টাকার সয়-সম্পত্তি কল-কারখানা একে-ওকে খেলাত করেছেন, নিজেও হাতিয়েছেন, তা দেখে আকবর বাদশাহও বোধ হয় কবরে শুয়ে লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছেন। শোনা যায়, তাঁর এই বিজয়-অভিযান তিনি সগৌরবে চালিয়ে গেছেন দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিত্ব লাভের পরও।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের এই জয়ললিতা (পুং) এত সাহস ও শক্তি পেলেন কোথায় যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস প্রথম দফায় পাঁচ বছর ও দ্বিতীয় দফায় আট মাস বুক চিতিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে নানা ধরনের কীর্তির পাহাড় গড়ে তুললেন, লিপ্ত হয়ে পড়লেন সাগর-মহাসাগরসদৃশ গাপ্পুতে। একটি দিন একটিবারের জন্যও কি কেউ তাঁর 'বসের' নজরে বিষয়গুলো আনেনি? বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যে বসের একচ্ছত্র আধিপত্য ও লৌহশাসনে গাছের পাতাটিও নড়তে সাহস পায় না, ঝড়ের মুখেও সিসা হয়ে থাকে, সেই বস এ ব্যাপারে বিশেষভাবে অজ্ঞ ছিলেন। আমলা-কামলারা না হয় বুঝলাম চাকরির ভয়ে কিংবা মিলাপ-জোলাপের কারণে মুখে কুলুপ সেঁটে থাকে, আর অন্য সহযাত্রীদের নীতিই তো হচ্ছে 'কাকে কাকের মাংস খায় না,' কিন্তু দেশের কয়েক গণ্ডা গোয়েন্দাবাহিনী, 'বসের' নিজস্ব চ্যানেলসমূহ ও হাল আমলের মঞ্চ-দাবড়ানো 'হাইব্রিড বাহিনী,' তারা কী করে? 'বস' নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এসব বিষয়ে আমজনতার মধ্যে ব্যাপক ফিসফাঁস চাউর আছে।
লতিফ থেকে সহসাই রাজনৈতিকভাবে 'লেইট লতিফ' হওয়ার পথে
৩.
আসলে আমাদের আজকের আলোচ্য হুজুর বাড়তে বাড়তে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছিলেন। আর আল্লাহতালা পবিত্র কুরআন শরিফে তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আমাদের সিলেট অঞ্চলে বলে, 'পাপ জুয়ান অইলে আর সামলানি যায় না।' আমাদের আজকের নায়কেরও বোধ হয় পাপ জোয়ান হয়ে গিয়েছিল। আর সেই জোয়ান মদ্দা পাপ জ্যাকসন হাইটসের 'আমার ভাই তোমার ভাই/অমুক ভাই অমুক ভাই' মার্কা স্লোগানের জোশ ও খোল-করতালের ঝনঝনানি সহ্য করতে না পেরে পুরীষগন্ধি বচনামৃত হয়ে মুখগহ্বর দিয়ে ভকভক করে নিঃসৃত হতে থাকে। তবে হ্যাঁ, এ কথা মানতেই হবে, নিজের বক্তব্যে অটল হয়ে থাকার বুকের পাটা আছে এই ইমানদার বক্তার। পরবর্তী পর্যায়ে বিবিসিকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেওয়া বক্তব্য তার প্রমাণ।
তিনি হয়তো একজন পাঁড় নাস্তিক মানুষ অথবা ইসলামের বিধানসমূহের একজন বিপ্লবী তফসিরকারী হিসেবে পার পেয়ে যেতেন, যদি না আওয়ামীওয়ালাদের জন্য একটি অতীব স্পর্শকাতর ইস্যু ধরে টান দিতেন। আমাদের সিলেটেই আরেকটি লোকপ্রিয় প্রবাদবাক্য আছে : হক্লর লগে আতাআতি, দারোগার লগেওনি? (সবার সঙ্গে হাতাহাতি করো, তাই বলে দারোগার সঙ্গেও করবে নাকি?); বিশেষ করে দারোগা সাহেব যেখানে তোমাকে সবিশেষ সমাদর পুরঃসর তোমার অন্তত পাঁচ-ছয় বছরের ঝলমলে আমলনামা সত্ত্বেও এখনো মন্ত্রিসভায় রেখেছেন, তুমি সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য নও, তবুও তাঁর আশপাশে তোমার উপস্থিতি সহ্য করছেন, আর তুমি কি না তাঁরই পুত্র সম্পর্কে এমন তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য করলে? একেই বোধ হয় বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা। দারোগা সাহেব আইনের মানুষ, অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় পুত্রসংক্রান্ত বিষয়ের ধারে-কাছেও গেলেন না, তিনি কোপটা মারলেন ঝোপটা বুঝেই। ১৬ কোটি মানুষের যে কারণে ক্ষোভ, তিনি বোঝাতে চাইলেন, তাঁর ক্ষোভটাও সে কারণেই। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনকানুনের লঙ্ঘনকেই তিনি হাইলাইট করলেন। ছেলের ব্যাপারটা বেমালুম এড়িয়ে যাওয়া তাঁর কূটকৌশল কি না তা নিয়ে যার খুশি মাথা ঘামাক, আপাতত আমরা দেখতে পাচ্ছি তিনি ইসলাম, সংবিধান, আইন, দেশবাসীর সেন্টিমেন্ট এগুলোকে সামনে নিয়ে এসে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতিকে পাশে ঠেলে দিলেন। অবশ্য কেউ বললেও বলতে পারে তাঁর ছেলেসংক্রান্ত আঁতে ঘা লাগা বক্তব্য না দিলে এই দুর্মুখ ব্যক্তিটি এ যাত্রা হয়তো পার পেয়ে যেতেন।
জনাব সদ্যসাবেক মন্ত্রীর আম-ছালা দুটোই গেছে। তিনি প্রথমে তাঁর দলের শীর্ষ পর্যায়ের পদটি হারিয়েছেন, পরে খুইয়েছেন মন্ত্রিত্ব। বিষয়টি নিয়ে ফোনে আজ আমি বিদেশে এক বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমি তাঁকে আম-ছালা দুটো হারানোর প্রায়শ উচ্চারিত বাংলা প্রবচনটির শাব্দিক ইংরেজি অনুবাদ করে শোনালাম এভাবে : হি হ্যাজ লস্ট বোথ হিজ ম্যাংগো অ্যান্ড দ্য গানি ব্যাগ। সেই ব্যাটাচ্ছেলে তো কোনো দিন কোমরে চটের ছালা বাঁধা অবস্থায় কাউকে গাছে উঠে আম পাড়তে দেখেনি। তাই আমার ম্যাংগো ও গানি ব্যাগের উপমাটা ঠিক বুঝতে পারছিল না। যখন তাকে আমি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম, তখন সে খুব একচোট হেসে বলল, তা হলে তোমার কি মনে হয়, এখন এই লোককে ঠাণ্ডায় ফেলে রাখা হবে (দেন, হোয়াট ডু ইউ থিংক, হি উইল বি লেফট ইন দ্য কোল্ড নাউ?)? জবাবে আমি বললাম, প্রশ্নই আসে না। একে তো আমাদের দেশের আবহাওয়া তোমাদের দেশের মতো এত ঠাণ্ডা না যে তিনি বরফে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে জমে যাবেন। দ্বিতীয়ত, আমাদের গুণগ্রাহী কদরদান নেতা-নেত্রীরা আর যাই হোক, এত মূঢ় না যে এই কয় দিনে বিত্ত-বৈভবে ফুলে-ফেঁপে ওঠা একজন মারকুটে নেতাকে বসিয়ে বসিয়ে বেকার-ভাতা দেবেন! তা ছাড়া মার্কিন মুল্লুকের সভ্য পরিবেশে যে লোক প্রকাশ্য জনসভায় (ধরে নেওয়া যাক, সেখানে সীমিতসংখ্যক হলেও মহিলারাও উপস্থিত ছিলেন। তার সহধর্মিণী ছিলেন কি না জানি না।) অশ্লীল ভাষায় বিদ্বজ্জনদের উদ্দেশে গাল পাড়তে পারে, তাকে তো এ দেশের রাজনীতিতে সবার আগে দরকার! ক দিন পর নির্বাচন এলে তো আর কথাই নেই।
তবে হ্যাঁ, অকপটে স্বীকার করছি, এত খিস্তি-খেউড়ের মধ্যে এই বক্তার অনুজের বক্তব্যটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। টিভির পর্দায় দেখলাম একজন বিক্ষুব্ধ, মর্মাহত, অনুতপ্ত ছোট ভাই অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে, সাশ্রুনয়নে 'গলগামছা' হয়ে খুবই মার্জিত ভাষায় আন্তরিকভাবে তাঁর বেপথু অগ্রজের দুষ্কৃতির জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন। ক্ষমতার দর্পে অন্ধ, অহঙ্কারী অগ্রজের কাছে এটা হয়তো মনে হতে পারে বাড়াবাড়ি, কিন্তু আমার মতো সাধারণ মানুষ বলবে, এটাই ভদ্রতা। একাত্তরে যে ব্যাঘ্রগর্জনে প্রকম্পিত হয়েছিল বাংলার প্রান্তর, আজ শতধাবিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এমন সবিনয় নিবেদনের বড় বেশি দরকার।
বাঘা সিদ্দিকী যখন বলছেন, তখন দেশবাসী হয়তো তাঁর বড় ভাইকে ক্ষমা করে দেবে। তা ছাড়া যে রাসুলাল্লাহ (দ.)-কে নিয়ে সাবেক মাননীয় সাহেব কটূক্তি করেছেন, তাঁর জীবনের আদর্শও তো ক্ষমা। আল্লাহ গাফুরুর রাহিমও কুরআন পাকে অজস্রবার অঙ্গীকার করেছেন, বান্দা কোনো গুনাহের জন্য অন্তর থেকে ক্ষমা চাইলে, তওবা করলে, তিনি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। তবে তওবা করতে হবে। অর্থাৎ ভুল স্বীকার করে ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হতে হবে ও মার্জনা ভিক্ষা করতে হবে। সেই সঙ্গে ওই ভুলের পথ থেকে চিরতরে ফিরে আসতে হবে। বাঘা সিদ্দিকীর অগ্রজ কি তা পারবেন? এখন পর্যন্ত তাঁর যে আচরণ আমরা দেখলাম, তাতে তো তা মনে হয় না। তিনি কি মানবিক পথে না চলে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে পুরো বিষয়টিকে ঠেলে দিয়ে ফাঁকতালে কেটে পড়তে চাইবেন? জানি না। যদি তা করেন, তবে সেটা হবে তাঁর জন্য আত্মঘাতী। আর দেশবাসী পাবে তাঁর দলকে আরেক দফা চেনার সুযোগ।
৪.
এবার আসা যাক বিষয়টির আইনগত বিচার-বিশ্লেষণে। সাবেক মাননীয় সাহেব যে কাজটি করেছেন, তাতে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে অবশ্যই তাঁর বিচার করতে হবে। আমরা কথায় কথায় বলি, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। অথচ আইন প্রয়োগের সময় এলেই শুরু হয়ে যায় বাছ-বিচার। দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সেই সঙ্গে ফৌজদারি আইনের আওতায় অন্যান্য গুরুতর অপরাধের জন্য নানা ছুতায় অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলেই দেশে অপরাধ বাড়ছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন আদালতে নিউ ইয়র্কের এই ঘটনায় বোধ হয় অর্ধ-শতাধিক মামলা হয়েছে। দেশবাসী অবশ্যই চাইবে, এগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত সমাপ্তির পথে এগিয়ে যাক। আলোচ্য ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি এই সাবেক মাননীয় না হয়ে কোনো সাধারণ নাগরিক হলে কী হতো? কিংবা বিরোধী দলের কেউ?
আমাদের সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় অসংখ্য অসংগতি আছে। তার মধ্যে একটি বড় অসংগতি হচ্ছে একই আইনের ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগ। রাস্তায় লালবাতি জ্বলা অবস্থায় একজন রিকশাওয়ালা তার রিকশা চালিয়ে দ্রুত চলে যেতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামিয়ে হেনস্তা করছে অথচ পরক্ষণে আইন রক্ষাকারী কোনো কর্তৃপক্ষের গাড়ি- তা সে মন্ত্রীর গাড়ি হোক বা কোনো পুলিশ অফিসারের গাড়ি হোক- ভেঁপু বাজিয়ে চলে গেলে ওই একই পুলিশ তাকে থামানো তো দূরের কথা বরং দ্রুত অ্যাটেনশন হয়ে স্যালুট দিচ্ছে। রেল লাইনের পাশের দিনমজুর ও খেটেখাওয়া মানুষদের বস্তি বুলডজার দিয়ে এক নিমেষে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়; অথচ অনেক উঁচুতলার মানুষ বুড়িগঙ্গা নদী, গুলশান লেক, সরকারি জমি ইত্যাদি জবরদখল করে বিশাল অট্টালিকা, কল-কারখানা বানিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন, কেউ তা নিয়ে টুঁ শব্দও করছে না। এ ধরনের দুমুখো নীতি দিয়ে দেশে আর যাই হোক সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
৫.
এই সাবেক মাননীয় সাহেবের ঘটনা থেকে একটি বিষয় আমাদের নতুন করে স্মরণ করা উচিত। ক্ষমতা, ধন-দৌলত, মান-ইজ্জত- এগুলো যেমন বন্যার পানির মতো হু হু করে আসতে পারে, তেমনি এক মুহূর্তের সুনামির ঢেউয়ে তা আবার চোখের পলকে বিলীনও হয়ে যেতে পারে। সেই যে আমাদের ছোটবেলায় শোনা জনপ্রিয় গান : নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা/সকালবেলা আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা। সাবেক মাননীয় সাহেব, যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে রাতারাতি আমির বানিয়েছিলেন, তিনিই আপনার তখত্ কেড়ে নিয়ে ফকিরি হালতে ফেলতে পারেন, চরম জিল্লতির ভেতর দিয়ে কাটতে পারে আপনার বাকি সময়। আপনার বস 'দারোগা সাহেব' আপনার চাকরি নট করেছেন, কিন্তু তিনি তো কিছুই না, তিনি তো নিমিত্ত মাত্র, উসিলা। আসল হুকুমটা তো আসে বসেরও যিনি বস, এই আঠারো আলমের যিনি মালিক, নিয়ন্তা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, তাঁর কাছ থেকে। তিনি তো কুরআনপাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন : ...ওয়া তুই'য্যু মানতাশা-উ, ওয়া তুযিল্লু মানতাশা-উ, বিআদিকাল খাইর। ইন্নাকা আ'লা কুল্লি শাইইন কাদির। (সূরা : আলে ইমরান, আয়াত ২৬)। '...যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মান দাও, যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করো। তোমার (কুদরতি) হাতেই কল্যাণ, নিশ্চয়ই তুমি সকল ব্যাপারে সর্বক্ষমতার অধিকারী।' এই বিধান, এই হুকুম, হে মাননীয়গণ, হে বসগণ, আপনাদের-আমাদের সবার জন্য দেওয়া হয়েছে। অতএব, কারোরই সীমা লঙ্ঘন করা উচিত নয়। আবারও বলি, আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। তা তিনি সরকারেই থাকুন আর বিরোধী দলেই থাকুন।
লেখক : সাবেক সচিব, কবি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন