|
রবার্ট ফিস
|
|
পুনর্জন্ম, পুনরুদ্ভাবন ও বাগ্মিতা নিয়ে মঞ্চে ওবামা
15 Sep, 2014
পুনর্জন্ম, পুনরুদ্ভাবন, বাগ্মিতা- কম করেননি বারাক ওবামা। এবার তিনি আমেরিকাকে নিয়ে যাচ্ছেন সিরিয়া ও ইরাক লড়াইয়ে। আর হ্যাঁ, তিনি পরাজিত করতে যাচ্ছেন ইসলামিক স্টেট, তাদের 'বর্বরতা', 'গণহত্যা' ও 'ভ্রান্ত আদর্শ'কেও; যতক্ষণ না এগুলো 'দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন' হয়ে যায়।
ওবামা সুন্নি 'এওয়াকেনিং কাউন্সিল'কে পুনর্জন্ম দিতে যাচ্ছেন; যার উদ্ভাবক ছিল জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস, আমেরিকার ইরাক দখলযুগে যাদের কাজ ছিল আল-কায়েদার সঙ্গে লড়াই করা। কিন্তু তাদের গুঁড়িয়ে দেয় আল-কায়েদা এবং শিয়া প্রভাবদুষ্ট ইরাকি সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। ওবামা তাদের নামও দিয়েছেন একটা- ন্যাশনাল গার্ড ইউনিট; যাদের কাজ হবে আইএস জঙ্গিদের থেকে সুন্নিদের নিরাপদ রাখা। জাতীয় গার্ড বটে!
ওবামা পুনরুদ্ভাবন করতে যাচ্ছেন 'মধ্যপন্থী' সিরীয়বিরোধী পক্ষকেও, যাদের একসময় বলা হতো ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। ঘরপালানো, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং পশ্চিমা ও আরব মিত্রদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার কিছু ব্যক্তির গড়ে তোলা যে বাহিনীর আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ভুতুড়ে সেনা দলটিকে এখন বলা হবে 'সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন' এবং এর প্রশিক্ষণ চলবে সর্বত্র; যার মধ্যে আছে সৌদি আরবও। অথচ এই দেশটির নাগরিকরা বহু বিলিয়ন ডলার দিয়ে গড়ে তুলেছে আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট ও জাবাত আল-নুসরার জঙ্গিদের।
এবার বাগ্মিতা প্রসঙ্গ। ওমাবা বলেছেন, 'তিনি সিরিয়ার আইএসআইএলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবেন না।' তার মানে তিনি সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শত্রুদের 'গুঁড়িয়ে' দেবেন। এই আসাদকেই না ওবামা গত বছর গুঁড়িয়ে দিতে চেয়ে শেষ মুহূর্তে থমকে দাঁড়ালেন! তো শত্রুর শত্রু বন্ধ হলে আসাদ এখন ওয়াশিংটনকে নতুন মিত্র বলেই দাবি করতে পারেন।
ওবামা আমাদের বলেছেন, 'আমেরিকা সেই সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করবে, যারা আমাদের দেশকে হুমকি দেয়।' এ ক্ষেত্রে আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে স্মরণ করতে চাই। ১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন মেরিন সেনারা বোমা হামলা চালানোর পর বুশ বলেছিলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে নাড়িয়ে দিতে পারবে- এমন কোনো সন্ত্রাসী কাপুরুষকেও আমরা বাঁচতে দেব না।' কিন্ত তারপর মার্কিন বাহিনীকে বৈরুত থেকে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছিল।
'ইসলামিক স্টেট' জবাই-ই শুধু করছে না, ধর থেকে মাথাও আলগা করে দিচ্ছে; জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে শত্রুপক্ষকে। মিকি মাউস আর চেঙ্গিস খানের মিশেলে একটি চরিত্র তাদের মধ্যে লক্ষণীয়। তারা তাদের 'আদর্শে' এতটাই নিষ্ঠাবান যে জবাই করার সময় গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েও কোনো কথা বলছে না।
এত শত কথা বলার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও কি একটি শব্দও গাজার মানুষের প্রসঙ্গে বলেছেন? দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় এ হচ্ছে মার্কিনিেিদর সেই পুরনো নীতি- মধ্যপ্রাচ্যে সর্বশেষ বৃহত্তম সংকটের পর আরো একটি বৃহত্তর সংকট মোকাবিলা করা। আর এ জন্য মার্কিনিদের ওপর ভরসা করতেই পারি!
লেখক : প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক, লেখাসূত্র : ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন