|
নূরুল আমিন চৌধুরী
|
|
কিভাবে বেঁচে আছেন কারী মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ
06 Sep, 2014
রাজধানী ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী লালবাগ শাহী মসজিদ। পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ চকবাজারের এই শাহী মসজিদে পাঞ্জেগানা নামাজসহ পবিত্র জুমার দিনগুলোতে ততোধিক জনাকীর্ণ জামাতের মিম্বরে দৃষ্টিনন্দন পবিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে নিষ্পাপ চেহারার মধ্যমদেহী যে হুজুরের কণ্ঠে লালিত্যময় জলদগম্ভীর সুরে খুৎবা পঠিত হতো, যার অনিন্দ্য দ্যোতনা মুসল্লিদের অন্তরের অন্তঃস্থলকে স্বর্গীয় মহিমার অন্তরঙ্গ স্পর্শে দোলায়িত করে আবিষ্ট করে রাখতÑ গত আট বছর থেকে সেই অলৌকিক কণ্ঠকে মহান আল্লাহ গাফুরুর রাহিম কেন যে স্তব্ধ করে রেখেছেন তা তিনিই ভালো জানেন।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ শুক্রবার, ১০ মহররমের আশুরার দিনের জনাকীর্ণ জুমার নামাজের জামাতেও ওই অলৌকিক কণ্ঠের ভাবগম্ভীর সুললিত তেলাওয়াতে লালবাগ শাহী মসজিদের পরিবেশে ছিল বেহেস্তী আবেশের ব্যঞ্জনা।
কেবল ঢাকার লালবাগ নয়, সারা বাংলাদেশ নয়, সমগ্র মুসলিম জাহানে সুবিদিত ও সমাদৃত পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ও জাদুকরী কণ্ঠের এই ব্যক্তিটি হলেন মাওলানা কারী মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ। জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা গ্রামে। পিতা আল্লামা শাহ মেহেরুজ্জামান। শিক্ষাগত যোগ্যতা দাওরা হাদিস এবং দাওরা তাফসির-ই কুরআন। তাজভিদ এবং কিরাতে প্রথম শ্রেণী প্রাপ্ত। ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ভোর বিহানে রেডিও অনুষ্ঠানের শুরুতে কারী মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহর মর্মস্পর্শী কুরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য উৎকীর্ণ হয়ে থাকত। সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমূলক কর্মকৃতীর জন্য কিছু মানুষ অসাধারণ হয়ে ওঠেন। আবার বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় কর্মকৃতীর পাশাপাশি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য কিছু মানুষ হয়ে ওঠেন অসাধারণ। কারী মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ এমন অসাধারণ মানুষদের একজন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন কারী হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ভূমিকায় বলা গেলে তিনিই প্রথম পথিকৃৎ। এতদসত্ত্বেও এই কৃতী পুরুষটি অর্থ, ক্ষমতা ও প্রাচুর্যের মোহে তার জীবনের একটি মুহূর্তও ব্যয় করেননি। দেশ, জাতি, ধর্মের স্বার্থে কুরআনের শিক্ষাকে কাজে লাগানো, কুরআনের মর্মার্থ ও মাধুর্যকে মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পাথেয় হিসেবে কার্যকরভাবে এর বিশুদ্ধ চর্চার প্রসারই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য।
একহারা গড়নের ছিমছাম দেহ ও রুচিশীল পোশাক-আশাক পরিহিত অলৌকিক বুলন্দকন্ঠের অধিকারী এই মহান ব্যক্তিটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও বাকপ্রতিরুদ্ধ হয়ে কামরাঙ্গীরচরের নিজ বাসভবনে বড় করুণ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। এটা ভাবতেই সব শরীর শিউরে ওঠে, চোখের পানিতে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, কলিজার মধ্যে চিনচিন করে ব্যথা করে। মহান আল্লাহ কী এ ব্যক্তিটির চলৎশক্তি ও তার বুলন্দকণ্ঠকে আর একবার সুললিত কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য খুলে দিতে পারেন না?
হৃদয়বান সবার কাছে আবেদন, দয়া করে মৃত্যুর সাথে অসহায়ভাবে বসবাসরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ব্যক্তিটির জন্য তার মৃত্যু অবধি মাসিক সম্মানীভাতা মঞ্জুর করে তার সুচিকিৎসা ও অসহায় অবস্থায় যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন।
লেখক : শিক্ষাবিদ
( নয়া দিগন্ত )
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন