|
মঈনুল আলম
|
|
গাজা আক্রমণে ইহুদিবিদ্বেষ ইউরোপে মাথাচাড়া দিচ্ছে
28 Aug, 2014
ইসরাইলের গাজায় বারবার এবং বেপরোয়া হামলায় শিশু, নারীসহ দুই হাজারের ওপর বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক হত্যার অন্যতম এবং সম্ভবত ইসরাইলের অচিন্ত্যপূর্ব প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপের একাধিক দেশে ইহুদিবিদ্বেষ (অ্যান্টি-সেমিটিজম) এমনভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে যে, তা ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। অনেক ইহুদি ইউরোপ থেকে বহির্গমন করছে অথবা বহির্গমন করার চিন্তা করছে।
ইউরোপের শিাবিদ ও গবেষক যারা ইহুদিবিদ্বেষের ওপর গবেষণা করেন, তারা বলছেন চলমান গাজা সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় ইহুদিদের নিন্দা করা এবং ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান শিতি মধ্যবিত্ত সমাজে এখন ক্রমেই অধিকতর গ্রহণীয় হয়ে উঠছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (আগস্ট ৯-১০ তারিখ সংখ্যা) ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম রাইজেস ওভার কনফিক্ট ইন গাজা’ (গাজা সংঘর্ষের ফলে ইহুদিবিদ্বেষের উত্থান হচ্ছে) হেডলাইন দিয়ে নিজস্ব প্রতিবেদকের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে এসব তথ্য পরিবেশিত হয়েছে।
ইসরাইলের বারবার গাজার ওপর হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ইউরোপে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ ও হামলা বিস্তার লাভ করছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে ইহুদিদের প্রতি হুমকি প্রদান এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রকাশ ছাড়াও ইহুদিদের ওপর সহিংস আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার ঘটেছে জার্মানিতে যেখানে হিটলারের আমলে ব্যাপকভাবে ইহুদি উৎখাত এবং লাখ লাখ ইহুদি নিধনের অনুশোচনায় আধুনিক জার্মান সমাজ ইসরাইলের অস্তিত্ব রার অধিকারকে সমর্থন করা জার্মানির রাজনীতি ও সমাজনীতির মৌলিক অঙ্গীকাররূপে গ্রহণ করেছে। এতদসত্ত্বেও জার্মানির শিাবিদ এবং সমাজ পর্যবেকেরা বলছেন, জার্মানিতে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষের একটি ক্রমবর্ধমান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে, যা গাজা সংঘর্ষের আগে ল করা যায়নি।
সম্প্রতি গাজায় হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিন সমর্থক বিােভকারীরা ইহুদিদের সমালোচনামূলক যে ধ্বনি তোলে জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল তার নিন্দা করেন। এর পর থেকে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক এবং সহিংস কিছু ঘটনা ঘটেছে জার্মানির অন্যতম প্রধান নগরী ফ্রাংকফুর্টে এবং একাধিক শহরে। যদিও জার্মানিতে পুলিশ ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিােভগুলো দমন করেছে, তবুও জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশে বসবাসকারী ইহুদিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
ফ্রান্সে বসবাসকারী ইহুদিরা ক্রমবর্ধমান হারে ফ্রান্স থেকে বহির্গমন করছে। গাজা হামলার পর থেকে ইহুদিবিরোধী বিােভ ফ্রান্সের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের বিােভগুলো সাধারণত শান্তিপূর্ণ থাকে। তবে হাতে গোনা কিছু ঘটনায় বিােভকারীদের মধ্যে কিছু আরব যুবক উত্তেজিত হয়ে ইহুদিদের ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়ে হামলা করেছে। ফরাসি কর্তৃপ এসব সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।
এমনকি ঐতিহ্যগতভাবে সব ধর্মের প্রতি সহনশীল ইতালিতে রাজধানী রোমের রাস্তায় ইহুদিবিরোধী সেøাগান প্রকাশ পাচ্ছে। অনেক ইহুদি মালিকানার দোকানের কাচে হিটলারের স্বস্তিকা চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছে এবং ‘ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন দাও’, ‘ইহুদি, তোমাদের অন্তিম সময় সন্নিকট’ ইত্যাদি লিখিত প্রচারপত্র সেঁটে দেয়া হয়েছে। ইতালির পুলিশ সন্দেহ করছে যে, ইতালির দণিপন্থী রাজনীতির চরমপন্থীরা সম্ভবত ফিলিস্তিন সমর্থকদের সহযোগিতায় এসব কর্মকাণ্ড করছে। ইতালির প্রধান ইহুদি ধর্মযাজক রিকার্ডো ডি সেগনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ‘নাটকীয়’ সংঘর্ষের সাথে এখানে ইহুদিবিরোধী ঘটনাগুলো অধিক হারে সংঘটিত হওয়ার মধ্যে একটি ‘পৌনঃপুনিক’ সম্পর্ক রয়েছে।
জার্মানিতে বসবাসকারী লাধিক ইহুদির মনে ইহুদিবিদ্বেষ বৃদ্ধি এবং ইহুদিদের প্রতি সহিংস ঘটনাবলি অতীতের হিটলারের আমলের দুঃসহ স্মৃতিকে পুনঃজাগরিত করছে। ইহুদিদের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘দ্য সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিশু ইন জার্মানি’ সন্ত্রস্ত ইহুদিদের কাছ থেকে অব্যাহত ফোন পাচ্ছে যেখানে ফোনকারী ইহুদি জিজ্ঞাসা করছে তাদের কি এখন জার্মানি থেকে চলে যাওয়াই মঙ্গল হবে? বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ায় ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও মন্তব্য দারুণভাবে বেড়ে গেছে। টুইটারে ‘হিটলার সঠিক কাজই করেছিল’ এই মন্তব্যটি অজস্র ধারায় প্রচারিত হচ্ছে।
বার্লিনের একটি বিদ্যালয়ের অধ্যা কেরোলা মেলচার্ট-আর্লট বলেন, বহু দশক ধরে জার্মানিতে বাস করার পর এই প্রথম তার মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সব সময় অনুভব করেছি যে, এখানে ইহুদিবিদ্বেষ সুপ্তভাবে বিরাজ করছে; কিন্তু কয়েক সপ্তাহ থেকে আমরা শুধু জার্মানিতে নয়, ইউরোপের অনেক দেশে দেখছি যে, রাস্তায় প্রত্যভাবে ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করা হচ্ছে অব্যাহতভাবে! প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন