|
এ এম এম বাহাউদ্দীন
|
|
এ কেমন আচরণ ?
23 Aug, 2014
আবারও কলম ধরতে হলো। একজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট লেখার অপরাধে (!) আমার মা-বোন-স্ত্রীর মান, ইজ্জত, আব্রু খোয়াতে হবে এটা কেমন কথা? শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের এই দেশে পর্দানশীল নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব সমাজের কর্তব্য। গভীর রাতে ডিবি পুলিশ আমার দুই বাসায় গিয়ে যা করেছে তা দুর্ভাগ্যজনক।
গত চার দিন থেকে ডিবি পুলিশ প্রতিদিন ইনকিলাব অফিসে যাচ্ছে এবং কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। নিত্যদিন পুলিশের উপস্থিতি এবং জেরায় সাংবাদিকরা ভীত সন্ত্রস্ত থাকেন। ইনকিলাব অফিসের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ডিবি পুলিশ আমাদের বনানীর বাসায় যায়। সেখানে আমার অসুস্থ বৃদ্ধা মা আর বোন থাকেন। দীর্ঘদিন থেকে ইনকিলাবে কর্মরত এক বৃদ্ধ দারোয়ান বাসা পাহারা দেন। ডিবি পুলিশ গেট খুলে দিতে বললে দারোয়ান জানান, এ বাসায় কোনো পুরুষ সদস্য থাকেন না। গেট খুলতে একটু দেরি হওয়ায় বৃদ্ধ দারোয়ানকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করা হয়। গালি দিয়ে জানতে চাওয়া হয় রাজাকারের বাচ্চার বাসায় চাকরি করো কেন? পুলিশ দেখে প্রেসারের রোগী আমার মায়ের প্রেসার বেড়ে যায়। ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘এই সরকারের আমলে রাজাকারের বাচ্চাদের শেষ করতে হবে।’
রাত দেড়টার দিকে পুলিশ আমার উত্তরার বাসায় যায়। বাসায় আমার স্ত্রী ছাড়া কেউ ছিল না। যথারীতি পুলিশ দেখে দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে। আমার স্ত্রী মাইগ্রেনের (প্রচ- মাথা ব্যথা) রোগী। তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সকালে আসতে পারতেন। আমি অসুস্থ। এ সময় ডিবি পুলিশ আমার স্ত্রীর কাছে কিছু উল্টাপাল্টা তথ্য চায়। অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। পর্দানশীল মহিলা ডিবি পুলিশের সঙ্গে মহিলা পুলিশ না দেখে ভয় পেয়ে যান। ‘আমি অসুস্থ আপনারা সকালে আসেন’ বললে তারা (ডিবি) আমার স্ত্রীর কাছে লিখিত চায় পুলিশ গভীর রাতে বাসা তছনছ করেনি। আমার স্ত্রী তা করতে না চাইলে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা হয়। পরে দারোয়ানদের গালিগালাজ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ‘বাসা তছনছ করা হয়নি’ এমন লেখার কাগজে সই করিয়ে নেয়া হয়। রাত দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে ডিবি পুলিশের তা-ব। রাতে আমার দুটি বাসায় পুলিশের তল্লাসির সময় ডিবি পুলিশের কিছু সদস্য উচ্ছৃঙ্খল এবং অপমানজনক আচরণ করেছেন। গভীর রাতে বাসা বাড়িতে পুলিশ গেছে অথচ কোনো মহিলা পুলিশ সঙ্গে নেয়নি।
শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের এই দেশ। সাম্যমৈত্রীর এ দেশে সব ধর্মের মানুষ ইজ্জত-আব্রু নিয়ে নিজেদের মতো করে বসবাস করছেন যুগের পর যুগ ধরে। এদেশের নারীরা পর্দানশীল। কারো বাসায় গভীর রাতে পুলিশ অভিযান এবং বাসা তল্লাসি করতে চাইলে অবশ্যই মহিলা পুলিশ সঙ্গে থাকার কথা। কারণ বাসা বাড়িতে মহিলারা থাকেন সব সময়। এখানে একটি কথা বলা দরকার। তাহলো গভীর রাতে বাসায় তল্লাসির সময় ডিবি পুলিশের একাধিক সদস্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং বাজে ব্যবহার করেছে। তবে থানা পুলিশ যারা ছিলেন তারা পেশাদারী আচরণ করেছেন। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি কী চোর না ডাকাত? দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে আমি একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের ওপর মহল, ক্ষমতাসীন দলসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, দেশের আলেম সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীরা প্রায় সবাই আমাকে চেনেন, জানেন। আমি কী কোনো অপরাধ করেছি? একজন পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করা কী অপরাধ? প্রতিদিন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে। টিভিতে রিপোর্ট হচ্ছে। এ জন্য কী কাউকে হেনস্তা হতে হয়েছে? মামলা করার আগেই সাংবাদিককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? আমার বাসায় এভাবে গিয়ে আমার বৃদ্ধা মা, স্ত্রীর সঙ্গে ডিবি পুলিশ এমন আচরণ করবে কেন? আমি সব সময় দেশের জন্য কাজ করেছি, করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো। বর্তমান সরকারের ভাল কাজের উৎসাহ এবং গঠনমূলক সমালোচনা করছি। সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের ভাল কাজের বিরূপ সমালোচনা করেছি এমন ঘটনা নেই। বরং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের প্রশংসা করেছি। মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা হলে এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে উন্নয়নমূলক এবং ভাল ভাল প্রকল্প গ্রহণ করে মানুষের মন জয় করার উপদেশ দিয়েছি, দিচ্ছি। তারাও আমার কথা ভালভাবে নিচ্ছেন; যোগাযোগ করছেন। সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে আমার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ব্যক্তিগত ভাবে আমি শিক্ষা উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য কাজ করছি।
আমার কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা খুশি এবং তারা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, দিচ্ছেন। চারদিন থেকে পুলিশ ইনকিলাবে গিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে এবং আমার বাসায় গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মা, স্ত্রীর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে শুনে তারাও দুঃখ পেয়েছেন; হতাশা প্রকাশ করেছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট ছাপার পর ডিবি পুলিশ প্রতিদিন ইনকিলাব অফিসে গিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে; আমার বাসায় গিয়ে পর্দানশীল মহিলাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, এটা দুঃখজনক। আমার সম্পর্কে সরকারের দায়িত্বশীল অনেকেই জানেন। আমার বাসায় গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালাবে এটা কেমন কথা? জেএমবির নেতা শায়খ আবদুর রহমানের গ্রেফতারের দৃশ্য টেলিভিশনের বদৌলতে দেশের মানুষ সরাসরি দেখেছে। সে সময়ও র্যাবের অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মহিলা সদস্যদের রাখা হয়েছিল। অথচ আমার বাসায় অভিযানের সময় কোনো মহিলা পুলিশ সঙ্গে নেয়া হয়নি। একজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর ছাপানোর কারণে কী আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত-আব্রু হারাতে হবে? আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ অধিকাংশ নারী পর্দানশীল। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাফেরা করেন। পর্দানশীল নারীর মান, ইজ্জত, সম্ভ্রম রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। কিন্তু একজন প্রলয় বাবুর ক্ষমতার কাছে সবকিছু কী খোয়া যাবে? কয়েকদিন থেকে পুলিশ কর্মকর্তা প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দারের মামলায় ডিবি পুলিশ ইনকিলাবের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে যা করছে এটা কী ভাল হচ্ছে?
আমাদের দেশে অনেক নারীনেত্রী নারীর স্বাধীনতা নারীর মর্যাদা সম্মান রক্ষায় আন্দোলন করেন। তাদের কাছেও আমার অনুরোধ আপনাদের নারী স্বাধীনতা আর নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর সম্মান রক্ষায় কাজ করা উচিত। দেশের যেসব নারী পর্দানশীল, পরহেজগার তারা যাতে ইজ্জত-আব্রু নিয়ে চলাফেরা করতে পারে তা নিয়ে আপনাদের সোচ্চার হওয়া উচিত।
ইংরেজ ও হিন্দু জমিদারদের ষড়যন্ত্রে মোগল সা¤্রাজ্যের পতন হয়েছে। মোগলদের পতনের পর তাদের কর্মচারী, হিন্দু জমিদারেরা হয়ে উঠেছিল বেপরোয়া। তারা মোগলদের রাজকুমারদের তাদের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করে। আর রাজকুমারীদের নিজেদের মনোরঞ্জন এবং তাদের অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য জলসা ঘরের বাইজী হতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন