আলোচিত তিন সংসদ সদস্য কি নিরপরাধ
05 Jul, 2014
সংসদের মূল কাজ আইন প্রণয়ন হলেও আমাদের দেশের সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। তারা এক দিকে যেমন স্থানীয় স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, অপর দিকে স্থানীয় যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে তাদের অগ্রণী ভূমিকা থাকে। একজন সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেই সিদ্ধান্তটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সরকারি দলের সংসদ সদস্য দিয়ে থাকেন। থানার সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ ও ছাত্রভর্তির ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য। এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি বিভিন্ন পদ পূরণে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ব্যাপক ভূমিকা থাকে। স্থানীয় যেকোনো উন্নয়ন কাজের দরপত্রে কারা অংশগ্রহণ করবেন এবং কে ঠিকাদারি কাজ পাবেন, এ সিদ্ধান্ত সংসদ সদস্য নিয়ে থাকেন। তা ছাড়া কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য দালালি বাবদ কাজের সামগ্রিক মূল্যের কত শতাংশ সংসদ সদস্য পাবেন এবং কত শতাংশ তদারকিকাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তারা পাবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার অপর কারো ওপর নয়, অলিখিতভাবে সংসদ সদস্যদের ওপরই ‘ন্যস্ত’। তবে সংসদ সদস্যদের মধ্যে এমন অনেক আছেন যারা নিজেদের এ ধরনের পক্সিকলতায় নিমজ্জিত করেননি।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দেড় মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর থানা, ফেনী জেলা সদর থানা ও ঢাকা মহানগরী পল্লবী থানা এলাকায় সংঘটিত তিনটি নৃশংস নরহত্যার ঘটনা দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে গভীর ক্ষোভ, দুঃখ ও মর্মবেদনার সঞ্চার করেছে। দেশবাসী চায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীরা যেন চিহ্নিত হয় এবং দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে নৃশংসতার সাথে লিপ্তদের যেন আইনের আলোকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়। কিন্তু দেশবাসীর সে চাওয়া আমাদের দেশের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আদৌ পূরণ হবে কি না, সে বিষয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি সংঘটিত হয় ২৭ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে। সে দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে ঢাকা প্রত্যাবর্তনকালে র্যাব-১১-এর সদস্যরা পথিমধ্যে তার গাড়ি থামিয়ে জোরপূর্বক ড্রাইভার ও তিন সঙ্গীসমেত তাকে অপর একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পেছনের গাড়িতে থাকা চন্দন সাহা নামের নারায়ণগঞ্জ বারের অ্যাডভোকেট তার মোবাইল ক্যামেরায় ঘটনাটির ভিডিও চিত্র ধারণের কারণে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাবে, এই ভয়ে ওই অ্যাডভোকেট ও তার ড্রাইভারকেও জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। ঘটনার পরপরই স্থানীয় জনসাধারণের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সবুজ সঙ্কেতে সিটি করপোরেশেনের কাউন্সিলর নূর হোসেনের অর্থ দ্বারা বশীভূত হয়ে র্যাব-১১-এর কর্মকর্তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এর পর থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্য একেবারেই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন, এমন দাবি করতে থাকেন তিনি। র্যাব-১১-এর পক্ষ থেকেও বলা হয়, র্যাব ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানে না; তবে উদঘাটনে সচেষ্ট রয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর একে একে অপহৃত সাত জনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে উঠলে ঘটনা কিভাবে সংঘটিত হয়েছে এবং ঘটনার সাথে কারা সম্পৃক্ত এসব বিষয় স্পষ্ট হতে থাকে। র্যাব-১১-এর তিনজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা গ্রেফতারের পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দেন। তাদের এই বক্তব্য, ঘটনার পর থেকে নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর যেসব বক্তব্য প্রদান করে আসছেন, পত্রপত্রিকায় সাত হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি নূর হোসেন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মোবাইল কথোপকথনের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে এবং ঘটনা-পরবর্তী নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীদের প্রদত্ত বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ করলে ঘটনাটির সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সম্পৃক্ততা নেই- এমন ধারণা পোষণের অবকাশ সৃষ্টি হয় না। নূর হোসেন ও সংসদ সদস্যের মোবাইলে কথোপকথনের অডিও দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হওয়ার পর তা তাৎক্ষণিক অনলাইন পত্রিকাগুলোতেও প্রকাশিত হয়। পরদিন দেশের প্রায় সবক’টি শীর্ষ সংবাদপত্রে কথোপকথনের বক্তব্য ছাপা হয়। অডিওটি প্রচারিত হওয়ার পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য তার নিজ গৃহে আহূত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, কথোপকথন তার ও প্রধান আসামি নূর হোসেনের এটি সঠিক। কিন্তু তিনি তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য বলেছিলেন। তিনি দাবি করেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা কথোপকথনের আংশিক প্রচার করেছে এবং সম্পূর্ণটি প্রকাশ করা হলে দেশবাসীর সামনে তার স্বচ্ছ ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হতো। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বদৌলতে দেশবাসী কথোপকথনের যতটুকু শুনতে পেরেছেন তাতে স্থানীয় সংসদসদস্য যে নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে কারো মধ্যে দ্বিধা থাকার কথা নয়। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় সংসদ সদস্যের সবুজ সঙ্কেত ছাড়াই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে, তবে কি তিনি ঘটনার মূল আসামিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সহায়তার অপরাধ থেকে অবমুক্ত? ঘটনার পর মূল আসামি নূর হোসেনসহ স্থানীয় সংসদ সদস্যের বেশ কিছু ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব ছবিতে সংসদ সদস্য ও নূর হোসেনের পাশাপাশি অবস্থান থেকে যে কারো ধারণা করতে অসুবিধা হবে না যে, তারা একজন অপরজনের খুবই কাছের মানুষ। এমন একজন কাছের মানুষ যাকে এলাকাবাসী আগে থেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডান হাত হিসেবে অভিহিত করে আসছেন, তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকার বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনাগুলোর অন্যতম ঘটনা সংসদ সদস্যের অজান্তে ঘটাবেন, এটি কি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?
নারায়ণগঞ্জের প্রেস কাবে প্রেরিত নূর হোসেন কর্তৃক লিখিত যে পত্রটির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা অবলোকনে ধারণা করা যায়, পত্রটিতে উল্লিখিত ‘বড় ভাই’ নামের ব্যক্তিটি অপর কেউ নন স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বয়ং। এরই মাঝে নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ায় তাকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য যে সহায়তা দিয়েছেলেন, সে অভিযোগটির সত্যতা প্রতিষ্ঠা পায়।
বিগত ২০ মে ফেনী শহরের অপর সংঘটিত ঘটনায় ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক নির্মমভাবে নিহত হন। এ ঘটনাও প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত হয়। ঘটনার দিন একরাম নিজ গাড়িযোগে ফুলগাজী যাওয়ার সময় পথিমধ্যে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তারা প্রথমে ময়লার গাড়ি দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে গাড়ির গতিরোধ করে এবং এরপর খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে। গুলি করার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য উপর্যুপরি তার বুকে ছুরিকাঘাত করে। অতঃপর আক্রান্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিঃশেষ করার জন্য তার গাড়ির চার দিকে পেট্রল ঢেলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর একরাম হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত মামলায় উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত বিএনপি প্রার্থী মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হলেও ঘটনার সময়ে ধারণকৃত মোবাইল ফোনের যেসব ভিডিও ফুটেজ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় অস্ত্রহাতে প্রকাশ্যে যারা ঘটনায় অংশ নিয়েছে, এরা সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর একান্ত ঘনিষ্ঠ। এ ঘটনা ঘটার সময়ে ঘটনাস্থলের অদূরে পুলিশ অপেক্ষমাণ ছিল। নিহত একরামের গাড়িকে অপর যে গাড়িটি অনুসরণ করছিল সেটির চালক ঘটনার আকস্মিকতায় বিচলিত হয়ে দ্রুত অপেক্ষমাণ পুলিশের কাছে গিয়ে তাদের হাতেপায়ে ধরে দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করতে অনুনয়-বিনয় করেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পুলিশ পূর্বাপর নিষ্ক্রিয় থেকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনা পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘটিত হওয়ায় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আগে থেকে অবহিত ছিলেন না, এমন ধারণা পোষণের সুযোগ বোধ করি খুবই সীমিত। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগ যে সংসদ সদস্যের প্রতি তিনি ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন। নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা। একই দলের একজন নেতা দল ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে নিজ দলের লোক দ্বারা কী নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন এবং পুলিশ কেন হত্যাকারীদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে না গিয়ে বরং নির্বিঘেœ তাদের চলে যেতে দিয়ে তারা নিজেরা প্রস্থান করেছেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনাপূর্বক সন্দেহের তীর অপর কেউ নয়, সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর প্রতি নিবদ্ধ হয়। এ হত্যাকাণ্ড বিষয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও ধৃত আসামিদের প্রদত্ত জবানবন্দী থেকে যেসব বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই সংসদ সদস্য ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নন, এমন ধারণা পোষণের অবকাশ সৃষ্টি হয় না।
গত ১৪ জুন প্রত্যুষে রাজধানীতে পল্লবীর কালশী বিহারি শরণার্থী শিবিরে কিছু উগ্র সন্ত্রাসী যেভাবে একটি ঘরে বাইরে তালাবদ্ধ করে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে নারী-পুরুষ শিশুসমেত ৯ জন বিহারিকে পুড়িয়ে মেরেছে, তা ইতিহাসে বীভৎস নারকীয় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ ঘটনাটিতেও দেখা যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার সাথে কালশী বিহারি ক্যাম্পের নেতাদের বিরোধ ছিল লাগোয়া রাজু বস্তিতে ওই ক্যাম্প থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া নিয়ে এবং ক্যাম্প যেখানে রয়েছে সে ভূমির মূল্য অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পাওয়ায় তা গ্রাস করার জন্য এর ওপর সংসদ সদস্যের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন ওই সময়ে অদূরে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় পুলিশ অবস্থান করছিল। প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ জনমানুষের মধ্যে এমন অনেক নিরপেক্ষ ব্যক্তি যারা ঘটনাটি অবলোকন করেছেন, তাদের ভাষ্যমতে কালশী বিহারি শিবির আক্রমণে যারা নেতৃত্বে ছিল, তারা সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্যের একান্ত কাছের মানুষ এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সদস্য। এ ঘটনাতে ক্যাম্পে বসবাসরত যেসব বিহারি প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের অনেকেরই জন্ম ১৯৭১-পরবর্তী এবং বিহারি ক্যাম্পে বসবাস করলেও আদালতের নির্দেশে তারা ভোটাধিকার প্রাপ্ত। ক্যাম্প নিবাসী নেতাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, বিগত দু’টি নির্বাচনে তারা সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাকেই ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই সমর্থন তাদেরকে সংসদ সদস্যের বাহিনীর নির্মমতা থেকে রেহাই দেয়নি। এ ঘটনা যারা অবলোকন ও বিশ্লেষণ করেছেন তাদের অভিমত, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া পুলিশের উপস্থিতিতে একমাত্র তার দলের অধীনস্থ লোক দ্বারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো কিছুতেই সম্ভব নয়।
এসব ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। তাই তাদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব সরকারের। এ দায়িত্ব পালনে যাদের ভূমিকা অগ্রণী হিসেবে বিবেচ্য তারা হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব মামলা হয়েছে, সে মামলাগুলোর তদন্তকার্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করছে। রাজনৈতিক প্রভাবে একটি মামলার বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত কিভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জজ মিয়া নাটকের অবতারণা। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় দেশের বর্তমান শীর্ষ নির্বাহীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত হতে চললেও তদন্ত ও বিচার দীর্ঘসূত্রতার আবর্তে আবদ্ধ। এ হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দলের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। সঠিক তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে এতে যারা সম্পৃক্ত তারা যেন সাজা পায় এ বিষয়ে দেশবাসী আশ্বস্ত হতে চান।
আলোচিত তিনটি ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের তিনজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য সম্পৃক্ত মর্মে প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এ তিনটি ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর চূড়ান্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা সম্পৃক্ত নন, এমন ধারণা পোষণের অবকাশ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। আর যদি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখে বস্তুনিষ্ঠতাকে পাশ কাটিয়ে একপেশেভাবে তদন্ত করা হয় তাতে জনআকাক্সক্সা যে পরাভূত হবে, অন্তত এ কথাটি ভেবে মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচার যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সেটিই এখন দেশবাসীর কাম্য।
সাবেক জজ, সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন