স্বাধীনতার পর অফিস-আদালতে তখন নথিতে বাংলায় নোট লেখা চালু হয়েছে। যাদের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবোধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির জন্য শ্রদ্ধা-ভালবাসা প্রবল ছিল, তারা পারুক না পারুক সব কিছু বাংলায় লেখার চেষ্টা করত। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট তাগিদ ছিল। তখন বাংলা টাইপরাইটার (শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর 'মুনীর অপটিমা'কে ভিত্তি করে তৎকালীন পূর্ব জার্মানির কারিগরি সহায়তায় যার যাত্রা শুরু হয়) কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে শুরু করেছে। সব দপ্তরে বাংলা টাইপরাইটার সরবরাহ করা যায়নি। চিঠিপত্র বাংলায় টাইপ করতে তাই অসুবিধা হতো বটে, তবে নথিতে বাংলায় নোট লিখতে তো আর বাধা ছিল না। ফলে নব্য স্বাধীন দেশের অনেক স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত উৎসাহী কর্মকর্তা-কর্মচারী কোমর বেঁধে লেগে গেলেন বাংলায় নথিপত্র লেখালেখিতে। সমস্যা দেখা দিল অপেক্ষাকৃত প্রবীণ এবং কিছু কিছু ইংরেজিপ্রেমিক কর্মকর্তাকে নিয়ে। তাঁদের অনেকের মধ্যে যে শতাব্দীপ্রাচীন অনভ্যস্ততা, জড়তা ও হীনম্মন্যতা শেকড় গেড়ে বসেছিল, তাকে ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে কিছুটা সময় লেগেছিল। বছর কয়েক পরে অবশ্য নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অফিস-আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।
নবীনদের উৎসাহ ও প্রবীণদের সমস্যার দুটো মজার ঘটনা উল্লেখ করছি। স্বাধীনতার পর পরই আমি তখন জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও বিমান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব। আমাদের মন্ত্রী ছিলেন জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী। তাঁর মত সৎ, পরিশ্রমী ও ন্যায়পরায়ণ 'বস্' আমার চাকরিজীবনে দ্বিতীয় কাউকে পেয়েছি বলে মনে পড়ে না। তাঁর দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। সততা, সাধুতা ও দেশপ্রেমের ব্যাপারে তিনি কোনো দিন আপস করেছেন- এটা তাঁর অতি বড় শত্রুও বলতে পারবে না।
তা জেনারেল সাহেব সারা জীবন ইংরেজিতে লেখাপড়া করায় এবং ফৌজি জীবনেও ইংরেজি বোলচাল, কায়দা-কানুনে অভ্যস্ত হওয়ায় বাংলা খুব একটা ভাল লিখতে পারতেন না। আবার ইংরেজির কথ্য ও লিখিত উভয় মাধ্যমে তিনি ছিলেন দারুণ তুখোড়। তিনি যখন বিশুদ্ধ ইংরেজিতে, চমৎকার উচ্চারণে অনর্গল কথা বলতেন বা বক্তৃতা করতেন, তখন মনে হতো ওটাই তাঁর মাতৃভাষা। এ ছাড়া তিনি দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন সিলেটি ভাষায় কথা বলতে। তবে তা শুধু নিজের এলাকাবাসী ও আপনজনদের সঙ্গে।
জেনারেল সাহেব নথিতে বাংলায় নোট লিখতে মোটেই কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তবে ভাষার ব্যবহার, বিশেষ করে বানানের ব্যাপারে ও শব্দচয়নে তিনি ছিলেন পুরোপুুরি স্বেচ্ছাচারী। একদিন তাঁর কাছ থেকে বাংলায় নোট লেখা একটি নথি ফেরত এল। তখন তিনি আমাদের মন্ত্রণালয়ে নতুন এসেছেন। তাঁর ইংরেজি বা বাংলা লেখালেখির সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। ওই নথিতে আমার বাংলায় লেখা একটি মোটামুটি দীর্ঘ নোট ছিল। (তখন নোট শব্দটির বাংলা করা হয়েছিল 'টোকা'। এই শব্দটি আমার কাছে কেমন যেন দুই নম্বরি মনে হতো। আমি প্রথম জীবনে কলেজে শিক্ষকতা করেছি। সেখানে 'টোকা' বলতে আমরা ছাত্ররা পরীক্ষার সময় যে ছোট্ট কাগজের টুকরো দেখে নকল করত তা-ই বুঝতাম। ওটার আরেকটা প্রচলিত নাম ছিল 'চোতা'। টোকা শব্দটি বাংলা ভাষায় অনেক ভাল অর্থেও অবশ্য ব্যবহৃত হয়, খালি পরীক্ষাগৃহে 'টুকলিফাই' অর্থেই নয়। যা হোক, স্কুল-কলেজে ওই বিশেষ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয় বলে আমি ইংরেজি শব্দ চেয়ার, টেবিলের মত নোট শব্দটি ব্যবহার করতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।) দারুণ পরিশ্রমী ও অতীব খুঁতখুঁতে 'পারফেকশনিস্ট' মাননীয় মন্ত্রী তাঁর অভ্যাসমত সব সময় চিঠিপত্র, নোট, সরকারি আদেশ-নির্দেশ ইত্যাদিসহ সব নথি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে তাঁর সিদ্ধান্ত দিতেন কিংবা মন্তব্য লিখতেন। সেদিন দেখলাম, তিনি আমার নোটটির পাশে মার্জিনের খালি জায়গায় কোথাও কোথাও ছোট মন্তব্যাদি লিখেছেন এবং পরে বাংলায় 'নোট' লিখে তাঁর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নোটের শুরুতে তিনি লিখেছেন : 'উপরে হাশিয়ায় আমার মন্তব্য ও প্রশ্নগুলি দেখুন'। অন্য কেউ হলে হয়ত ধন্দে পড়ে যেত, হাশিয়া আবার কী? কিন্তু সিলেটের গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও প্রান্ত বা কিনারা অর্থে ব্যবহৃত এই শব্দটি একজন সিলেটি হিসেবে আমার জানা ছিল। তাই মাননীয় মন্ত্রীর এই অভিনব প্রয়োগটি দেখে বেশ আমোদ বোধ করলাম। সহকর্মীদের বললাম, কবি-সাহিত্যিক না হয়েও মাননীয় মন্ত্রী বাংলা ভাষায় এই নতুন শব্দ সংযোজনের জন্য নিশ্চয়ই কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন! সে যা-ই হোক, অফিসের নথিপত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহারে জেনারেল (অব.) ওসমানীর আন্তরিকতা অবশ্যই প্রশংসনীয় ছিল।
তেমনি ওই সময়ে আমার এক তরুণ অফিস সহকারী- যে বেচারা যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক প্রতিকূলতার জন্য বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি- বাংলা ভাষায় যেসব চমৎকার নোট লিখতেন, তা আমার আজো মনে আছে। তবে তাঁর প্রবণতা ছিল কঠিন কঠিন শব্দ প্রয়োগ করে লেখার ভেতর একটা বঙ্কিমি ঢং সৃষ্টি করার। একবার এই ভদ্রলোক, যাঁর নাম ছিল কা মো গোলাম সারওয়ার, নথিতে একটা বাক্য লিখেছিলেন, যা মনে পড়লে এখনো আমার হাসি পায়। তিনি লিখেছিলেন : 'ভূতপূর্ব পৃষ্ঠায় সচিব মহোদয়ের নির্দেশ দেখা যেতে পারে'। ... এখন অফিস-আদালতে নথিপত্রে লেখালেখির চল উঠে গিয়ে ধীরে ধীরে সব কিছু 'ডিজিটালাইজড' হয়ে যাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাষাসংক্রান্ত বিড়ম্বনা থেকে নিশ্চয়ই নিষ্কৃতি পেয়েছেন।
পাসের হার ও শিক্ষার মান কোয়ান্টিটি বনাম কোয়ালিটি
[২]
তারপর পার হয়ে গেছে অনেক কাল। পদ্মা-যমুনা-তিস্তা যেমন শুকাতে শুকাতে কাঠ হয়ে পড়ছে দিনকে দিন, তেমনি বাংলাদেশ সচিবালয় ও অন্য সব আলয়ের হর্ম্যরাজি বায়ুমণ্ডলের বর্ম ভেদ করে আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে সেই কবে। যে আমলে একজন কর্মচারী পূর্ব এবং ভূতপূর্ব শব্দ দুটির অর্থ না বুঝে অফিসের নথিতে নোট লিখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলতেন, সে আমলে ম্যাট্রিক-ইন্টারমিডিয়েটে পাসের হার ছিল কুল্লে ৩০/৪০ পারসেন্ট। আর 'স্টার মার্কস' (মোট নম্বরের ৭৫%) পেত হাতেগোনা কয়েকজন। যারা পরীক্ষায় 'স্ট্যান্ড' করত তাদের, অর্থাৎ মেধা তালিকার প্রথম থেকে দশম স্থান অধিকারীদের, দেশের আট-দশ কোটি লোক চোখ গোল করে দেখত। যেন বেহেশত থেকে নাযিল হওয়া কোনো ফেরেশতাকে দেখছে। আর আজ? পাাসের হার আজ ৯০-এর কোঠায়, জিপিএ-৫ নামক স্বর্ণতারকা- যেটাকে মর্যাদার দিক দিয়ে সেই আমলের স্টার মার্কসের সমতুল্য বলা যায়- পাচ্ছে প্রায় দেড় লাখ ছাত্রছাত্রী। এতে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা কি হঠাৎই সুশীল বালক আর সুশীলা বালিকা হয়ে গেছে? তারা কি খেলাধুলা, আড্ডা-ইয়ার্কি, কম্পিউটার গেম ইত্যাদি বাদ দিয়ে আদাজল খেয়ে কেবল লেখাপড়ায় ডুবে থাকছে? তাদের যে মা-বাবা ক'বছর আগেও এদেরই বড় ভাইবোনকে উঠতে-বসতে 'পড়তে বসো পড়তে বসো' বলতে বলতে নাকে-মুখে ফেনা তুলতেন, তাঁরা কি এখন এদেরকে 'খেলতে যাও, খেলতে যাও' বলে বলে কান ঝালাপালা করে ফেলছেন সবার? এ রকম আলাউদ্দিনের যাদুই চেরাগ মার্কা রেজাল্ট দেখে যে কোনো কারোই জানতে ইচ্ছা করবে, 'কেইসটা কী'?
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার গতি-প্রকৃতি কিংবা তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠদানের ক্ষেত্রে রাতারাতি হঠাৎ এমন কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যায়নি যে এক লাফে দশ বছর আগের ৬০ বা ৬৫ পার্সেন্ট পাসের হার বেড়ে গিয়ে ৯০-এর ঘরে পৌঁছে যাবে। ছেলেমেয়েরা আগে লেখাপড়ার ব্যাপারে যতটুকু মনোযোগী বা অমনোযোগী ছিল, এখনো তা-ই আছে। তাদের টিচারদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ব পালনেও কোনো পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বলে মনে হয় না। তা হলে পরিবর্তনটা হয়েছে কোথায়? পরীক্ষার্থীদের মেধা ও জ্ঞানের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে? হ্যাঁ, সেখানে সনাতন পদ্ধতির নম্বরপ্রাপ্তিভিত্তিক মূল্যায়নের পরিবর্তে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। কিন্তু মূল্যায়ন বা পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণেই কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন শিক্ষার্থীর মেধার উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে? সাবেক পদ্ধতির আমলে শিক্ষার্থীটির মেধার লেভেল বা জ্ঞানের পরিধি যেখানে ছিল, পরিবর্তিত পদ্ধতিতে কি তা হুট করে বর্ধিত হয়ে গেছে? এটা কি কোনো উপায়ে পরীক্ষিত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে, না কি এটা একটা ধারণা ('হাইপোথিসিস' অথবা 'এজামশন') মাত্র? যদি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এটা পরীক্ষিত সত্য না হয়ে একটি ধারণা মাত্র হয়, আর এটাকে নির্ভুল প্রমাণের জন্য 'কৃত্রিম ব্যবস্থাদি' গ্রহণ করে পরীক্ষা পাস এবং জিপিএ-৫ ইত্যাদির হার শোঁ শোঁ করে ঊর্ধ্বমুখী করা হয়, তবে তা হবে নিছক আত্মপ্রবঞ্চনা। আমরা নিশ্চয়ই চাইব একটি মেধাবী, জ্ঞানসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম; অসংখ্য জিপিএ-৫ লেবেল আঁটা অন্তঃসারশূন্য 'মাথায় খাটো, বহরে বড় বাঙালি সন্তান' নয়।
কথাটা উঠল এই কারণে যে এই পাসের হারের 'বাম্পার ফলন' নিয়ে ইদানীং দুষ্ট লোকে নানা কথা বলে। শোনা যায়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক ফলন হয় না বলে সংকর জাতীয় পদ্ধতি এবং নানাবিধ ফুসমন্তর ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব কথা বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করতে চাই না। আমাদের শেষ আশা-ভরসা যে নবীন প্রজন্ম, তাদের কচি মাথাটি কেউ লবণ মেখে চিবিয়ে খাবে তার ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য, আর তা দেখে 'গৌড়জন ... আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি' তা নিশ্চয়ই হতে পারে না। জমি খান, নদী খান, ব্যাংক খান, শিল্প-কল-কারখানা যা খুশি খান; কিন্তু দোহাই কর্তাবাবু, ভবিষ্য প্রজন্মের কচি মাথাটির দিকে হাত বাড়াবেন না। আমাদের পক্ব মস্তিষ্কে বহু আগেই পচন ধরেছে, এখন তা থেকে এমন দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে যে বাংলার মানুষ বাবা গো মাগো বলে পালানোর পথ খুঁজছে। এখন একমাত্র ভরসা আগামী প্রজন্ম, তাদের নিষ্কলুষ মেধা ও অপাপবিদ্ধ মন।
অনেক পরীক্ষক জনান্তিকে কবুল করেছেন, পরীক্ষার খাতা খুব 'লিবারেলি' দেখতে হবে বলে নাকি তাদের অলিখিত নির্দেশ ও এক ধরনের প্রচ্ছন্ন ভয় দেখানো হয়েছে। ফলে বিদ্যার জগতে নিতান্ত কানা-খোঁড়া ছাড়া বাকি সবাইকে ক্ষেমা-ঘেন্না করে পরীক্ষা-বৈতরণী পার করে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার এই কীটনাশক এবং কার্বাইড মেশানো 'হাইব্রিড ফল' পেয়ে এবং খেয়ে গোটা জাতি অচিরেই যে কী কী প্রাণনাশক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে, রেজাল্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশারদরা কি তা ভেবে দেখেছেন? কোন আমলে দেশে পাসের হার আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছেছিল, সেই বাহাদুরি অর্জনের পাশাপাশি কোন আমলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও মেধা তলানিতে ঠেকেছিল, সেই কলঙ্কতিলকের শঙ্কাও কিন্তু থেকে যায়। তাই বলছি, শুধু কোয়ান্টিটির মায়া মরীচিকার পেছনে না ছুটে কোয়ালিটি ফলন নিশ্চিত করুন, দেশ ও জাতির সোনালি ভবিষ্যতের জন্য এটা দরকার, এর কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের সময়ে পরীক্ষকদের খাতা দেখার ব্যাপারে একটা গল্প খুব চাউর ছিল। হালের হাতেম তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বেচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক- হাত খুলে নম্বর দেয়ার নমুনা দেখে গল্পটি চট করে বলে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। এক স্কুলের মৌলবী হুজুর এক ছাত্রকে বার্ষিক পরীক্ষায় ১০০-তে ১১০ নম্বর দিয়েছেন। এর ফলে সেই ছেলে আরো কয়েকজনকে ডিঙিয়ে ফার্স্ট হয়ে গেছে। ব্যাপারটি জানাজানি হওয়ার পর হেডমাস্টার ডাকালেন সেই হুজুরকে : কী ব্যাপার? ১০০-তে ১১০ দিলেন কিভাবে? হুজুর জবাব দিলেন : স্যার, খাতাটা যদি আপনি একবার দেখতেন। ওবায়েদুল্লাহ যা লিখেছে। অমন খাতা আমি জীবনেও পাইনি। ১০০-তে ১০০ সে তো নিজেই পায়। তা হলে আমি আর কী দিলাম। আমি খুশি হয়ে তাই তাকে আরো ১০ নম্বর দিয়ে দিয়েছি। ... আমাদের এসএসসি, এইচএসসির সব পরীক্ষার্থী কি ওবায়েদুল্লাহর মত দারুণ প্রতিভাবান যে তাদের সবাইকে কিছু কিছু 'উপরি' দিতে হচ্ছে?
আর কারো সম্বন্ধে আমার তেমন ধারণা নেই, কিন্তু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদকে আমি অনেক আগে থেকেই জানি। তাঁর সততা, নিষ্ঠা, রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ও দেশপ্রেমের সুনাম আছে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, তিনি এমন কিছু করবেন না, যা তাঁর বিবেকে বাধে। তিনি নিশ্চয়ই শেকস্পিয়ারের হ্যামলেট নাটকে বৃদ্ধ মন্ত্রী পলোনিয়াস তাঁর উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশযাত্রী পুত্র লেয়ার্টিয়াসের উদ্দেশে যে উপদেশামৃত বর্ষণ করেছিলেন তা ভুলে যাননি। ওই 'ডু'জ অ্যান্ড ডোন্টস্'-এর মধ্যে একটি কথা ছিল রক্ষাকবচের মত : টু দাইন অউন সেলফ্ বি ট্রু। শাসককুলের হৃদয়ের গোপন কন্দরে এই দীপশিখাটি প্রজ্বলিত থাকলে অনেক বালা-মুসিবতের হাত থেকে জাতি বাঁচবে।
আরেকটি কথা। হাল-হকিকত যা দেখছি, তাতে আল্লাহ না করুক, ধ্বংসের 'হাশিয়াতে' যদি আমরা পৌঁছে যাই, তা হলে 'ভূতপূর্ব' পৃষ্ঠায় শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের বিবেক একজন প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল বা অন্য কেউ কী বলেছিলেন তা উল্টে দেখার সময় বা সুযোগও হয়ত আর পাব না।
লেখক : সাবেক সচিব, কবি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন